• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

চোরাইপথে সুনামগঞ্জে ঢুকছে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় চিনি

প্রকাশ:  ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:৩৬
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা

সম্প্রতি চিনির দাম বৃদ্ধির ফলে সুনামগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারিরা ভারত থেকে অবৈধভাবে চিনি নিয়ে আসছে বাংলাদেশে। প্রতি রাতে চিনির বস্তাগুলো দেশে ঢুকাতে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সদর, বিশ্বম্ভপুর ও তাহিপুর উপজেলার সীমান্ত। এতে প্রতিনিয়ত যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি এলাকায় বাড়ছে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য।

জানা যায়, বৈঠাখালী এলাকার সুরমা নদীর ওপর আব্দুজ জহুর সেতু নির্মাণের পর বদলে যায় এ অঞ্চলের অর্থনীতি। তবে রাত ১২টার পর থেকে বদলে যায় এ সেতুর ধরণ। প্রতিদিন এ সেতু দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় চিনি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

সরেজমিনে রাত ১২টার পর আব্দুজ জহুর সেতু থেকে বিশ্বম্ভপুর উপজেলার চালবন্দ পয়েন্ট পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, শীতের কারণে চারদিকে কুয়াশার চাদরে ডাকা। এরই মধ্যে লাইন ধরে দ্রুত গতিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট রোডের দিকে ছুটছে ট্রাক। ট্রাকের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখা গেলো পলিথিনে মুড়ানো ট্রাক ভর্তি ভারতীয় চিনি নিয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা।

আব্দুজ জহুর সেতু থেকে সামান্য দূরে সদর উপজেলা বৈঠাখালি গ্রামের রাধানগর পয়েন্ট। সেই পয়েন্ট যেতেই অন্ধকারের মধ্যে চোখ পড়লো একটি মাল ভর্তি ট্রাক। সেই ট্রাকের সামনে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে গিয়ে ছবি তুলতে ক্যামেরা চালু করতেই দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। তারা সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়েই ট্রাক রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

ভারতীয় চিনি পাচারকারিদের ড্রাইভার শিবুল দেশ জানান, গাড়িতে ভারতীয় চিনি আছে। সেগুলো জেলার জাওয়া বাজার এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে আনলোড হয়ে কই যাবে তা আমি জানি না। পুলিশ ট্রাক আটকে ছিল টাকা নেয়ার জন্য কিন্তু তারা এখানে আপনাদেরকে দেখে পালিয়ে গেছে।

এদিকে রাধানগর পয়েন্ট থেকে আরো ৩ কিলোমিটার দূরে চালবন পয়েন্ট। সেখানে রাস্তার দুই পাশে পুলিশের চেক পোস্ট থাকলে দায়িত্বরত কোনো পুলিশ সদস্যকে পাওয়া যায়নি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ বাজারে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চায়ের ব্যবসা করেন করম আলী। করম আলী জানান, শুধু পলাশ বাজার দিয়ে চোরাকারবারিরা ভারতীয় চিনি আনা-নেওয়া করে না। এ উপজেলার অন্য সড়ক দিয়েও প্রতিদিন ভারতীয় চিনি বের হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন রাত ১২টার পর ধনপুর, চিকারকান্দি, বাঘবেড়, চেংবিল, শরীফগঞ্জ, মতুরকান্দিসহ বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ৮ থেকে ১০টি ট্রাক ভর্তি চিনির গাড়ি বের করে চোরাকারবারিরা। প্রতিটি গাড়িতে ৩০০ বস্তা করে ভারতীয় চিনি থাকে। পরে রাধানগর এলাকায় এসে পুলিশকে ম্যানেজ করে সেই সব চিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

অবৈধ ভারতীয় চিনির চোরাকারবারী সাইফুল (ছদ্মনাম) বলেন, সীমান্ত এলাকায় ২০ থেকে ২২ জন ব্যবসায়ী চোরাইপথে চিনি নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে। যার ভাগ সবাই পায়।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে চলতি বছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ অভিযানে সুনামগঞ্জে ১৯২.৯ মেট্রিক টন চিনি জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য ১ কোটি ৯২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে ১৯৭ জন চোরাকারবারিকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্ বলেন, চিনি চোরাচালানের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ চোরাচালান বন্ধে বদ্ধপরিকর।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

সুনামগঞ্জ,চোরাইপথ,চিনি,ভারতীয়,টাকা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close