• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ময়মনসিংহে নারীকে বাসে ধর্ষণ, চালক গ্রেপ্তার

প্রকাশ:  ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:২৪
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বাসে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় বাসের চালক জাহাঙ্গীর আলমকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে হালুয়াঘাট উপজেলার পাগলপাড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তাকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী। বিকালে আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এই নিয়ে শুক্রবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন হালুয়াঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আহসান হাবিব।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বালুকদর গ্রামের এক গৃহবধূ (২২) ঢাকায় তার স্বামীর কাছে যাওয়ার উদ্দেশে গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে বাড়ি থেকে তার বৃদ্ধ নানার সঙ্গে বের হন। দুপুরের দিকে শম্ভুগঞ্জ এলাকায় এসে তার নানা ভুল করে ঢাকার গাড়িতে না উঠিয়ে হালুয়াঘাটগামী এক বাসে তাকে তুলে দেন।

গৃহবধূর স্বামী তাকে ফোন করে জানতে চান, এখন সে কোথায় আছে। কিন্তু সে না বলতে পারায় বাসের হেলপারকে মোবাইল দিতে বলেন। হেলপারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ভুল বাসে উঠেছেন। পরে বাসের ড্রাইভার গৃহবধূকে হালুয়াঘাট বাসস্ট্যান্ড গিয়ে ঢাকাগামী অন্য বাসে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন। বিকাল ৩টায় বাসের হেলপার নারীকে বাসস্ট্যান্ডে এক দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্য বাসে তুলে দেওয়ার জন্য সামনে যায়। এ সময় অন্য এক বয়স্ক নারী জানতে চান, সে কোথায় যাবে। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া এলাকার আব্দুল কাদিরের ছেলে ইমাম বাসের চালক জাহাঙ্গীর আলম।

সে ঘটনাটি শুনে ওই নারীর পিছু নেয়। যে বাসে করে ওই গৃহবধূ হালুয়াঘাটে এসেছিলেন সেই বাসের চালক তাকে ঢাকাগামী এক বাসে উঠিয়ে দেন। সুযোগ বুঝে বাসে উঠে পড়ে জাহাঙ্গীর আলম। সে ওই নারীকে বুঝিয়ে বলে, এই বাসে গেলে ঢাকা যেতে গভীর রাত হয়ে যাবে। সে যেন তার বাসে ঢাকায় যায়। তার বাস রিজার্ভ করা আছে এবং ধারা বাজার এলাকায় রাখা। রাত ৮টার মধ্যেই ঢাকা নিয়ে যাবেন। ভুক্তভোগী বিশ্বাস করে তার সঙ্গে ধারা বাজার মুরগি মহল এলাকায় নেমে পড়েন।

তারপর জাহাঙ্গীর আলম ওই নারীকে নিয়ে মুরগি মহলের পাশে নির্জন স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখা ‘ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯৬৫৮’ নম্বরের ইমাম পরিবহন বাসে উঠিয়ে বসতে বলে। বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে জাহাঙ্গীর বাসে উঠে গাড়ির দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগী চিৎকার করতে চাইলে গলা চেপে ধরে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ধর্ষণের পর সে নারীকে বাসে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যায়। এক ঘণ্টা পর আবারও এসে বিয়ে করবে বলে প্রলোভন দেখায়। ওই দিন রাত ১০টায় জাহাঙ্গীর আলম ইটভাটার রির্জাভ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় এবং ভোরে নারায়ণগঞ্জে পৌঁছায়। ১৭ অক্টোবর সকালে পুনরায় ওই নারীসহ বাস নিয়ে সে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে আবারও রওনা দেয়।

বিকাল ৩টায় হালুয়াঘাট উপজেলার নাগলা বাজার পৌঁছে বাসের হেলপার ফয়সালকে অভিযুক্ত ব্যক্তি বলে বলে, এই মহিলাকে বিয়ে করেছি, সে তোর নতুন ভাবি। তাকে বাড়িতে নিয়ে যা। আমি রাতে আসবো। পরে জাহাঙ্গীর আলম রাতে হেলপার ফয়সালদের বাড়িতে এসে একই পরিচয় দেয় এবং ওই নারীর সঙ্গে রাত্রীযাপন করে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করে। ১৮ অক্টোবর পৌরশহরের পাগলপাড়া এলাকায় স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয় এবং তৃতীয়বার ধর্ষণ করে। পরে বাসায় রেখে জাহাঙ্গীর সেখান থেকে চলে যায়।

অন্যদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না ভুক্তভোগী। পরে সুযোগ বুঝে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে বাবাকে কল করে বিষয়টি জানায়। তার বাবা হালুয়াঘাট থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানালে তাকে উদ্ধার করে। পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে সেই ইমাম পরিবহনের বাসসহ জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হালুয়াঘাট থানার ওসি সুমন চন্দ্র রায় বলেন, এ ঘটনায় হালুয়াঘাট থানায় শুক্রবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জাহাঙ্গীর আলমকে আসামি করে মামলা করেছেন ওই নারী। আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

ময়মনসিংহ,গ্রেপ্তার,চালক,ধর্ষণ,বাস,নারী

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close