• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সমঝোতা করার এখনো অনেক সময় আছে: তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশ:  ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:২৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা করার এখনো অনেক সময় আছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে ‘সোহরাওয়ার্দী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

১৪ দল নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, প্রথমত আমাদের সিদ্ধান্ত, জোটগতভাবেই আমরা নির্বাচন করবো। আর নির্বাচনে আসল সমঝোতা করার এখনো অনেক সময় আছে। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে, প্রত্যাহারের এখনো অনেক সময় আছে। সুতরাং বরাবরের মতোই আমরা একটি সমঝোতায় উপনীত হবো।

তিনি বলেন, এবার আমার দৃষ্টিতে অনেক বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ২৭ শতাংশ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বাতিলের এ হার অন্যবারের তুলনায় একটু বেশিই। আপিল করলে হয়তো অনেকে টিকে যাবে, সেটিই আশা করছি।

অনেকেই বলছেন যে আওয়ামী লীগে শরিকদের গুরুত্ব কমে গেছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সবসময়ই শরিকরা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্যই জোটগতভাবে এবারেও নির্বাচন করছি। এককভাবে নির্বাচন করার শক্তি, ক্ষমতা ও সামর্থ্য আমাদের আছে। কিন্তু শরিকদের গুরুত্ব দেওয়া হয় বিধায় জোটগতভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

শরিকদের কতোগুলো আসন দেওয়া হতে পারে? সাংবাদিকদের এমন আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেটি সমঝোতায় উপনীত হলে বলা যাবে, তার আগে বলা যাবে না। যারা নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সমঝোতা করা হবে।

জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে কোনো সমঝোতা হবে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে হাছান মাহমুদ বলেন, জাতীয় পার্টি প্রায় ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। এ জন্য জাতীয় পার্টিকে অভিনন্দন জানাই। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমরা মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করেছি। গতবার আমাদের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক্যাল (কৌশলগত) জোট ছিল, এবারো সেটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে বিএনপি মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে। আবার আওয়ামী লীগও সমাবেশ করবে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেখুন ১০ ডিসেম্বর হচ্ছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিচারবন্ধ করার মধ্যদিয়ে। দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করা হয়েছিলো। সেটি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়েই হয়েছিলো। এরপর বাংলাদেশে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে ১৯৭৭ সালে নির্বিচারে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা করার মধ্যদিয়ে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিচার ছাড়া হত্যাকাণ্ড। এমনও ঘটনা ঘটেছে, যে ব্যক্তি অভিযুক্ত, তাকে না দিয়ে নামের মিল থাকায় আরেক ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সেই ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চিৎকার করেছেন, আমি সেই ব্যক্তি না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ওপরের নির্দেশে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে, ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আর রায় হয়েছে পরে। দিজ আর ডকুমেন্টেড (এগুলো নথিভুক্ত)। জিয়াউর রহমানের এডিসি হিসেবে যিনি কাজ করতেন, তিনি নিজে বলেছেন- জিয়াউর রহমান যখন সকালের নাস্তা করতেন, তখন তিনি এ ফাইলগুলো নিয়ে যেতেন এবং জিয়াউর রহমান নাস্তা করতে করতে সেগুলোতে সই করতেন। এমন ঘটনাও আছে, জিয়াউর রহমান বিদেশ যাচ্ছেন, প্লেনের সিঁড়িতে ওঠার আগে মৃত্যু পরোয়ানায় সই করতেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। এরপরে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যেভাবে নির্বিচারে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনা সমসাময়িক বিশ্বের কোথাও ঘটেনি রাজনীতির নামে। এগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, ২০০৪ সালে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী ও দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০০ জন। সেই হামলার পর বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে গাঁজাখুরি রিপোর্ট, আর পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ তার সংসদ সদস্যদের হাস্যরস, এগুলো সব মানবাধিকার লঙ্ঘন।

হাছান মাহমুদ বলেন, আজ যে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, ড্রাইভার পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, চোরাগোপ্তা হামলা করা হচ্ছে, এগুলো কী মানুষের অধিকার লঙ্ঘন না? সুতরাং তাদের নিয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এবং যারা মানবাধিকারের ধুয়া তুলে বিভিন্ন দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালায়, আর ফিলিস্তিনে যখন নারী-শিশুদের পাখি শিকারের মতো হত্যা করা হয়, গাজায় হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিয়ে একসঙ্গে ৫০০ মানুষকে হত্যা করা হয় এবং সাধারণ মানুষের ওপর বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, তাদের কর্ণকুহরে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশে যারা মানবাধিকার বঞ্চিত হয়েছে, তাদের নিয়ে সমাবেশ করবো।

তিনি বলেন, বিএনপি কী করবে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে আগে মানুষ হত্যা করছে, যাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে দল প্রতিষ্ঠা করেছে, তারা নিজেরাই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী।

বিএনপি এখন পর্যন্ত জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যদিয়ে আসছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তাদের কর্মসূচি বলতে চোরাগোপ্তা হামলা করে যানবাহন পোড়ানো, মানুষের ওপর হামলা করা। তারা তাদের সন্ত্রাসীদের নামিয়েছে, যারা নেশাখোর তাদের দিয়েও হামলা পরিচালনা করছে। অনেক ক্ষেত্রে দিনমজুরকে বলছে, আপনি সারাদিন দিনমজুরি করে কত পাচ্ছেন, তারা বলে আটশ বা এক হাজার টাকা। তাদের দুই হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলছে, এটা মেরে আসো। এমনও করছে। এগুলো দুষ্কৃতকারীদের কাজ।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত এখন দুষ্কৃতকারী। আমরা দুষ্কৃতকারীদের দমন করার লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা তাদের নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

আওয়ামী লীগ,সময়,সমঝোতা,তথ্যমন্ত্রী
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close