• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

গোদাগাড়ীর সেই প্রতারক কলেজ শিক্ষক বহিস্কার

প্রকাশ:  ০৭ নভেম্বর ২০২২, ২০:৫৮
রাজশাহী প্রতিনিধি

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক প্রতারক সিরাজুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে এবং গত ১ সপ্তাহ ধরে কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন বলেছেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ সেলীম রেজা।

গত বছর ২৬ জুলাই সিরাজুল ইসলামকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়া হয়। অভিযোগ উঠে, শিক্ষকদের কথপোকথন গোপনে রেকডিং এবং বাইরে প্রচার করে স্থানীয় জনগনের মাঝে ও কলেজে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন যার ফলে অধ্যক্ষ লাঞ্চিত হতে হয়েছে। সহকারি অধ্যাপক ফাতেহা ইয়াজ বেগমের নিকট হতে ১ লাখ উৎকোচ দাবি করেছেন এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়ে চাকুরিচ্যুতির হুমকি প্রদান করেছেন।

চা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান জনির নিকট হতে চাকুরি দেয়ার নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, দায়িত্ব পালনে অনিহাসহ তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

উত্তর সন্তষজনক না হওয়ায় তকে গত ৬ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ সময় তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয়ের নীতিমালা অনুয়ায়ী জীবন ধারনের জন্য মূল বেতনের ৫০ ভাগ বেতন পাচ্ছেন। এদিকে কলেজের ৯ জন সহকারি অধ্যপক ওই প্রতারক শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মাহমুদ আখতার তার ( সিরাজুল) বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে প্রতরণার মাধ্যমে তার ও স্ত্রী নামে সোনালী ব্যাংক, গোদাগাড়ী শাখা হতে থেকে ২ লাখ টাকা এবং গোদাগাড়ী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি থেকে ৫ লাখ ২৬ হাজার উত্তোলন করেছেন প্রতারক সিরাজুল ইসলাম। এখন টাকাও পরিশোধ করছেন না, মাসিক কিস্তিও দিচ্ছেন না।

ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবুল হাসান রাব্বি তার লিখিত অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছেন, তাকে ভুল বুঝিয়ে জামিনদার করে সোনালী ব্যাংক, গোদাগাড়ী শাখা হতে ২০ লাখ টাকা লোন উত্তোলন করেছেন। প্রতারক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম নিজ নামে সোনালী ব্যাংক, গোদাগাড়ী শাখা থেকে ২ লাখ টাকা ক্ষুদ্র লোন উত্তোলন করেছেন। ওই সব লোনের ব্যাংকে কিস্তি পরিশোধ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ শিক্ষক কল্যাণ সমিতি থেকে ২ লাখ টাকা লোন নিয়েছেন বলে অধ্যক্ষ সেলীম রেজা জানান। এ ছাড়া নিজ নামে সিরাজুল ইসলাম গোদাগাড়ী উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি কল্যণ সমিতি থেকে ৬ লোন উত্তোলন করেছেন। ওই লোন পরিশোধ করেননি এবং কিস্তি পনিশোধ না করায় সুদসহ ৭ লাখ টাকা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে পিয়ন পদে চাকুরি দেওয়ার নাম করে ৩ লাখ টাকা এবং ঢাকায় বিভিন্ন সময় বড়, বড় মাছ, মাংশ, আম, গম, ছোলা বিভিন্ন মৌসুমি জিনিস কিনে দেয়ার নাম করে আরো ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রতারণার স্বীকার হয়ে চাকুরি না পেয়ে, সব হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন গরীব চা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান জনি। জনি কলেজের পাশে একটি ছোট দোকানে চা বিক্রি করতো। প্রভাষক চা পান করতে গিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে জনির সাথে।

কলেজ গর্ভনিং বডির সদস্য ও রাজাবাড়ীহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম কলেজে পিয়ন পদে চাকুরি দেওয়ার নাম করে ২০১৬ সালে জনির নিকট হতে ৩ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। সে সাথে বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় বড় বড় মাছ, মাংশ, আম, গম, ছোলাসহ বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে সিরাজুলকে দিয়েছেন এতে তার দেড় লক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জনি আমার কাছে স্বীকার করেছে। আমি তাকে বলেছি এ একটা শিক্ষক নামধারি প্রতারক, সে তোমাকে চাকুরি দেয়ার ক্ষমতা রাখে না, তুমি চাকুরি পাবে না তার উপর চাপ সৃষ্টি করে টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা কর। তার বিরুদ্ধে জনি কলেজ অধ্যক্ষ ও সভাপতি নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

এ ব্যপারে প্রতারক প্রভাষক সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জনির নিকট হতে টাকা নেয়া হয়েছিলো তা পরিশোধ করে দিযেছি, সে কোনো টাকা পাবে না। আগামী ২৩ ডিসেম্বর ১ লাখ টাকা ফেরত দিবেন বলে সিরাজুল ইসলাম লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন কেন? তার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। আপনি বেতন পান ৩৫ হাজার ৩শ’ টাকা, আর ৪৩ লাখ লোন নিয়েছেন, কিস্তি দেন ৪৩ হাজার টাকা। আপনি লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা করেছেন বলে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করচ্ছি।

রাজাবাড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলীম রেজা এ প্রসঙ্গে বলেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে জনি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। আগামী ১২ ডিসেম্বর ১ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে লিখিত দিয়েছেন, অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি। গত ১ সপ্তাহ থেকে অনুমতি ছাড়াই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত হয়েছে। তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সন্তষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি। তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত প্রক্রিয়া চলছে।

অধ্যক্ষ বলেন, সিরাজুল জনির নিকট গিয়ে হাতে পায়ে ধরে তাকে দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

কলেজ গর্ভনিং বডির সভাপতি, রাজশাহী জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার শাহাদুল হক বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি, বিভিন্ন কুচক্রীমহল তার পক্ষ নিয়ে কলেজের পরিবেশ নষ্ট করছেন, সবকিছু আইন মোতাবেক চলবে। এ ধরণের প্রতারকের শিক্ষকতা করার কোনো যোগ্যতা নেই।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

রাজশাহী,গোদাগাড়ী,বহিস্কার,কলেজ শিক্ষক,প্রতারক

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close