• রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

দুবলার চরে রোববার থেকে শুরু রাস মেলা

প্রকাশ:  ০৬ নভেম্বর ২০২২, ২৩:২৬
খুলনা প্রতিনিধি

সুন্দরবনের দুবলার চরে রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে তিন দিন ব্যাপী রাসমেলা। এ বছর ১৩৯ তম রাস উৎসব উপলক্ষে ৬ থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী পূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে।

সুন্দরবনের ‘দুবলার চরে’র এ মেলায় কার্তিক-অগ্রহায়ণের পূর্ণিমা তিথিতে প্রতিবছর হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা ভিড় জমায়। মূলত রাসমেলা মণিপুরীদের প্রধান উৎসব হলেও বাঙ্গালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন স্থানে এ উৎসব পালন করে থাকে।

সাধারণত ‘রাসলীলা’ নামেও এ উৎসব পরিচিত। কার্তিক-অগ্রহায়ণের পূর্ণিমা তিথিতে এ উৎসব সুন্দবনের দুবলার চর, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতেও বেশ সাড়ম্বরে পালিত হয়। ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমা ঘিরে ইতোমধ্যে চরাঞ্চল ইতোমধ্যে পূর্ণ্যার্থী ও পর্যটকদের পদচারণায় সরব হয়ে উঠেছে।

দেশের সর্ববৃহৎ প্রাচীন এ রাস উৎসব সুন্দরবনের সাগরদুহিতা দুবলারচরে অনুষ্ঠিত হয়। তবে রাস উৎসব নিয়ে নানা মত থাকলেও ধারণা করা হয়, ১৯২৩ সালে ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসরি হরিভজন নামে এক হিন্দু সাধু প্রথমে এ উৎসব শুরু করেছিলো। তিনি ২৪ বছরেরও বেশি সময় সুন্দরবনের গাছের ফল-মূল খেয়ে জীবন-যাপন করতেন। তিনি হরিচাঁদ ঠাকুরের স্বপ্নাদৃষ্টি হয়ে পূজা-পর্বনাদি ও অনুষ্ঠান শুরু করেন দুবলার চরে। আর তারপর থেকেই রাস মেলা বসেছে। তবে লোকালয়ে এ মেলা নীল কোমল মেলা নামেও বেশ পরিচিত।

অনুরূপভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রী-কৃষ্ণ কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপমোচন এবং পূর্ণলাভে গঙ্গাস্নেনর স্বপ্নাদেশ পেলে সেই থেকেই রাস উৎসবের সূচনা ঘটে।

আবার অনেকের মতে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্বোবৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমা রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সাথে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। আর সেই থেকেই এ উৎসবের শুভ সূচনা ঘটে।

প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের দুবলাচরে ও আলোর কোলে রাস পুর্ণিমায় রাধাকৃষ্ণের পুজা, পুর্ণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে চলতি বছর রাস উৎসবে পুর্ণিমা তিথিতে চরে নির্মিত মন্দিরে নামযজ্ঞ, রাধাকৃষ্ণ, কমল কামিনি ও বনবিবির পূজা অনুষ্ঠিত হবে। অটুট বিশ্বাস আর পূর্ণ ভক্তিতে কমল কামিনীর দর্শন মেলে। এ পূর্ণ বিশ্বাসে পুণ্যার্থীরা কমল কামিনীর দর্শনের আশায় নিলকোমলের (পুর্ণিমায় প্রথম আসা সমুদ্র ঢেউ) সাগর মোহনার ঢেউয়ে স্নান করে। আর প্রথম ঢেউয়ে পুণ্যার্থীরা হাতে ধরে রাখা প্রসাদ সাগর ঢেউয়ে উৎসর্গ করে, এরপর স্নান শেষে চলে আসে।

মূলত সনাতন র্মাবলম্বীরা পুর্ণিমার প্রথম প্রহরে সাগর জলে স্নান করে মনোবাসনা পুর্ণ ও পাপমোচনের বিশ্বাসে রাসমেলায় যোগদিলেও কালক্রমে তা বহু ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব ঘিরে সুন্দরবনের দুবলারচরে অসংখ্যক বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, নির্বিশেষে সাগর চর এলাকায় উপস্থিতিতে কোলাহল, পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে। প্রতি বছর রাস উৎসব মানুষের মিলন মেলায় রূপ নেয়। ফলে সাগরপাড়ে দুবলারচর ও আলোরকোল চর সমুহে অনুষ্ঠিত রাস উৎসব সুন্দরবনের ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।

সুন্দরবন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান, এ বছর দুবলার চরের এ মেলায় দর্শনার্থী ও পুণ্যস্নানে নিরাপদে যাতায়াতে তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে। এসব পথে বন বিভাগ, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

তিনি জানান, আজ রোববার দিনের বেলায় যাত্রা শুরু করতে হবে এবং নৌযানগুলো কেবল দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রঙ দিয়ে বিএলসি অথবা সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবস্থানকালীন টোকেন ও টিকিট সবসময় কাছে রাখতে হবে। রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নানের সময় কোনো বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারও কাছে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল, করাত ইত্যাদি অবৈধ যে কোনো কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া ট্রলারে কোনো প্লাস্টিকের খাবারের প্লেট বহন করা যাবে না। লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুণ্যস্নান স্থানে মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ফোটানোসহ কোনো প্রকার শব্দ দূষণ করা যাবে না। রাস পূর্ণিমায় আসা পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত নাগরিকত্বের সনদপত্রের মূলকপি সঙ্গে রাখতে হবে।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডঃ আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, রাসমেলাকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে নিয়োজিত থাকবে। রাসপূর্ণিমায় পূজা ও পূর্ণস্নানে আগত তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে পশ্চিম বন বিভাগের অভিযান পরিচালনার জন্য কয়েকটি টিম কাজ করবে। সর্বশেষ তীর্থযাত্রীদের নিরাপদে চলাচলে সকল প্রকার সহযোগিতা দেওয়া হবে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

খুলনা,রাস মেলা,দুবলার চর,সুন্দরবন

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close