• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

সুরমা সেতুর উদ্বোধন শনিবার, ভোগান্তি কমবে লাখো মানুষের

প্রকাশ:  ২৩ অক্টোবর ২০২২, ২১:৪৬ | আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ২১:৪৯
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

ছাতক-দোয়ারাবাজারবাসীর স্বপ্নের সুরমা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে শনিবার (২৯ অক্টোবর)। এ নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে উপজেলা জুড়ে। যথাযথ সময়ে ব্রিজের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্নের প্রচেষ্টা চলছে দিন-রাত। ধারণা করা হচ্ছে, এ সেতু উদ্বোধন হলে ভোগান্তি কমবে লাখো মানুষের।

জানা গেছে, শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের শতাধিক সেতু উদ্বোধন করবেন। সেই তালিকায় সুরমা নদীর উপর সুরমা ব্রিজসহ রয়েছে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ ছাতক দোয়ারাবাজার সড়কে আরো ৯টি ব্রিজ।এর মধ্যে সুরমা ব্রিজ, সংযোগ সড়ক, টোলপ্লাজাসহ ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২শ’ ৫০ কোটি টাকা।

ব্রিজ উদ্বোধন নিয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা শিক্ষক রিপন দে, আশিষ রহমান ও দিলোয়ার হোসেন জানান, ব্রিজটা আমাদের জন্য কতোটা জরুরি তা বলে শেষ করা যাবে না। এই ব্রিজ দুই পাড়ের মানুষের বন্ধন দীর্ঘ কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। ব্রিজ উদ্বোধনের আনন্দে যেন আমাদের উপজেলায় উৎসবের বাতাস বইছে।

সুহেল আহমদ নামের আরেক ব্যক্তি জানান, গভীর রাতে আমার মায়ের হঠাৎ বুকে ব্যাথা হলে দোয়ারা বাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাই। সেখানকার কর্মরত চিকিৎসকরা জানান দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি মাকে নিয়ে দ্রুত এম্বুলেন্স যোগে রওনা করি। সুরমার পাড়ে ফেরিঘাটে এসে দেখি ফেরি নাই। মা বুকে ব্যাথায় ছটফট করেন। মনে হচ্ছিলো তখন মাকে মাথায় করে নিয়ে এপাড়ে আসি। একদিকে অক্সিজেন সমস্যা। অন্যদিকে এম্বুলেন্স থেকে নামাতে পারছি না। এভাবে প্রায় ঘণ্টা পর ফেরি আসে। সেদিন বুঝেছিলাম আমাদের জন্য সুরমা ব্রিজ কতোটা জরুরি। সেদিনের কষ্ট আমি জীবনে ভুলবো না। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের ছাতক দোয়ারাবাজারের এমপি সাহেবকে সালাম জানাই। শুধুমাত্র উনার একান্ত প্রচেষ্টায় দুই পাড়ের মানুষ যোগাযোগের সব দিকে নিরাপদ হবে।

তিনি আরো জানান, দুই তিন বছর পূর্বে এক বৃদ্ধ ইর্মারজেন্সি রোগী সঠিক সময়ে হসপিটালে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় হার্ট ব্লক হওয়ায় নানান সমস্যার সম্মুখিন হন। আমি তখন উপলব্ধি করেছিলাম সেই পরিবারে কি ঝড় মাথার উপড় দিয়ে গেছে।

জানা গেছে, ব্রিজটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে। চলতি বছরের জুন মাসে ব্রিজটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার প্রচণ্ড স্রোতে সংযোগ সড়ক ভেঙে পানিতে ভেসে যাওয়ায় ব্রিজটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করায় ও কাজের মান অতিশয় নিম্নমানের কারণে বানের পানিতে ভেসে যায় সেতু সংযোগ সড়কটি।

সওজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কের ভাঙ্গা স্থানে ৫টি ভাগে ১০৮টি রিং বসানো হচ্ছে। পরবর্তীতে এখানে স্থায়ীভাবে কালভার্ট বসানো হবে। সব মিলিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের মেরামত শেষ হবে।

সড়ক পথে পরিবহন সুবিধের কারণে শিল্পাঞ্চল ছাতকে ভারী ও মাঝারী ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার পাশাপাশি ছাতক ও দোয়ারাবাজার অঞ্চলে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রকারের শস্যাদি সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা আর্থিক লাভবান হবেন। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। বয়ে আনবে এবং দু’টি উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষের। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে দু’টি উপজেলার।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন আগেই সুরমা সেতু মূল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর উভয় পাড়ে ২.৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সংযোগ সড়ক ও টোলপ্লাজা নির্মাণ কাজের প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়কের মধ্যে ছাতক থেকে মাধবপুর অংশে ১.৬০ কিলোমিটার এবং দোয়ারবাজার সড়কের সাথে সংযোগ ৮শ’ মিটার নতুন সড়ক ও রাস্তা নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সুরমা ব্রিজের উভয়পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যায় পড়ে সওজ। বাজারদরের চেয়ে তিনগুন বেশি ক্ষতিপূরণ দাবি করে ভূমি মালিকেরা তারমধ্যে আকিজ কোম্পানী, বারকাপন, বাঁশখলা গ্রামের সমস্যা ছাড়াও উচ্চ আদালতে ১৭টি মামলা দায়ের করেন। ফলে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ আটকে যায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ভূমি মালিকদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে উচ্চ আদালতে মামলা উত্তোলনের (নো অবজেকশন) ব্যবস্থা করেন। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধের মাধ্যমে সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ চালু করা হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট সুরমা নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে জানুয়ারিতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় সেতুটির নির্মাণ কাজ। সেতু নির্মাণে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো ৩ বছর। শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির ৪টি স্তম্ভ (পিলার) নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকরের আমলে সুরমার উপর এই সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অজ্ঞাত কারণে প্রকল্পটি এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়।

২০১০ সালে এই সেতুটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি নতুন সংশোধিত প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। ওই আবেদনের পর আবার নতুন করে সেতু নির্মানে ২০২০ সালে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সওজের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এক নেকে) ১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা সেতুর পুনঃনির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর নেভিগেশন, ভূমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সসড়ক সহ কয়েক দফায় প্রকল্প অনুমোদন করে ১শ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি যোগাযোগের উপযোগী করে তোলা হয়।

সুরমা ব্রিজ উদ্বোধন নিয়ে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৯ অক্টোবরে ভার্চ্যুয়ালি দেশে শতাধিক ব্রিজ উদ্বোধন করবেন। সেই তালিকায় রয়েছে আমাদের বহুল প্রতিক্ষীত ছাতকের সুরমা ব্রিজসহ আরো ৯টি ব্রিজ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক উন্নয়নে বদ্ধ পরিকর।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, অসম্পূর্ণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে। ছাতকের সুরমা ব্রিজসহ ছাতক দোয়ারা বাজার উপজেলায় ছোটবড় মিলিয়ে ৯টা ব্রিজ এক সাথে উদ্বোধন হবে। বিশেষ করে সুরমা ব্রিজ উদ্বোধনে দুই উপজেলা আরো উন্নত হবে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/শংকর দত্ত/এসএম

সুনামগঞ্জ,মানুষ,ভোগান্তি,সুরমা সেতু,উদ্বোধন

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close