• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

স্যালাইন পাইপে পড়া ফোঁটা ফোঁটা তেলে ভাজা হচ্ছে পরোটা

প্রকাশ:  ১০ মার্চ ২০২২, ২০:৫২
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতিতে বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। দিশেহারা নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে রয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় এ দ্রব্য। এ পরিস্থিতিতে তেল সাশ্রয়ের জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের এক ব্যবসায়ী আবিষ্কার করেছেন অভিনব কৌশল।

মাথার ওপর বাঁশে খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় ঝুলছে সয়াবিন তেলের বোতল। তেলের বোতলের সঙ্গে যুক্ত করেছেন স্যলাইন পাইপ। তার থেকে পড়া ফোঁটা ফোঁটা তেলে ভাজা হচ্ছে পরোটা।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকালের দিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর বাজারে ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের হোটেলে এ দৃশ্য দেখা গেল।

সামান্য সেই তেলেই ভাজা হচ্ছে মচমচে পরোটা। বাজারে তেলের দাম চড়া, তাই এমন কৌশল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী হামিদ।

এ ঘটনায় অবাক হয়ে এমন দৃশ্য দেখতে হোটেলটিতে ভিড়ও জমাচ্ছেন স্থানীয়রা।

হোটেল ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ছোট খাবার হোটেল পরিচালনা করেন। প্রতিদিন সেখানে পরোটা, ভাতসহ নানার রকম খাবার পাওয়া যায়।

আব্দুল হামিদ বলেন, আমার এই ছোট একটি খাবার হোটেল। এই হোটেলটি দিয়েই চলে আমার সংসার। কিন্তু হঠাৎ করে তেলের দাম বেড়ে প্রায় আগুন। এদিকে গ্রামের মানুষ বেশি দাম দিয়ে পরোটা-ভাজি খেতে চায় না। যে কারণে বোতল ঝুলিয়ে স্যালাইনের পাইপ লাগিয়ে ফোঁটা ফোঁটা তেলে পরোটা ভাজার এমন পদ্ধতি করেছি। যেন তেল সাশ্রয়ের কারণে পরোটা আগের দামেই বিক্রি করা যায় আর বিক্রিও না কমে।

তিনি বলেন, এভাবে যদি জিনিসের দাম বাড়তে থাকে, তবে হয়তো এক সময় আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ গ্রামের মানুষ চড়া দামে কোনো কিছু কিনতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন আমাদের হোটেলে ৫০০ পরোটা ভাজা হয়। সেসব পরোটা ভাজতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লিটার তেল লাগে। এখন ফোঁটায় ফোঁটায় তেল দেওয়ার কারণে এক লিটার তেল কম যাচ্ছে। এতে তেল সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে পরোটা আগের দামেই বিক্রি করতে পারছি। বিক্রিও কমেনি।

আব্দুল হামিদের স্ত্রী মনিরা বেগম জানান, হঠাৎ করে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের হোটেলে দু’দিন পরোটা ভাজা বন্ধ ছিল। পরে কীভাবে তেল সাশ্রয় করে পরোটা ভাজা যায় সে ভাবনা থেকে বোতল ঝুলিয়ে ফোঁটা ফোঁটা তেল দিয়ে পরোটা ভাজা শুরু করেন তার স্বামী আব্দুল হামিদ।

সকালে হোটেলটিতে নাস্তা খেতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই এই হোটেলটিতে নাস্তা খাই। হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ায় অনেক জায়গায় পরোটা-ভাজির দাম বেড়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ফোঁটা ফোঁটা তেলে পরোটা ভাজার এই কৌশলটা বের করেন হামিদ চাচা। এতে তার হোটেলে সাশ্রয় হচ্ছে তেল। ফলে পরোটার দাম আগের মতোই রাখতে পারছেন তিনি। তাতে আমাদেরও উপকার হয়েছে, বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শেখ সাদি বলেন, তেলের সংকট সাময়িক তেলের সরবরাহ কম হলেও কিছু দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত তদারকি করছি।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করছে। সরকারের দেওয়া নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি কেউ সয়াবিন তেল বিক্রি করলে তার নামে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তেলের অপচয় রোধে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

পূর্বপশ্চিমবিডি/জেএস

ঠাকুরগাঁও

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close