• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ভোটের পর হামলার শঙ্কায় বাড়িছাড়া কয়েকটি হিন্দু পরিবার

প্রকাশ:  ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:১৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় একটি গ্রামের কয়েকটি হিন্দু পরিবারের সদস্যরা চরম আতঙ্কে আছেন। তাঁদের ভাষ্য, নৌকায় ভোট দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন তাঁদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ভোটের দিন সন্ধ্যার পর অন্তত সাতটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুটি পরিবারের তিনজন সদস্য বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আজ শনিবার সকালেও তিনজন লাঠিসোঁটা নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর বাড়ি কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের পীতাম্বরবসী গ্রামে। দুপুরে ওই এলাকায় গেলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা এমন অভিযোগ করেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বলছে, নির্বাচনের পর সন্ধ্যায় একটু সমস্যা হয়েছিল। সেটা সমাধান হয়ে গেছে। এখন কোনো সমস্যা নেই।

পীতাম্বরবসী গ্রামের মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা দেবাশীষ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পান্টি ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করেন। নৌকায় ভোট দেওয়ায় নির্বাচনের পর তাঁকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ভোটের পর বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। অফিসেও যেতে পারছেন না। ছয় দিন ধরে বাড়িতে আছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বয়োজ্যেষ্ঠ জীবন রঞ্জন বিশ্বাস জানালেন, এখানে অন্তত ৭০টি হিন্দু পরিবার আছে। এর মধ্যে ৬০টি পরিবার নৌকার নির্বাচন করেছে। ভোটের দিন সন্ধ্যায় অন্তত সাতটি পরিবারের বাড়িঘরে হামলা করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন। তাঁদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার সিংহ, অধীর কুমার সিংহ, রবি দাস, বিনয় কুমার মণ্ডল, সমেন্দ্র নাথ মণ্ডল ও সূর্য কুমার মণ্ডলের পরিবারের সদস্যরা চরম আতঙ্কে আছেন। তাঁদের মধ্যে রবি দাস ও তাঁর স্ত্রী সুনীতি দাস গত সোমবার সকালে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

মাঠপাড়া এলাকায় রবি দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, টিনের ঘরে কোপানোর অসংখ্য চিহ্ন। ঘরের ভেতরের সবকিছু দেখা যাচ্ছে। বাড়ির দুটি কক্ষের দরজা দড়ি দিয়ে আটকানো। বাড়িতে কেউ নেই। পাশের বাড়ির বাসিন্দা অপর্ণা দাস বললেন, ভোটের দিন সন্ধ্যায় লোকজন এসে ভাঙচুর করে চলে যায়। তাঁরা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হননি। পরের দিন সকালে রবি ও সুনীতি বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

সুনীতির দাদা (ভাই) অধীর কুমার সিংহের বাড়িতেও একই দিন সন্ধ্যায় হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। অধীরের দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে বলে, ‘বাবা-মা বাইরে গেছে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মাকে মারধর করা হয়েছিল। বাড়িতে কোপানো হয়। নৌকায় ভোট দেওয়ায় লোকজন এসে হুমকি দিয়ে যায়। এখনো তার ভয় লাগে।’

মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা বিশাখা মণ্ডল বলেন, তাঁর ছেলে বীরেন মণ্ডল কামারের কাজ করে সংসার চালান। ভোটের দিনের ঘটনার পর বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। আর আসছেন না। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁকেও (বিশাখা) মারধর করা হয়েছে। বীরেনের স্ত্রী সুচিত্রাও বললেন, স্বামী ভয়ে বাড়িতে আসছেন না।

ওই এলাকায় আরও দুটি বাড়িতে গিয়ে টিনের বেড়ায় কোপানোর চিহ্ন দেখা গেছে। বাড়ির নারীদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। তাঁরা সরাসরি কারও নাম উল্লেখ করে কথা বলতে রাজি হননি। শুধু বলছেন, নৌকায় ভোট দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

দুপুরের দিকে গ্রামের সর্বজনীন কালীমন্দিরের সামনের সড়কে পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে দেখা গেল। সেখানে হিন্দু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের সদস্যরা। পান্টি পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক খসরু আলম বলেন, ভোটের দিন একটু সমস্যা হয়েছিল। এখন আর ঝামেলা নেই।

তখন পুলিশের উদ্দেশে জীবন রঞ্জন বলেন, ‘আপনারা থাকলে সমস্যা নাই। চলে গেলেই সমস্যা হচ্ছে। আজকে সকালেও লাঠিসোঁটা নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়েছে। এলাকার মানুষের আতঙ্কে দিন কাটছে। ভোটের দিন সন্ধ্যায় দুটি গরু নিয়ে গিয়েছিল। আপনিই উদ্ধার করে দিয়েছিলেন।’ জবাবে খসরু আলম বললেন, ‘শুনেছি, সকালে কয়েকজন এসেছিল। তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি খুবই ভালো আছে।’

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুর রউফ (ট্রাক প্রতীক) বিজয়ী হন। তিনি সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জকে (নৌকা প্রতীক) পরাজিত করেন। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, ‘নির্বাচনে জেতার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করছে। সহিংসতা ছড়াচ্ছে। মানুষকে কুপিয়ে আহত করছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। এটাকে রাজনীতি বলে না। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করা হোক।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কুমারখালী শহরের কুণ্ডুপাড়ায় আবদুর রউফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি দুই উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় করছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো সহিংসতা হচ্ছে না। তারাই (নৌকার লোকজন) সহিংসতা চালাচ্ছে। পান্টিতে কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই ওই এলাকায় যাওয়া হয়। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।

জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কুমারখালীর বাসিন্দা জয়দেব বিশ্বাস বলেন, কুমারখালীতে নৌকায় ভোট দেওয়ায় প্রতিপক্ষের লোকজন হিন্দুদের ওপর হামলা করেছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করে নারীদের মারধর করেছে। পাঁচ থেকে ছয়টি পরিবার ভয়ে বাড়িছাড়া। এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল বিকেলে পরিষদের সভাপতি অনুপ কুমার নন্দীসহ আরও কয়েকজন গিয়েছিলেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তিনি।

হামলা,কুমারখালী,ভোট,দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন,সহিংসতা,কুষ্টিয়া,আওয়ামী লীগ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close