• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

প্রধানমন্ত্রীর উপহারে স্বপ্ন বুনছে ৭০ নৃ-গোষ্ঠী পরিবার

প্রকাশ:  ১৫ মার্চ ২০২২, ১৪:২৯
নওগাঁ প্রতিনিধি
পদ্মপুকুর আদিবাসী পল্লী

বদলে যাচ্ছে নওগাঁর বর্ষাইল ইউনিয়নের পদ্মপুকুর আদিবাসী পল্লী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জমিসহ পাঁকা ঘর প্রদান প্রকল্পের আওতার ঘরে বসবাস করার স্বপ্ন দেখছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ৭০টি ছিন্নমূল পরিবার। স্বপ্নের ঘরগুলোর মাধ্যমে ছিন্নমূল এই পল্লীর মানুষদের জীবনমান পাল্টে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি ছিমছাম সমন্বিত পরিচ্ছন্ন আদিবাসী পল্লী।

সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন কয়েক লাখ মানুষের জন্য ২শতাংশ খাস জমির উপর সেমি পাঁকা ঘর নির্মাণ করার প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেই প্রকল্পের ৩য় ধাপের আওতায় নওগাঁর পদ্মপুকুরে বসবাসরত উরাও ও ভুইপাল গোত্রের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ৭০টি ছিন্নমূল আদিবাসী পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক সমন্বিত আদিবাসী পল্লী। সমাজের উচু শ্রেণির মানুষের বাড়িতে নিম্ম শ্রেণির কাজ ও মাঠে-ঘাঠে জমিতে দিনমজুরের কাজ করে চলে এই পল্লীর বাসিন্দাদের জীবিকা। দিনশেষে নিজস্ব জমি ও ঘর বিহীন এই মানুষদের কেউ কেউ কুড়ে ঘরে, কেউবা টিনের আবার কেউবা মাটির জোড়াতালি দেওয়া ঘরে বছরের পর বছর গাদাগাদি করে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছে। এমনকি সমাজে পিছিয়ে পড়া এই মানুষদের মৃতদেহ সৎকার করার জন্যও নেই কোনো নিজস্ব শশ্মানঘাট।

এমন জীবনমান পরিবর্তন করে সকল সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি আধুনিক মানের সমন্বিত পল্লী নির্মাণের ইতিমধ্যই পদ্মপুকুর আদিবাসী এলাকায় ১একর ৩৫শতাংশ জমি মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করে জেলা প্রশাসন ঘর নির্মাণের প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন করেছে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর প্রদান প্রকল্পের ৩য় ধাপের আওতায় ৬০টি ও সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে খরচ ধরা হয়েছে ২লাখ ৫৯হাজার ৫শত টাকা। এতে করে গৃহহীন, ভূমিহীন ও ছিন্নমূল এই সব আদিবাসীদের জীবনমান পাল্টে যাবে। শুধু ঘরই নয় তাদের জীবনমান পরিবর্তন করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বপ্নের পাঁকা ঘরে বসবাস করে এই মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াবে এবং জীবনমান পাল্টে নিবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পল্লীর বাসিন্দা দেবীচরন, ফুলকুমারীসহ অনেকেই বলেন, তারা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করেনি যে নিজস্ব জমিসহ ইটের পাঁকা বাড়ির মালিক হবে। পরিবারসহ ইটের বাড়িতে ঘুমাতে পারবেন। কুড়ে ঘরে বসবাস করেই তাদের জীবন শেষ হলো। প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাঁকা ঘর পাওয়ায় এই পল্লীর সবাই খুব আনন্দিত।

আরেক বাসিন্দা সুব্রত কুমার রাজু বলেন, আমরা ছিন্নমূল মানুষ। আমিসহ এই পল্লীর অনেকেই খুব কষ্ট করে শিক্ষিত হয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের কপালে কোন চাকরি কিংবা কর্ম মিলেনি। তাই ঘরের পাশাপাশি যদি আমাদের মতো মানুষগুলো জন্য সরকার কোন কর্মের ব্যবস্থা করতো তাহলে আমরাও সমাজের মূল ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারতাম।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে কিছুই বাদ পড়েনি। সমাজের এই সব পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠিদের বাদ রেখে দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন কখনই সম্ভব নয়। তাই এই পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর জীবনমান পাল্টে সমাজের মূল-স্রোতে যুক্ত করতেই সরকার প্রধানের নির্দেশে এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক মানের সমন্বিত একটি আদিবাসী পল্লী। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় এই মানুষগুলোর জন্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় জেলার ১১টি উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ১০৫৬টি ও ২য় পর্যায়ে ৫০২টি মোট ১৫৫৮টি গৃহ ইতিমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর ৩য় পর্যায়ে ৫৭০টি গৃহ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এই পল্লীর বাসিন্দাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শুধু ঘরই নয় এই সব মানুষদের জন্য বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। আমি আশাবাদি সরকারের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই মানুষরা সমাজের মূল ধারায় খুব সহজেই নিজেদের যুক্ত করে নিতে পারবে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এআরআর/জেএস

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী,প্রধানমন্ত্রী

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close