• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

‘নদী ভাঙনে সব হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব’

প্রকাশ:  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আবিধারা এলাকার বাসিন্দা রফিজ উদ্দিন। নদী ভাঙনে হারিয়েছেন ঘর-বাড়ি। ঘর ভরা ধান থাকলেও এখন নেই কিছুই।

রফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার পুরো বাড়িটা পদ্মার পেটে। বাড়িতে ৬০ মণ ধান ছিলো। ভাঙন শুরু হওয়ার সময় কিছু ধান সরিয়ে নিতে পারলেও বাকিগুলো নদীতে চলে গেছে। সব হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব।’

সম্পর্কিত খবর

    পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির কারণে মানিকগঞ্জের যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টে প্রতিদিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুমনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীতেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দুটি নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতি ও গাজীখালি নদীর পানিও বেড়েছে। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক স্থাপনা। অনেকেই ভাঙন আতঙ্কে আগেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার যমুনার তীরবর্তী চরকাটারি, সুবুদ্ধি পাচুরিয়া, রাহাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা, আমতলী বাজার সংলগ্ন এলাকা, ঘিওর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী ঘিওর বাজার, ঘিওর গরুর হাট, হিজুলিয়া, নাস্তি, শিবালয় উপজেলার কাশাদহ, হরিরামপুর উপজেলার ধূলশূড়া এলাকা, আজিমনগর ও সূতালড়ি এলাকা ও সদর উপজেলার লেমুবাড়ি খেয়াঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার ভাঙনে ফসলি জমিসহ অর্ধ শতাধিক স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয়সহ শতাধিক গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা।

    পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টে বিপৎসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার। গত বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) এ পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটিার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ২৪ ঘণ্টায় ১৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

    জেলার অভ্যন্তরীণ কালীগঙ্গা নদীর তরা ও ধলেশ্বরী নদীর জাগীর পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও প্রতিদিন গড়ে ৫ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার ৫৫ কিলোমিটার এলাকা নদী তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙন প্রবণতা বেশি। ভাঙন প্রবণ এলাকা চিহিৃত করে ১৮ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

    ধূলশুড়া এলাকার রাহেলা বেগম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমরা ভাঙনের শিকার। কয়েক দফা পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়ে ঘর বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। তারপরও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। এসব এলাকায় স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করলে শুধু জিও ব্যাগ ফেলে দীর্ঘ স্থায়ী ভাঙন ঠেকানো যাবে না।’

    দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ বলেন, এ ইউনিয়নের যমুনা নদীর পশ্চিম অংশে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। যাদের বাড়ি ঘর নদীতে চলে গেছে তারা আত্নীয় স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

    মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ জিও ব্যাগ ও ২০ হাজার টিউব ফেলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাঙন ঠেকাতে কাজ করছেন। পানি কমতে শুরু করলে এ ভাঙন আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close