• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

বৃদ্ধা মা আর ছেলেকে দেখা হলো না গাওসুলের

প্রকাশ:  ১২ জুন ২০২২, ১৫:৩৪ | আপডেট : ১২ জুন ২০২২, ১৫:৪৮
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি

বার্ন ইউনিট থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে বৃদ্ধা মা আর ৬ মাসের ছেলেকে দেখার বড় সাধ ছিল চট্টগ্রামের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিদগ্ধের শিকার ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের (২৪)। সে সাধ তার মিটল না। ৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অবশেষে অপূরণীয় ইচ্ছে নিয়ে মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গন হলো গাওসুলের।

শনিবার (১১ জুন) দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

গাওসুল আজম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের আজগার আলীর একমাত্র ছেলে। বৃদ্ধা বাবা মা ছাড়াও তার ঘরে ছিল স্ত্রী ও ৬ মাসের শিশু ছেলে। পরিবারের শেষ আশ্রয় হারিয়ে ফেলায় গাওসুলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

শনিবার ভোর রাতে মৃত্যু হলেও কখন গওসুল আজমের মরদেহ মনিরামপুরে নিজ বাড়িতে পৌঁছাবে তা নিয়ে শঙ্কিত তার পরিবার। কখন বৃদ্ধা মা শেষ বারের মত ছেলের মুখ দেখবেন তা বলতে পারছেন না স্বজনরা।

গাওসুল আজমের ভগ্নিপতি বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, শনিবার দুপুরে চিকিৎসক একবার কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস (লাইফ সাপোর্ট) খুলে দেন। কিছু সময় থাকার পর আবার তার কষ্ট বেড়ে যায়। তখন চিকিৎসক এসে লাইফ সাপোর্ট পরিয়ে দেন। এরপর রাত ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে আমাকে ডেকে দেন হাসপাতালের লোকজন। যেয়ে দেখি আমার ভাই আর নেই।

তিনি আরও বলেন, ভোর রাতে আমার ভাই মারা গেছে। এখন দুপুর হয়েছে। এখনো তার লাশ মর্গে পড়ে আছে। চিকিৎসক আসছেন না। এখান থেকে শেষ কাজ সেরে গাওসুলের মরদেহ নেওয়া হবে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর ঢাকার সিদ্দিক বাজারে। সেখানে প্রথম জানাজা হয়ে কখন আনুষ্ঠানিকতা শেষে হবে। কখন আমরা তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরব তা বলতে পারছি না। যা দেখতে পাচ্ছি তাতে আজ রোববার গাওসুলের মরদেহ বাড়ি নিয়ে ফিরতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। এভাবে চললে হয়তো বাড়ি পৌঁছাতে সোমবার সকাল লেগে যাবে। দ্রুত গাওসুলে মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন তার পরিবার।

মিজানুর রহমান বলেন, একমাত্র ছেলে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর এক নজর ছেলেকে দেখতে ব্যাকুল ছিলেন তার মা আসিয়া বেগম। অনেক দূরে হওয়ায় আমরা মাকে ঢাকায় আনতে পারিনি। এখন ছেলের মৃত্যুর কথা শুনে বারাবর মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।

এ বিজিবি সদস্য বলেন, গত ৪ জুন রাতে অগ্নিদগ্ধ গাওসুলকে ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে আনা হয়। শরীরের ৭০ ভাগ দগ্ধ হওয়ায় সেখানে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা চলছিল তার। শুরু থেকে আমি ভাইয়ের সাথে হাসপাতালে ছিলাম। হাসপাতালে মোট পাঁচ বার কথা বলতে পেরেছেন তিনি। তাও স্পষ্ট নয়। গত ১০ জুন দুপুরে আমার সাথে শেষ কথা হয়। প্রথমে বাবা আজগার আলীর সাথে কথা বলতে চান তিনি। বাবার সাথে কথা শেষ হলে আমার কাছে বৃদ্ধা মা আসিয়া বেগম ও ৬ মাসের শিশু ছেলে সিয়াম কেমন আছেন তা জানতে চান গাওসুল। হাসপাতাল থেকে ফিরে তাদের দেখার খুব ইচ্ছে ছিল তার।

এদিকে গ্রামে জানাজা শেষে দেশের এই বীর সন্তানকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের জন্য গাওসুলের বাড়িতে চলছে কবর খোঁড়াসহ সব প্রস্তুতি।

মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রনব কুমার রোববার (১২ জুন) দুপুরে বলেন, ঢাকা সদর দপ্তরে কথা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে গাওসুলের মরদেহ সেখানে পৌঁছালে প্রথম জানাজা হবে। এরপর আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ খুলনা বিভাগীয় দপ্তরে পৌঁছাবে। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকতা সেরে গাওসুলের মরদেহ বাড়িতে আসবে।

তিনি আরও বলেন, আমাকে দল নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আমরা গাওসুলের মরদেহ গ্রহনসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য প্রস্তুত আছি।

৫ বছর আগে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন মনিরামপুরের গাওসুল আজম (২৪)। তার বর্তমানে কর্মস্থল ছিল বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ। ছয়মাসের প্রেষণে (ডেপুটেশন) পাঁচ মাস আগে তিনি যোগ দেন চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার ষ্টেশনে।

গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহকর্মীদের সাথে সর্ব প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছান গাওসুল আজম। সেখানে তার গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে সহকর্মীদের মৃত্যু ঘটলেও প্রাণে বেঁচে যান গাওসুল। জীবন রক্ষা পেলেও ৭০ ভাগ অগ্নিদগ্ধ শরীর নিয়ে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন এ ফায়ারম্যান। সেখানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এনজে

বৃদ্ধা মা,গাওসুলের,ছেলেকে,দেখা হলো না

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close