• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘বরই থেকে ভাইরাস সংক্রমণে’ দুই শিশুর মৃত্যু, তদন্তে আইইডিসিইআর

প্রকাশ:  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:৫১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

‘‘অজানা ভাইরাসে’’ দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে রাজশাহীতে পৌঁছেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞ দল। এদিকে, মৃত শিশুদের বাবা-মা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন।

আইইডিসিআর-এর পরামর্শে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “মৃত দুই শিশুর বাবা-মায় রবিবার জ্বর ছিল। আজ তাদের আর জ্বর নেই। এখনো কোনো ভাইরাস শনাক্ত না হওয়ায় তাদের নিজ বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলনে, “ওই দম্পতি এখন শারীরিকভাবে সুস্থ। তাই তাদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে, রাজশাহীতে দুই দিনের ব্যবধানে দুই বোনের মৃত্যুর পর সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেছে আইইডিসিআর প্রতিনিধিদল। এ দলে আছেন আইইডিসিআরের মেডিকেল অফিসার ডা. ক্য থোয়াই প্রু প্রিন্স ও ডা. মো. মাইনুল হাসান। নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

রাজশাহীতে দুই শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে ‘অজানা ভাইরাস’ আতঙ্করাজশাহীতে দুই শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে ‘অজানা ভাইরাস’ আতঙ্ক

রবিবার রাতেই রাজশাহী পৌঁছে তারা কাজ শুরু করেন। আইইডিসিআর প্রতিনিধিরা মৃত শিশুদের বাবা মনজুর রহমান ও মা পলি খাতুনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিবারটির রোগসংক্রান্ত কেস হিস্ট্রির বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন তারা। মৃত দুই শিশুর শরীর থেকে নমুনাও সংগ্রহ করেছেন তারা। এদিন দুপুরে দলটি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চারঘাটের সারদায় রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে যায়।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, “মৃত দুই শিশু ও তাদের বাবা-মায়ের অসুস্থতার বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য আইইডিসিআর এসেছে। ল্যাবের পরীক্ষায় কিছু শনাক্ত করা যায়নি বলেই প্রতিনিধিদলটি সরেজমিন তদন্তে এসেছে। পাশাপাশি নমুনার আরও পরীক্ষা চলতে থাকবে। মৃত্যুর সঠিক কারণ বের করতে তারা কাজ করছেন। ঢাকায় পাঠানো আগের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া মৃত শিশুর পাকস্থলীর খাবারের নমুনা হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা আছে। পাকস্থলী ঢাকায় পাঠিয়ে বিষক্রিয়া ছিল কি-না তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। আমরা সবাই শিশু দুটির মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। এজন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হচ্ছে।”

আইইডিসিআর মেডিকেল অফিসার ডা. ক্য থোয়াই প্রু প্রিন্স বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি। কিন্তু কোনো মন্তব্য করতে পারব না। সরেজমিনে তদন্তে যা পাব, তাই আমাদের কর্তৃপক্ষকেই জানাব।”

মনজুর রহমান চারঘাটের সারদায় থাকা রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিতের শিক্ষক। তার গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরের চুনিয়াপাড়া গ্রামে। দুই শিশুকন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছতলায় পড়ে থাকা বরই কুড়িয়ে এনে মনজুরের শিশুকন্যা দুই বছর বয়সী মুনতাহা মারিশা ও পাঁচ বছরের মুফতাউল মাশিয়াকে খেতে দেন। না ধোয়া বরই খাওয়ার পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে, সঙ্গে বমি। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। দুদিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি মাশিয়ারও জ্বর ও বমি শুরু হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর সিএমএইচ হয়ে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।

এ অবস্থায় প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় শিশু দুটির বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। মৃত্যুর আগে দুই শিশুরই শরীরে ছোপ ছোপ কালো দাগ উঠেছিল। এটি নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ না হলেও শিশু দুটি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে আশঙ্কা করছিলেন চিকিৎসকেরা। তাই হাসপাতালে মৃত শিশু এবং তার মা-বাবার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ঢাকায়।

রবিবার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, তারা কেউই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। একটি ব্যাক্টেরিয়ার পরীক্ষা করে তার রিপোর্টও নেগেটিভ আসে। তাই শিশু দুটি কী কারণে এভাবে মৃত্যু হলো তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

মৃত্যু,শিশু,রাজশাহী,ভাইরাস

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close