• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

পুলিশ আতঙ্কে পুরুষশূন্য ছয় গ্রাম, খাবারের কষ্টে ৫০০ পরিবার

প্রকাশ:  ০১ মার্চ ২০২২, ১৩:৫৮
ঠাকুরগাঁও  প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৪নং রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থীর ভোটের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ভোট পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪৫০ জনের নামে গত ২৭ ডিসেম্বর রুহিয়া থানায় মামলা করেন প্রিজাইডিং অফিসার তৌকির আহম্মেদ। এতে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে আসাননগরসহ ছয় গ্রাম। এখন ওই পরিবারগুলোতে খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

এ মামলায় গতকাল পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিকে সহিংসতার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে এলাকায় গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। মঙ্গলবার (১ মার্চ) সকালে গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাটে তেমন মানুষের জনসমাগম নেই। ঘর বাড়িতে শুধু রয়েছে নারী ও শিশুরা। এলাকার পুরুষেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুলিশের ভয়ে। বাড়িতে নারী আর শিশুরা অজানা আতঙ্কে সময় পার করছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসানগর কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলে সদস্য পদে মাসুদ রানা তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহ আলমের চেয়ে ১০২ ভোট বেশি পান। কিন্তু ওই ফল প্রত্যাখ্যান করেন শাহ আলমের কর্মী-সমর্থকেরা। পরে তারা একত্রিত হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যালটবাক্স ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন ও কেন্দ্রে হামলা চালান। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে। তাতেও হামলাকারীরা নিবৃত্ত না হলে আত্মরক্ষা করতে পুলিশ হামলাকারীদের লক্ষ্য করে ২০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে হামিদুর রহমান (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। আহত হন আবু কালাম (৩২) নামের আরেক ব্যক্তি।

আসানগর গ্রামের বাসিন্দা আয়েশ জানান, ভোটের দিন মারামারি ঘটনায় আমার বাবাসহ গ্রামের অনেক মানুষের নামে মামলা করেছে পুলিশ। ফলে গ্রামে আর কোনো পুরুষ মানুষ নেই। শুধু মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন ছাড়া গ্রামের সব পুরুষ আত্মগোপনে গেছেন। বর্তমানে আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি।

একই গ্রামের মরিয়ম বেগম জানান, মারামারির সময় আমার স্বামী বাড়িতেই ছিল না । তারপরও আমার স্বামীর নামে মামলা হয়েছে। আজ দুই মাস ধরে আমার স্বামী বাড়িতে নাই। ঘরে খাবার নাই। ১০ মাসের ছেলেটাকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না। অন্যের বাড়িতে থেকে খাবার চেয়ে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছি। স্কুল শিক্ষার্থী তৃষা বলেন, আমার বাবা একজন দিনমুজুর। সারাদিন মাঠে কাজ করে রাতে বাড়িতে আসেন। আমার নির্দোষ বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমরা তিন বোন পুলিশের পা ধরে বলেছি, আমার বাবা নির্দোষ। কিন্তু পুলিশ আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। একদিন কাজ না করলে আমাদের চুলায় আগুল জ্বলে না। আজ ১১দিন খুব কষ্টে আছি আমরা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তৃষা।

রুহিয়া থানার ওসি তদন্ত শহিদুর রহমান বলেন, রাজাগাঁও ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র দক্ষিণ আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি কাজে বাধা, প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং এবং পুলিশের উপর লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করার অভিযোগে প্রিজাইডিং অফিসার তৌকির আহম্মেদ বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।

-আরএইচ/এনএন

ঠাকুরগাঁও,পুলিশ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close