• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

এখনো তালা ঝুলছে বিএনপি অফিসে

প্রকাশ:  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৪০
নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা দুই মাস ধরে তালা ঝুলছে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকে। জেলা পর্যায়েও দলটির স্থায়ী ও অস্থায়ী কার্যালয়গুলোর বেশির ভাগই বন্ধ। আসা-যাওয়া নেই নেতা-কর্মীদের। মাত্র নয়টি জেলায় পুরোদমে অফিস খোলা আছে দলটির।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই পুলিশ কার্যালয়টি তালাবদ্ধ করে দেয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা তালা দেয়নি। বিএনপির দাবি পুলিশই তালা দিয়েছে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে সব সময়ই পুলিশের অবস্থান রয়েছে।

বিএনপি দাবি করেছে যে, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন জেলা কার্যালয়েও তালা দিতে শুরু করে পুলিশ। মহাসমাবেশের দিন পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ দুজন নিহত হন। এরপর থেকে পুলিশ দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা শুরু করে। তখন থেকেই একটার পর একটা করে সাংগঠনিক কার্যালয় বন্ধ হতে থাকে।

সেই অবস্থা এখনো পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, বিভাগীয় শহরগুলোর মহানগরে যেমন বিএনপির কার্যালয় আছে, তেমনি রয়েছে জেলা পর্যায়ের কার্যালয়। বৃহৎ জেলাগুলো সাংগঠনিকভাবে উত্তর এবং দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত। বেশ কটি জেলায় দলটির এখন আর কোনো কার্যালয়ই নেই। বাকিগুলোর মধ্যেও অনেক কার্যালয় রয়েছে- সংশ্লিষ্ট নেতার বাসা এবং ব্যক্তিগত স্থাপনাসমূহে।

যেসব স্থানে কার্যালয় আছে- সেগুলোতেও নেতা-কর্মীদের আনাগোনা কমে গেছে। বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬৫টিতেই দলীয় কার্যালয় কার্যত বন্ধ। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য হলো- দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের সক্রিয় নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে দলীয় কার্যালয় খোলা রাখার সুযোগ নেই তাদের।

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পন্ডের পরদিন গত ২৯ অক্টোবর পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কড়া পাহারা বসায়। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট কার্যালয়টির সামনে ‘ডু-নট ক্রস-ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখে। দুই দিন পর দুই পাশে বসানো হয় কাঁটাতারের ব্যারিকেড। ১৪ নভেম্বর ব্যারিকেড সরানো হয়। তবে পুলিশি পাহারা অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে দলটির কোনো নেতা-কর্মীকে কার্যালয়ের সামনে আসতে দেখা যায়নি। কার্যালয়ের কলাপসিবল ফটকে তালা ঝুলছে। বিকালে অফিস ছুটির পর বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে হঠাৎ যানজট দেখা দেয়। এই সময় অনেক পথচারী ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যান। কেউ কেউ আবার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই সময় পুলিশ সদস্যরা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীদের সরে যেতে বলেন।

বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে ফকিরাপুলের দিকে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের কার্যালয়ের নিচে পুলিশের বেশ কজন সদস্যকে দেখা যায়। আবার কার্যালয় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে হোটেল ভিক্টরির সামনের সড়কে ছিলেন পুলিশের ১৫/২০ জন সদস্য। তাঁদের কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন, কেউবা আবার বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক থেকে বিএনপির কার্যালয় হয়ে হোটেল ভিক্টরি পর্যন্ত অংশের ফুটপাত এবং সামনের রাস্তা পুরোটাই ছিল ফাঁকা। সেখানে পল্টন থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই) দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিকাল ৪টার দিকে তিনি জানান, সকাল থেকে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে কার্যালয়ে আসতে দেখো যায়নি। তবে মাঝেমধ্যে কিছু গণমাধ্যমকর্মীকে সেখানে যাওয়া-আসা করতে দেখেছেন। এই কার্যালয়কে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয়, সেটা নিশ্চিত করতেই পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ প- হয়ে যাওয়ার পর ওই দিন রাতেই ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেওয়া হয়। সেই তালা এখনো ঝুলে আছে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন বিএনপি নয়াপল্টন থেকে বিজয় শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালন করলেও কার্যালয় বন্ধই ছিল। বিএনপি কার্যালয়ে তারা নিজেরাই তালা মেরে রেখেছে বলে জানিয়েছিলেন ডিএমপি কমিশনার। কার্যালয়ের ভিতরে ধুলাবালির আস্তর জমে গেছে। প্রধান ফটকের ভিতরে কয়েকটি চেয়ার আর একটি ছোট্ট টেবিল পড়ে থাকতে দেখা যায়। চেয়ারের ওপর এবং নিচে মেঝেতে কিছু চিঠিপত্রের খাম আর বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। গত দুই মাসে সেখানে দলীয় নেতা-কর্মী দূরের কথা কোনো মানুষের পায়ের ছাপ পড়েছে বলে মনে হয়নি। ভিতরে অনেকটা ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো স্থানে দলীয় কার্যালয় খোলা হলেও কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি একবারের জন্যও খোলা হয়নি। নেতা-কর্মীরা না যাওয়ায় সেখান থেকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় না।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির কার্যালয়টি শহরের কাজির দেউড়ির নসিমন ভবনে। সেটি গত ২৮ অক্টোবর থেকেই বন্ধ রয়েছে। মাঝে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি পালনের জন্য একবার খোলা হয়েছিল। তারপর থেকে আবারও বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, গ্রেফতার এড়াতে নেতা-কর্মীরা কৌশল অবলম্বন করে দলীয় কর্মসূচিগুলো পালন করছেন। তবে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মামলা ছাড়া অহেতুক কাউকে পুলিশ হয়রানি করছে না বলে দাবি করেন।

এ ছাড়াও পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, মেহেরপুর, ফেনী, কক্সবাজার ও রাঙামাটি- এই আট জেলায় বিএনপির কার্যালয় খোলা রয়েছে। অন্য কার্যালয়গুলো প্রয়োজন অনুসারে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে মাঝেমধ্যে খোলা হয়। কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কের পাশে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়। এক কক্ষের ওই কার্যালয় গত ২৯ অক্টোবর থেকে বন্ধ রয়েছে। বিকল্প হিসেবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের ব্যক্তিগত কার্যালয় পরিস্থিতি বুঝে ব্যবহার করা হলেও গ্রেফতার আতংকে ইদানীং সেটিও বন্ধ রয়েছে। পুলিশ এবং আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ মাসে বিএনপির দেড় সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির দাবি, গত ২৮ অক্টোবরের চার থেকে পাঁচ দিন আগে থেকে গত রবিবার পর্যন্ত তাদের ২৪ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সময়ে দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১ হাজারের বেশি মামলা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি,রাজনীতি,তালা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close