• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে খুলনায় বাড়ল রড-সিমেন্টের দাম

প্রকাশ:  ১২ মার্চ ২০২২, ১৫:৪২
খুলনা প্রতিনিধি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে এবার খুলনায় বাড়ানো হয়েছে রডের দাম। থেমে নেই সিমেন্টের মূল্যও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় বেড়েছে ২০ টাকা। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এ দুটি নির্মাণ সামগ্রীর দাম। ফলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে।

নগরীর একাধিক ব্যবসায়ীরা জানায়, গ্রেড ভিত্তিতে প্রতিকেজি রড ৮৯ টাকা থেকে ৯১ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা গত একসপ্তাহ আগে প্রতিকেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ এবং বিলেটের দাম বৃদ্ধি পাওয়াকে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

ডাকবাংলা ফেরীঘাট মোড়ের আলী স্টীল কর্পোরেশনের ম্যানেজার মো: শহিদ বলেন, গত দেড়মাস ধরে রডের দাম ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন কোম্পানিগুলোর মার্কেটিং অফিসাররা এসে দামবৃদ্ধির শুনান দেন। গত সপ্তাহে যে রড তিনি ৮৪ টাকায় বিক্রি করেছেন আজ তা ৮৯ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দামবৃদ্ধির কারণ বলতে তিনি আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করেছেন।

টুটপাড়া কবরখানা এলাকার আতিক ষ্টীল কর্পোরেশনের মালিক মো: রফিক জানান, এ মাসের শুরুতে রড ও সিমেন্টের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল ছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাত শুরুর পর থেকে এ দু’টি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সর্বকালের সর্বোচ্চ দাম চলছে বর্তমানে। রড ও সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেনে বহি:বিশ্বে এ শিল্পের কাঁচামালের সংকটের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে এর দাম। তবে দাম আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

জুয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক নেয়ামত হোসেন জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান উপকরণ ক্লিঙ্কারের দাম বেড়ে গেছে। সেজন্য কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়েছে। গত একসপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিবস্তায় ২০ টাকা করে বেড়েছে। তিনি প্রতিবস্তা সিমেন্ট বর্তমানে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন।

রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএস খুলনার মার্কেটিং ম্যানেজার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, দেড়মাস ধরে রডের দাম বাড়ছে। রড নির্মাণের প্রধান উপকরণ হচ্ছে স্ক্র্যাপ ও বিলেট। এগুলো মূলত ইউরোপ থেকে আসে। বহি:বিশ্বে এ উপকরণটির দাম প্রচুর বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন তাদের তিন হাজার মেট্রিকটন রডের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে কতটা উৎপাদন হচ্ছে তা তিনি জানেন না। অস্থির হয়ে আছে রডের বাজার। তবে বেশি দিন এ বাজার স্থায়ী থাকবে না। গত দু’দিন তাদের ডিলাররা ডিও বন্ধ রেখেছে বলে তিনি জানান।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার মনিরুল ইসলাম বাবু বলেন, তিনি নগরীর বয়রা বাজার এলাকার একটি ড্রেন নির্মাণের কাজ করছিলেন। গত কয়েকদিন সেখানে কাজও করেছেন। রড ও সিমেন্টের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির কারণে সেখানকার কাজ তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। এত উচ্চমূল্যে রড ও সিমেন্ট কিনে কাজ করতে গেলে তার অনেক লস হবে বলেও দাবী করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে রড ও সিমেন্টের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়েছে মাত্র ১৪ দিন। এর আগের উৎপাদিত রডগুলো কোথায় গেল। তিনি সরকারকে এ শিল্পের প্রতি নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। না হলে উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো থমকে যাবে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনার আবাসন প্রকল্পের এক মালিক বলেন, রড ও সিমেন্টের বাজার অস্থিরতার কারণে তাদের কর্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কারণ ছাড়াই নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ানো হয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ পণ্য দু’টির দাম বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

সর্বশেষ কোম্পানিগুলোতে অভিযান পরিচালনা করলে দাম বাড়ানোর ব্যাপারটি পরিস্কার হয়ে যাবে বলেও দাবি করেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএনএস/জেএস

রাশিয়া-ইউক্রেন,খুলনা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close