• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

৭ মাস ধরে ৪ পরিবারকে একঘর করে রাখার অভিযোগ

প্রকাশ:  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:১৪
নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর রাণীনগরে জমির মালিকানা বিরোধের জের ধরে চার পরিবারকে সাত মাস ধরে এক ঘরে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ইটের প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তাদের চলাচলের রাস্তা। এঘটনার সুষ্ঠ প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেও গত তিন মাসে কোন প্রতিকার মেলেনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর।

বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানানোর অপরাধে বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রভাবশালীরা ভুক্তভোগী রমজান ও কালামকে বেদম মারপিট করে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় রমজানকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা। রমজানের অবস্থা আরো গুরুত্বর হলে রোববার তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, বড়খোল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে শামসুর দেওয়ান পরিবারের জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গ্রামের মাতবর প্রধান এবং ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন জায়গা ছেড়ে দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে পার্শ্বে খাস জমিতে বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব নাকচ করার কারণে গত সাত মাস আগে গ্রামের মাতবর আব্দুল করিম, রিয়াজুল ইসলাম, বেলাল ও প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনসহ কয়েকজন মিলে ভুক্তভোগী শামসুর দেওয়ানের পরিবারের সদস্য মোমেনা বিবির দোকান ঘর ভেঙ্গে দেয়। এরপর তারা শামসুর দেওয়ান, উজ্জ্বল দেওয়ান, রমজান দেওয়ান এবং মোমেনা বিবিসহ চার পরিবারকে এক ঘর করে রাখে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাতবর রিয়াজ দেওয়ান নিজে এসে শামসুর দেওয়ানসহ চার পরিবারের লোকজনকে এক ঘরে করে রাখার বিষয়টি জানায়। এছাড়া সমাজের কোন লোকজন ওই চার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে, শামসুর দেওয়ানের ভ্যান গাড়ীতে যাতায়াত করতে, দোকান থেকে কোন জিনিস ক্রয় করতে এবং মসজিদে নামাজ পরতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়। নির্দেশনা যে ভঙ্গ করবে তার এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলেও তারা ঘোষণা দেয়। এমন নির্দেশনার পর থেকে গ্রামের কোন লোকজন তাদের সাথে কথা বলেনা এবং দোকান থেকে কোন জিনিস ও ওষুধপত্র বিক্রি করেনা এবং ভুক্তভোগীদের ভ্যান গাড়ীতে করেও কেউ যাতায়াত করেনা।

এছাড়াও বিদ্যালয়ের জায়গা দাবি করে শামসুর দেওয়ানসহ চার পরিবারের লোকজনের চলা-চলের রাস্তায় ইটের প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দেয়। এতে করে বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে প্রাচীর টপকে। ফলে ২১জন সদস্য নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন ওই চার পরিবার।

স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম প্রামানিক জানান, স্কুলের সাথে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছে। কয়েকবার বসেও সমাধান হয়নি তাই মাতবরের নির্দেশে সমাজ থেকে তাদেরকে এক ঘরে করে রেখেছে। যে কারণে আমরাও তাদের সাথে কথা বলিনা।

এ ঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে শামসুর দেওয়ান নওগাঁ জেলা প্রসাশক বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে গত ২৭ অক্টোবর জেলা প্রসাশক রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল তদন্ত করে আসলেও গত তিন মাসে কোন সুষ্ঠু প্রতিকার মেলেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গ্রামের মাতবর আব্দুল করিম, রিয়াজ উদ্দীন এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন এক ঘরে করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শামসুর দেওয়ানরা খারাপ মানুষ। যে কারনে গ্রামের কোন লোকজন ঘৃণা করে ওদের সাথে কথা বলে না। ওরা নিজেরা নিজেদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করেছে। আমরা তাদেরকে বন্ধ করিনি।

মিরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, কেউ বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন আকন্দ বলেন একঘরে করে রাখা এবং মারপিটের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, জেলা প্রসাশকের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং উভয় পক্ষকে আমার দপ্তরে ডেকেছি। আশা করছি তারা আসবেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।


পূর্বপশ্চিম/এএন

রাণীনগর উপজেলা,নওগাঁ,চার পরিবার,একঘর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close