• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

একেকটি ভূমিকম্পে বাড়ছে ঢাকার ঝুঁকি

প্রকাশ:  ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:৪৮ | আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:০২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
উঁচু বহুতল ভবনের সমারোহে ঢাকা শহর যেন ইট-পাথরের জঞ্জাল

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয় শনিবার সকালে। রিখটার স্কেলে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে আঘাত হানে ও ৩৩ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল কুমিল্লা জেলায়, আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) সিসমিক সেন্টার থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে।

তবে ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের কথা জানিয়েছে। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের অন্যত্র অন্তত ১১টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ৪ থেকে ৬ মাত্রার সাতটি ভূমিকম্প হয়েছে। বেশিরভাগ কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকার ৬০-৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে।

এর সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের অন্যত্র অন্তত ১১টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ৪ থেকে ৬ মাত্রার সাতটি ভূমিকম্প হয়েছে। বেশিরভাগ কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকার ৬০-৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে।

সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে প্রশ্ন উঠেছে- ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় কতটা প্রস্তুত ঢাকা?

বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস

ঘন ঘন ভূমিকম্প একটি বড় ভূমিকম্পের সংকেত হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সেটি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, “এ বছর দেশে ১০০টিরও বেশি ছোট ভূমিকম্প হয়েছে, তবে সেগুলি এতই ছোট ছিল যে, আমরা সেগুলো অনুভব করিনি। রিখটার স্কেলে ৩ এর বেশি হলে আমরা সাধারণত ভূমিকম্প অনুভব করি। এগুলো আসন্ন বড় ভূমিকম্পের লক্ষণ।”

তিনি বলেন, “অন্যান্য দেশে বড় ভূমিকম্পের আগে ২০০-৩০০টিরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। খুব দ্রুতই ৬-৭ মাত্রার একটি বড় কম্পন ঘটতে পারে।”

মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকুন

ভূমিকম্পটি দেশের সবচেয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই ভূমিকম্প বাংলাদেশের সর্ব উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে দিনাজপুর-কুমিল্লা থেকে ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

আতঙ্কিত না হয়ে বড় ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএমডির আবহাওয়াবিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিহাসও এটা সমর্থন করে। এ অঞ্চলে এর আগেও বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। যেহেতু এই দুর্যোগের আগে পূর্বাভাস পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, তাই ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস মেনে নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।”

দুর্যোগ-প্রতিরোধী ভবন

একটি ভবনের মোট ব্যয়ের ২০% নিরাপত্তার জন্য ব্যয় করা হলে সেটি ভূমিকম্প-প্রতিরোধী হতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে অর্থ বাঁচাতে অনেকেই তা করছেন না।

অধ্যাপক আনসারি বলেন, “সরকার ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা জোরদার করলেও ঢাকায় দুর্যোগ-প্রতিরোধী ভবন নির্মাণে এখনও তেমন গুরুত্ব দেয় না। এসব তদারকির দায়িত্ব রাজউকের। যারা ভবন নির্মাণ করছেন তাদের অবশ্যই নজরদারি করতে হবে। অনুমতি দেওয়ার সময় ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ভবন নির্মাণে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।”

“একই সাথে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। আমরা সরকারি অফিসে এসবের ওপর জোর দিয়েছি, কিন্তু তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।”

এখন থেকে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক আনসারি।

বাংলাদেশ ব্যাপক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ২০০৯ সালের একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যদি ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে আনুমানিক ২৭০,৬০৪টি ভবন মাঝারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ও ২৩৮,১৬৪টি ভবন একাবারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

উপেক্ষিত এনপিডিএম পরিকল্পনা

নগরায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ঝুঁকি মোকাবিলায় ২০১০-২০১৫ সালের জন্য ন্যাশনাল প্ল্যান ফর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট (এনপিডিএম) পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যা ২০১৬-২০২০ সালের জন্য হালনাগাদ করা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার সব ভবন ও কাঠামোর জরিপ পরিচালনা ও ঝুঁকি মূল্যায়নের তালিকা তৈরির দায়িত্ব রাজউকের।

তবে ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই তালিকা তৈরি হয়নি।

এদিকে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরবান রেজিলিয়েন্স অব রাজউকের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালী বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা ঢাকার ২০,০০০ সরকারি স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালের ৩,০৫২টি মনিটরিং সম্পন্ন করেছি। এর মধ্যে ৪২টি প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে ফেলা এবং ১৮৭টি মেরামত করা প্রয়োজন।”

ভূমিকম্প গবেষণা

বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০২২ এনফোর্সমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের পাশাপাশি, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। যা একটি বিল্ডিং প্ল্যানের সব তথ্য সংগ্রহ ও একত্র করতে।

হেলালী আরও বলেন, “ভূমিকম্প গবেষণার জন্য মহাখালীতে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। উন্নত গবেষণার জন্য সেখানে একটি আধুনিক গবেষণাগার তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণার জন্য একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে যাচ্ছি। এখন, আমরা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি, আগামী মার্চের মধ্যে এটি পাওয়ার আশা করছি।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি এবং বেসরকারি খাত থেকে সহায়তা পেলে আমরা দ্রুত প্রস্তুতি নিতে পারি, তবে আমরা সেভাবে কোনো সমর্থন পাচ্ছি না।”

ভূমিকম্প,ঝুঁকি,ঢাকা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close