• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

লিবিয়ায় মাফিয়ার হাতে বন্দি ছেলেকে যেভাবে উদ্ধার করলেন মা

প্রকাশ:  ১২ এপ্রিল ২০২২, ১২:০৮
অনলাইন ডেস্ক

অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দি থাকা ছেলেকে উদ্ধার করে অবশেষে দেশে ফিরেছেন মা শাহীনুর বেগম (৪৫)। একইসঙ্গে সঙ্গে মাফিয়াদের কাছে আটকে থাকা আরও প্রায় ২৫০ বাঙালিকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গত ৯ জানুয়ারি ছেলেকে উদ্ধারে লিবিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন শাহীনুর বেগম। অবশেষে নানা নাটকীয়তা শেষে ২১ মার্চ মা শাহীনুর ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরেন।

শাহীনুর বেগমের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে। তিনি লিবিয়া প্রবাসী আবুল খায়েরের স্ত্রী।

শাহিনুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর মা-ছেলেকে দেখতে ভিড় জমিয়েছেন এলাকাবাসী।

শাহিনুর বেগম ও তার পুত্র ইয়াকুব হোসাইনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের দুঃসাহসী অভিযানের কাহিনী।

পরিবারে সচ্ছলতা আনতে ২০১৯ সালে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কুমিল্লার দেবীদ্বারে ইয়াকুব হাসান। সেখানে উচ্চ আয়ের আশায় হবিগঞ্জের এক দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন ইয়াকুব। কিন্তু ইতালি যাওয়ার পথে ল্যাম্ব দোসা দ্বীপে মাফিয়াদের হাতে আটক হন ইয়াকুবসহ অন্তত ১৫০ বংলাদেশি।

দীর্ঘ ছয় মাস ছেলের খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন মা শাহীনুর বেগম (৪৫)। ছেলেকে ফিরে পেতে পুনরায় দালাল চক্রের মাধ্যমে চার দফায় প্রায় ২০ লাখ টাকা দেন মাফিয়াদের।

এরপরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে লিবিয়া প্রবাসী স্বামীর সহযোগিতায় পাসপোর্ট ও ভিসা করে ছেলেকে উদ্ধার করতে লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শাহীনুর।

এ বিষয়ে শাহীনুর বেগম বলেন, লিবিয়ায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে ব্যাঙ্গাজি শহরে অবস্থান করি। পরে পর্যায়ক্রমে প্রথমে বাংলা ভাষা জানেন এমন কয়েকজনকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে সব খুলে বলি। তারা আমাকে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। দূতাবাস ও আইওএমের কর্মকর্তারা সব শুনে আমাকে সাহায্য করেন। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কর্মকর্তারা লিবিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াকুবকে উদ্ধার করেন। গত ২১ মার্চ ছেলেকে নিয়ে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে ফেরেন।

ইয়াকুব জানান, কয়েকমাস চেষ্টা করার পর আমাদের দেখাশোনা করত- এমন একজনের কাছ থেকে একটি মোবাইল চেয়ে নিতে সক্ষম হই। তখন বাবাকে কল দিয়ে বলি, মাফিয়ারা আমাকে আটকে রেখেছে। আমার জায়গার নাম বলি এবং কোনো দালালকে টাকা না দিয়ে অন্য কোনো পদ্ধতিতে আমাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার অনুরোধ করি। মাত্র ১৭ সেকেন্ড কথা বলতে পেরেছি।

তিনি বলেন, মাফিয়ারা আমাকে আটক করে মোবাইল ও টাকা-পয়সা সব রেখে দেয়। এ সময় সেখানে আমাকেসহ প্রায় ৩০০ জনকে মাটির নিচে একটি ছোট অন্ধকার রুমে রাখা হয়। চোখের সামনে কত মানুষ একটু খাবারের জন্য হাহাকার করেছে। কত মানুষকে অসুস্থ হয়ে মরতে দেখেছি । বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুণেছি। ঠিক মতো খাবার দিত না। মাফিয়াদের কাছে অনেক আগে আটক হওয়া সাতজন বাঙালি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করত। তারা আমাদের অনেক মারধর করত। কারণ মাফিয়ারা বলেছিল আমাদের ঠিক মতো শাসন করতে পারলে তাদের ছেড়ে দেবে। তাই তারা কথায় কথায় মারত। মারধরের ক্ষত চিহ্ন ও পোকামাকড়ের কামড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরে। ৩০০ জনের জন্য ৩০০ রুটি দিলে সেই ৭ জন বাঙালি প্রায় ৩০-৪০টি রুটি রেখে দিত। বাকি রুটি আমরা ভাগ করে খেতাম। মাফিয়ারা বাঙালি দালালের মাধ্যমে জিম্মি করার বিষয়টি সবার পরিবারকে জানায়। ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে আমার পরিবার থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েও আমাকে ছাড়ত না। তখন শত চেষ্টা করে কারও সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। বসে বসে মা-বাবার কথা মনে করে কান্না করতাম।

ছেলেকে উদ্ধারে মায়ের এমন সাহসী ভূমিকা কুমিল্লাজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

এ খবরে উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের বাড়িতে মা-ছেলেকে দেখতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।

পূর্বপশ্চিম/এনএন

লিবিয়া

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close