• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

তিস্তার পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত, পানিবন্দি ১৫ হাজার পরিবার

প্রকাশ:  ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৫:৪৫
লালমনিরহাট প্রতিনিধি

উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তার বাম তীরে নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং চরাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির চাপে ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে পানি কিছুটা কমে একই পয়েন্টে সকাল ৯টা থেকে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় একই পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে। মূলত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে।

পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে শুধু তিস্তার বাম তীরে পাটগ্রামের আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকার ১৫ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমনের বীজতলাসহ অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

এ ছাড়া ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বেড়েছে। ধরলা নদীর পানি শিমুবাড়িয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা। পানিতে ডুবেছে চরাঞ্চলের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে।

এ ছাড়াও প্লাবিত হয়েছে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ী, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা এলাকার নিম্নাঞ্চল। ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত, রাস্তাঘাট ও পুকুর। গৃহপালিত পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে বন্যার্তরা উঁচু স্থানে অবস্থান নিচ্ছেন। নলকূপ, টয়লেট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং স্যানিটেশন সমস্যায় পড়েছেন বানভাসি মানুষ। ঘরের ভেতর হাঁটুপানি। অনেকে খাটের ওপর চুলা তুলে রান্না সারছেন।

তিস্তা ব্যারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, শুক্রবার গভীর রাত থেকে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বেড়ে শনিবার পর্যন্ত বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পাউবো সূত্র জানায়, পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে তিস্তাপাড়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে আসছে। আরও কী পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না।

পানিবন্দি পরিবারগুলোর অভিযোগ, তারা দুদিন ধরে এ অবস্থায় থাকলেও এখনো পর্যন্ত তারা শুকনো খাবার বা কোনো ত্রাণ পাননি। কেউ তাদের খোঁজ পর্যন্ত করেনি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। দুদিন তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছি। জেলার জন্য ৪৫০ টন চাল ও সাত লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং পিআইওর মাধ্যমে ১১০ টন চাল বিতরণ চলছে।’

বন্যা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close