• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ন্যায্য দামে মিলছে না সার, দিশেহারা কৃষক

প্রকাশ:  ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৫৬
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের মনিরামপুরে বোরো মৌসুম এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। এরমধ্যে সার নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়েছে। এ অঞ্চলে কোন প্রকার সারের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সরকারি দামের তোয়াক্কা না করে সারের সংকট দেখিয়ে ইচ্ছেমত দাম নিচ্ছেন। মৌসুম শুরু না হতে বিভিন্ন প্রকার সারের দাম বাড়িয়ে কেজি প্রতি ৪ থেকে ১০ টাকা আদায় করছেন তারা। গেল দুই সপ্তাহ ধরে সারের দাম বেড়েই চলেছে। ন্যায্য দামে সার পাচ্ছেন না কৃষক। কৃষি অফিসের সঠিক তদারকি না থাকায় এমনি ঘটছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, প্রতি কেজি ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ২২ টাকা, ইউরিয়া ১৬ টাকা ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ১৫ টাকা কেজি দর নির্ধারণ করা।

সরেজমিন উপজেলার কালিবাড়ি, গোপালপুর, রাজগঞ্জ, খেদাপাড়া ও রোহিতাসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি ইউরিয়া ১৮-২২ টাকা, টিএসপি ৩০-৩২ টাকা, পটাশ ১৯-২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন দোকানে সরকারি মূল্য তালিকা ঝুলানো থাকলেও তা কাজে আসছে না।

এছাড়া সরকার নির্ধারণ না করে দিলেও আমন মৌসুমে ২৬ টাকায় বিক্রি হওয়া সালফার এবার বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। যদিও কৃষি অফিসের দাবি, সারের দাম বাড়েনি। আমরা তদারকি চালাচ্ছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের কৃষক মশিয়ার রহমান বলেন, দেড় বিঘা ইরি ধান লাগাইছি। ইউরিয়ার কেজি ১৭ টাকা, টিএসপি ৩০ টাকা ও পটাশ ২০ টাকা দরে কিনিছি।

মাহমুদকাটি গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম বলেন, সাড়ে ৫ বিঘা বোরো ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি। মনিরামপুর বাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে টিএসপি ও ৮২০ টাকা করে ইউরিয়ার ৫০ কেজির বস্তা কিনে আনিছি। এবার সারের দাম খুব।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি অফিসের যারা দায়িত্বে আছেন তারা সঠিকমত বাজার তদারকি করেন না। তারা আমাদের খবর নেননা কোন সময়।

সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে সারের এক সাব ডিলারের ঘরে সরকারি মূল্য তালিকা ঝুলছে। ওই দোকানি টিএসপির কেজি ৩০, ইউরিয়া ১৭ টাকা, পটাশ ২০ টাকা ও সালফার ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ডিলার বলেন, আমি একজন সাব ডিলার হয়েও ন্যায্য দামে সার কিনতে পারছি না। সরকারি রেটে বেচব কি করে।

তিনি বলেন, ৫০ কেজি ইউরিয়ার বস্তা আমার প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত ৭৭৫ টাকায় পৌঁছানোর কথা। কিন্তু ইউরিয়ার বস্তা আমাকে ৮২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, মনিরামপুরে ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এ মৌসুমে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। বোরো চাষের হিসেব ধরে সারের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। প্রতিবারই চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ আসে অর্ধেকেরও কম।

সূত্রটি বলছে চলতি মাসে টিএসপির বরাদ্দ এসেছে ৪২৫ মেট্রিকটন, ইউরিয়া ২ হাজার ২০০ মেট্রিকটন ও পটাশ ৫৫৩ মেট্রিকটন। সূত্রটি বলছেন, কৃষকরা জমিতে যে পরিমাণ সার ব্যবহার করেন তা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসেবে অনেক বেশি। এ জন্য চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া যায়না।

উপজেলার বাসুদেবপুর বাজারের সাব ডিলার জামাল হোসেন বলেন, এ মৌসুমে আমার ৪০০ বস্তা টিএসপির চাহিদা। পাইছি মাত্র ৭০ বস্তা। ইউরিয়ার বরাদ্দ ঠিক আছে। পটাশের কোন বরাদ্দ পাইনি।

তিনি আরো বলেন, মরক্কোর টিএসপির চাহিদা কম। এ সার ২৫ টাকা কেজি বেচতে হচ্ছে। তিউনিশিয়ার টিএসপির চাহিদা বেশি। এ সার আমাদের ১ হাজার ৫০০ টাকায় বস্তা কেনা পড়ছে। ৩২ টাকার নিচে কেজি বিক্রি করা যাচ্ছে না। ইউরিয়া ১৭ টাকা আর পটাশ ১৮ টাকা কেজি বিক্রি করছি।

রোহিতা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার ডিলার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা মাল উত্তোলন করে সঠিক দামে বিক্রি করছি। তবে আমদানিকারকদের কারসাজির কারণে সারের দাম বাড়তি। তারা বেশি দামে বাইরে সার বিক্রি করছেন।

খেদাপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে ডিলারের কাছে খোঁজ নিয়েছি। সারের দাম ঠিক আছে।তিনি বলেন, আমরা যখন ডিলারের ঘরে বসে থাকি তখন বেশি দামে বেচতে দেখি না।

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, সারের দাম বাড়েনি। আমরা তদারকি করছি। ত্রুটি পেলে জরিমানা করা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজগঞ্জ বাজারে দুই জন সার ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।


পূর্বপশ্চিম/এএন

মনিরামপুর,যশোর,সার,দাম,কৃষক

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close