• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

২০ বছরেও চালু হয়নি ২০ শয্যার হাসপাতাল!

প্রকাশ:  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:১০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌরসভায় ২০ শয্যার হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও দীর্ঘ ২০ বছরে এটি চালু হয়নি। কাগজকলমে জনবল ২৩ জন হলেও কোনো ডাক্তার-নার্সই বাস্তবে নেই। তাই চিকিৎসাসেবা শুরু করা যায়নি পুরোদমে। এতে এলাকার লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে।

জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের শাসনামলে সান্তাহার পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রথবাড়ি এলাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে এই হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে শাহরিন ইসলাম তুহিনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ না করেই ঠিকাদার বিল তুলে কাজ বন্ধ করে দেন। এরপর ১৪ বছরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর না দেওয়ায় হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় মাদকসেবীর আখড়া এবং অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।

২০১৯ সালে একই মন্ত্রণালয় পুনরায় ৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারসহ অবশিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২১ সালে কাজ শেষ হয়। দুই দফায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সান্তাহারবাসীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হাসপাতালের মূল ভবন, স্টাফ কোয়ার্টারসহ নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা।

অবকাঠামো নির্মাণের পর হাসপাতালটিতে মঞ্জুরিকৃত জনবলের মধ্যে সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে ৪ জন কনসালট্যান্ট, ১ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ১ জন মেডিকেল অফিসার, ৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন হিসাবরক্ষক ও ওয়ার্ডবয়, অফিস সহায়ক, এমএলএসএসসহ বিভিন্ন পদে ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ডাক্তার-নার্স ও জনবল নিয়োগের পর স্বাস্থ্যসেবা পেতে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়।

হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কাগজকলমে ২৩ জনবল নিয়োগ দেওয়া হলেও ডাক্তার-নার্স কেউই নেই। ডাক্তার না থাকায় কোনো রোগীও নেই।

আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ফজলে রাব্বী বলেন, সান্তাহারে ১ জন ডাক্তারসহ ৯ জন কর্মরত থাকলেও কাজ না থাকায় তাদের আদমদীঘি উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালে ইনডোর চিকিৎসাসেবা চালু করতে হলে প্রয়োজনীয় ডাক্তার-নার্সসহ মঞ্জুরিকৃত জনবল, অপারেশন, এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রোগীদের বিছানাপত্র, অন্যান্য আসবাব ও অ্যাম্বুলেন্স দরকার। আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃক্ষকে লিখেছি। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালটি চালু করা হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আতোয়ার হোসেন বলেন, এই হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সসহ ৯ জন স্টাফের কথা বলে বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করা হলেও এখানে কোনো ডাক্তার আসে না। দুই-একজন রোগী এলেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যায়।

উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘সান্তাহারে কোনো ক্লিনিকে এমবিবিএস ডাক্তার রোগী দেখেন না। সরকারি হাসপাতালটিতেও নাই। ফলে এলাকার রোগীরা সরকারি এবং বেসরকারি উভয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। বিষয়টি পৌরসভার পক্ষ থেকে উপজেলা ও জেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করা হবে।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মশিউর রহমান সজল বলেন, সরকারি চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত লক্ষাধিক মানুষের জন্য হাসপাতালটির দৃশ্যমান কার্যক্রম দ্রুত চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিন বলেন, হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যসেবায় গৃহীত বিভিন্ন সুবিধা থেকে এলাকার জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী তরিকুল ইসলাম জেন্টু বলেন, এলাকায় সামান্য প্রাথমিক সেবাও পাওয়া যায় না। জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তার দেখাতে নওগাঁ সদর অথবা বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। যা স্থানীয় রোগীদের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টদায়ক। এতে সময় ও বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয়। স্থানীয়দের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতালটি জরুরি ভিত্তিতে চালু করা প্রয়োজন।

হাসপাতাল,চিকিৎসাসেবা,সান্তাহার

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close