• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

মালিক হয়েও যে কারণে শৈশবের ক্লাব ছাড়লেন রোনালদোর    

প্রকাশ:  ০১ মে ২০২৪, ১১:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

তিন বছর আগে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার দিয়ে ক্রুজেইরো ক্লাবটার ফুটবল বিভাগের মালিকানা কিনেছিলেন ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও। তাঁর শৈশবের ক্লাব বলে আবেগের বিনিয়োগ তো ছিলই।

কিন্তু তিন বছরে যতটা ভালোবাসা পেয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি কুড়িয়েছেন নিজ ক্লাবের সমর্থকদেরই সমালোচনা। ক্লাবে যথেষ্ট বিনিয়োগ না করা নিয়ে তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন ক্রুজেইরোর সমর্থকেরা।

এই ক্ষোভ-সমালোচনা সইতে না পারা তো আছেই, বিনিয়োগে লাভের সুযোগ দেখাও আরেকটা কারণ হতে পারে। কারণ যাই হোক, তিন বছর পর এসে ১১ কোটি ৭০ লাখ ডলারে ক্রুজেইরোর মালিকানা বিক্রি করে দিয়েছেন রোনালদো।

ব্রাজিলের ক্লাবটির আগে স্প্যানিশ ক্লাব রেয়াল ভায়াদোলিদের ৫১ শতাংশ মালিকানাও কিনেছিলেন রোনালদো। ২০১৮ সালে কেনা সেই মালিকানার অংশও এরপর বিক্রি করে দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন তর্কসাপেক্ষে ব্রাজিলের – ফুটবল ইতিহাসেরই - সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার।

ভায়াদোলিদেও রোনালদোর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ক্লাবটির সমর্থকদের। তাঁর মালিকানায় দুবার স্প্যানিশ লা লিগা থেকে অবনমন দেখা ভায়াদোলিদের মূল একাদশে খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে রোনালদো উদাসীন বলে অভিযোগ তাদের।

তা ক্রুজেইরোর মালিকানা বিক্রি করে দেওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে রোনালদো সমর্থকদের ক্ষোভ নিয়ে বলেছেন, ‘হয়তো কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে একটু বাড়িয়েই বলেছে, তবে সেটা এখন আর আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। এটাও জানি যে, ক্রুজেইরোকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবার পরিচিত করে তোলায় আমি এবং আমার সঙ্গী-সাথীদের প্রতি কৃতজ্ঞ অনেক সমর্থক। আমার লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেছে। শুরু থেকে এটাই তো আমার লক্ষ্য ছিল যে ক্রুজেইরোকে পরিচিত মঞ্চে ফিরিয়ে এনে সঠিক সময় দেখে সঠিক ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া।’

ভায়াদোলিদের মালিকানা কীভাবে বা কখন ছাড়বেন তা নির্দিষ্ট করে বলেননি রোনালদো, শুধু এতটুকুই বলেছেন, ‘এরপর ভায়াদোলিদের পালা। তারপর (দুই ক্লাব বিক্রি করার পর) আমি একটু বিরতি নেব।’

রোনালদো ক্রুজেইরোর মালিকানা যেভাবে কিনেছেন, সে প্রক্রিয়াকে ব্রাজিলে ‘এসএএফ’ বলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ক্লাবের ফুটবল বিভাগের যে অংশগুলো লাভজনক, সেগুলোকে ‘পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি’তে রূপান্তর করে ক্লাবের অন্য সব দিক থেকে আলাদা করে নেওয়া হয়। এতে ওই লাভজনক অংশের মালিকানা হস্তান্তরের সুযোগ থাকে। ক্রুজেইরোর পাশাপাশি ব্রাজিলের আরও অনেক ক্লাব – আতলেতিকো মিনেইরো, বাহিয়া, বোতাফোগো, কুইয়াবা, ফোর্তালেজা, ভাস্কো দা গামা…এই ক্লাবগুলোও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসএএফ পদ্ধতিতে গেছে। এর মধ্যে বাহিয়ার ফুটবল অংশের মালিকানা কিনে নিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি গ্রুপ।

ক্রুজেইরো গত দুই দশকে ট্রফি জিতলেও তাদের দেনার পরিমাণ বাড়ছিল। একটা সময় শঙ্কা ছিল, প্রায় ১০০ কোটি ব্রাজিলিয়ান রিয়াল (২০ কোটি ডলার) দেনা নিয়ে ক্রুজেইরো হয়তো দেউলিয়াই হয়ে যাবে। সে সময়ে ক্লাবটির মালিকানা কিনে নেন রোনালদো। ব্রাজিল কিংবদন্তি সেটিই মনে করিয়ে দিয়েছেন ক্লাব বিক্রির পর, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় ক্রুজেইরো আইসিইউতে ছিল। আমি দেনা অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছি, আয়ের পরিমাণ পাঁচগুণ বেড়েছে। এখন ক্রুজেইরোকে রেখে যাচ্ছি হাসপাতালের আরামদায়ক কেবিনে।’

ক্রুজেইরোর নতুন মালিক পেদ্রো ফিগেইরেদো ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় সুপারমার্কেট চেইনগুলোর একটির মালিক, বিলিওনিয়ার – এবং ক্রুজেইরোর পাঁড় সমর্থক। তিনি অবশ্য বলেছেন, ক্রুজেইরোর যে দেনা, সেটি পরিশোধ করতে তাঁর দশ বছর লেগে যাবে।

তবে রোনালদো ক্রুজেইরো ছাড়ছেন, এতে ক্লাবটার সমর্থকেরা খুশি। তাঁর ক্লাব বিক্রির খবরের দিনে অনেক ক্রুজেইরোর সমর্থককে উল্লাস করতে দেখা গেছে, তাঁদের হাতে ‘বিদায় রোনালদো’ লেখা ব্যানার ছিল বলে জানাচ্ছে ইএসপিএন।

ক্লাব,মালিক,রোনালদো
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close