• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর

প্রকাশ:  ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:০১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচরে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ৩টি বসতঘর ও অন্তত ১০টি দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ঘটকচর এলাকার আসাদ সরদার (৫০), সাহেব আলী (৪৫) ও সাহেব খালাসী (৪৭)। এর মধ্যে আসাদ সরদারকে গুরুতর আহত অবস্থায় মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটকচর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জয়নাল মাদবর ও জহির ঢালীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দুই পক্ষের লোকজন কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এসব ঘটনার জেরে আজ সকালে লোকজন নিয়ে ঘটকচর বাজারে ঢোকেন জয়নাল মাদবর। এরপরই দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘটকচর বাজার ও আশপাশের এলাকায় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হয়। এতে আহত হন অন্তত পাঁচজন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব সরদারের মালিকানাধীন মার্কেটের ৫টি দোকানসহ ঘটকচর বাজারের ১০টি দোকান ও ৩টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক ও বেশ কিছু দেশি অস্ত্র জব্দ করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহবার সরদারের ছেলে জনি সরদার বলেন, এলাকার আধিপত্য নিয়ে প্রায়ই তাঁদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা তাঁদের ঘরবাড়িতে হামলা করে তছনছ করে দিয়েছে। এ ঘটনার বিচার চান তাঁরা।

হামলায় সোহবার সরদারের ভাগনে সাহেব আলী গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জয়নাল বাহিনীর লোকজন মার্কেটের সামনে বোমা ফাটিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। আমি বাধা দিতে গেলে ওরা আমাকেও মারধর করে। এখানে আমরা কোনো রাজনীতি করি না। তবু আমাদেরই ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে।’

ঘটকচর বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি চা-পানের দোকান চালান জহুরা বেগম (৩৫)। তাঁর দোকানেও ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। জহুরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসঙ্গে দেড়-দুই শ লোক আইসা আমার দোকানে হামলা চালাইছে। আমার স্বামী দোকানে ছিল না। আমারে দোকান থিকা বাইর কইরা আমার দোকানে লুট চালাইছে। দোকানে যা ছিল, সব নিয়া গেছে। আমরা গরিব মানুষ। কোনো রাজনীতি করি না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে জয়নাল মাদবর ও জহির ঢালী কোনো পক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তাঁদের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে কল করলেও তাঁরা ধরেননি।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আলাউল হাসান বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জয়নাল মাদবর ও জহির ঢালীর লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ও মামলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে আবার সংঘর্ষে জড়ান। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গতকাল বুধবার রাতে সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ভদ্রখোলা এলাকার দুবাইপ্রবাসী মিজান মীরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জানায়, সম্প্রতি দুবাই থেকে ফেরেন মিজান। দেশে আসার সময় স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি আসেন। খবর পেয়ে গতকাল রাতে তাঁর বাড়িতে হামলা করে একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুর ও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। পরে ঘরে থাকা টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী সুমি বেগম আহত হয়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। সুমি বেগম বলেন, একসঙ্গে ৮-১০ জনের একটা দল ঘরে ঢুকে সবকিছু তছনছ করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। বাধা দিলে তাঁকে পিটিয়ে আহত করে। মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হামলা,মারধর,ঢাকা বিভাগ,মাদারীপুর,সংঘর্ষ,মাদারীপুর সদর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close