• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

পায়ে লিখেই বাধা ডিঙালো অদম্য ‘সোনিয়া’

প্রকাশ:  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:৪০
সাভার প্রতিনিধি

জন্ম থেকে দুটি হাত নেই, ডান পাটাও আঁকারে অন্যটার চেয়ে ছোট। পা দিয়ে লিখে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন সোনিয়া আক্তার। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত ফলাফলে মানবিক শাখা থেকে জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। অদম্য সোনিয়ার স্বপ্ন ভবিষ্যতে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।

সোনিয়া ঢাকার সাভার উপজেলার ব্যাংক কলোনী এলাকার শাহাদাত হোসেন ও আকলিমা আক্তারের মেয়ে। সোনিয়া সাভার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এর আগে ২০২০ সালে সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।

সম্পর্কিত খবর

    তার বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় পোশাক শ্রমিক হলেও বেশ কয়েক বছর যাবত পরিবার ছেড়ে আলাদা থাকেন। মা আকলিমা আক্তার অন্যের বাড়ির গৃহকর্মী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তামান্না সবার বড়। ছোট ভাই রাকিব হোসেন দশম শ্রেণিতে পড়ে ও ছোট বোন তানিয়া আক্তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

    সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার ইচ্ছা একজন সত্যিকারের সফল মানুষ হওয়ার। ছোটবেলায় আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সেটি সম্ভব নয়। তাই আমার ইচ্ছে আমি কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব এবং লেখাপাড়া শেষ করে আমি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো।’

    সোনিয়াকে আলোকিত করতে পেছন থেকে জ্বালানি হিসেবে যিনি কাজ করেছেন তিনি হলেন তার মা আকলিমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০০২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোনিয়ার জন্ম। ওর জন্মের পর মানুষের কটু কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। পরে ভেবেছি, ওকে কারও বোঝা হতে দিবোনা। ছয় বছর বয়স থেকেই ওর পায়ে পেন্সিল দিয়ে পা দিয়ে লেখানোর চেষ্টা শুরু করি। এরপর পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করালাম। এরপর একটি মাদ্রাসা থেকে আমার মেয়ে পিইসি পরিক্ষা দেয়। এরপর আস্তে আস্তে আজকের এই জায়গায়।’

    আকলিমা আক্তার আরো জানায়, তার মেয়ের পড়াশোনায় শারীরিক সীমাবদ্ধতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ২০১৪ সালে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি), অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় (জেএসসি) এবং ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কঠোর পরিশ্রমে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়। এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আজকে আমার সোনিয়া এইচএসসিতেও ভালো রেজাল্ট করেছে। এখন যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ের মেধার মূল্যায়ন করে ওর জন্য দুটো কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করতেন তাহলে আমার মেয়েটা আরো ভালোভাবে তার পরবর্তী শিক্ষা জীবনটুকু অতিবাহিত করে দেশের একজন সফল নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতো।

    সাভার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইমরুল হাসান বলেন, ‘সোনিয়া প্রতিবন্ধী। তার দুটি হাত এবং একটি পাও ছোট। তবে সে অত্যন্ত মেধাবী। পা দিয়ে লেখে। আমাদের কলেজ থেকে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে সে জিপিএ–৪.৩৩ পেয়েছে। এটা আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। এতো প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সে ভালো ফল করেছে। সে আমাদের গর্ব। একটু সহায়তা পেলে আমাদের সোনিয়া ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close