• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে শিশু নুসরাত,চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন এসপি

প্রকাশ:  ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৩১
রেদওয়ানুল হক , ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে তিন মাস ধরে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের বেডে ব্যাথা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন শিশু নুসরাত (১২)। অনেক আগেই নুসরাতকে বিভাগীয় শহর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। কিন্তু নুসরাতের বাবা মো: হারুনের পক্ষে রংপুরে চিকিৎসা করা অসম্ভব। দিনে যা আয় করেন তা দিয়েই কোন মত চলে তাদের সংসার। অভাবে সংসারে যেখানে এক বেলা খেয়ে বেঁচে থাকা দায়, সেখানে আবার মেয়ে চিকিৎসা। এ যেন 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'। তাই টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়।

নুসরাতের বাড়ি পৌর শহরের মুসলিম নগর এলাকায়। সে শহরের আর কে.স্টেট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। হাসপাতালের বিছানায় মেয়ের অসহ্য যন্ত্রণা দেখে মা লাইলী বেগম কোন উপায় না পেয়ে দু’নয়নে অশ্রু ঝরাচ্ছেন। ইবাদত-বন্দেগীতে মেয়ের সুস্থতায় প্রার্থনা করছেন।

হঠাৎ মঙ্গলবার (২৮নভেম্বর) বিকেলে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে হাসপাতালে নুসরাতকে দেখতে হাজির পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক। তিনি প্রায় ঘন্টা খানে সময় দেন নুসরাতকে। তার চিকিৎসার খবর নিলেন পরিবার ও চিকিৎসকদের কাছে। অসহায় পরিবারের পাশে থেকে নুসরাতের সুস্থ্য হতে চিকিৎসার যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন এসপি উত্তম প্রসাদ পাঠক।

এসপি পাঠকের এমন আশ্বাসের কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে যান মা লাইলী বেগম। স্বপ্ন দেখেন আবারো মেয়ে স্কুল যাবে, কবিতা লিখবে। সহপাঠীদের সঙ্গে খেলবে।

আহত নুসরাত বলেন, পুলিশ আংকেল (পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক) বলেছে আমি দ্রæত সুস্থ হয়ে যাবো, আমি আবার স্কুলে যাবো, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করব। তিনি পাশে বসে আমায় আদর করেছেন। আমার জন্য অনেক খাবার নিয়ে এসেছে। মা কান্না করছিলো আংকেল মাকে কান্না করতে বারণ করেছে। আর বলেছে আপনার মেয়ে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবে। আমাকে খুবই ভালো লাগছে।

লাইলী বেগম বলেন, আমার মেয়ে তিন মাস ধরে অসুস্থ। রংপুর নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছি। এই বিপদে পুলিশ সুপার আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনার উপকারের কথা কোন দিনও ভুলবো না। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পরে তিনি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানান, নুসরাত কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে তিন মাস ধরে ভর্তি রয়েছে। তাকে ভ্যাকসিনও দেওয়া হয়েছে। আরো কিছু দিন না যাওয়া পর্যন্তকিছুই বলা যাবে না। শিশুটির চিকিৎসা সম্পর্কে পুলিশ সুপার আমাদের সাথে কথা বলেছেন। আমরা সর্বচ্চ চেষ্টা করছি তাকে সুস্থ্য করে তুলতে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক জানান, কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে গত তিন মাস ধরে নুসরাত হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এমন খবর পেয়ে আমি দেখতে এসেছি। টাকার অভাবে শিশুটির চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার। বিষয়টি খুবই বেদনা-দায়ক। চিকিৎসকের সাথে কথা বলেছি তারা নিয়মিয় মেডিসিন দিচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ অসহায় পরিবারের পাশে থেকে তার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করবে।

তিনি আরো বলেন, জেলা পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সর্বদায় অসহায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করছি আমরা। বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রমেও সবসময় সাধারন জনগনের পাশে রয়েছে জেলা পুলিশ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোঃ আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মিথুন সরকার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ফিরোজ কবির।

সহায়তা,হাসপাতাল

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close