• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সরকার গুলি করে শ্রমিকদের হত্যা করেছে: সাকি

প্রকাশ:  ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার গুলি করে শ্রমিকদের হত্যা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

তিনি বলেন, সরকার মনে করে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ দিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যাবে। একটা নির্বাচন করে পার করে তারা ডান্ডা পিটিয়ে দেশের মানুষকে ঠান্ডা রাখবে।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে শ্রমিক হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ, কর্মচ্যুত্যদের পুনর্বহাল, গ্রেপ্তারদের মুক্তি, গার্মেন্টস শিল্প ঘোষিত মজুরি প্রস্তাব প্রত্যাহার এবং ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা পুনঃনির্ধারণের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি)।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এ সরকার এভাবে নির্বাচন করতে পারলে, আপনি আমি কিছু বলি আর না বলি, জনগণ কিছু বলুক আর না বলুক, আজকে পশ্চিমা বিশ্ব কিছু বলবে। এ সরকার এভাবে আমার আপনার পেটে যে লাথি মারছে তা না, তারা পুরো দেশ নিয়ে বাজি ধরছে। আজকে আমেরিকা শ্রম অধিকারের নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, এ ধরনের একতরফা নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রমিকের অধিকার খর্ব হলে, তারা আমাদের রপ্তানি খাত গার্মেন্ট শিল্পের ওপর নতুন নতুন বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে। লাখ লাখ শ্রমিকরা যে শিল্প গড়ে তুলেছে, দেশপ্রেমিক উদ্যোক্তারা যে শিল্প গড়ে তুলেছেন, এ সরকার ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক বাজার ধ্বংস করছে। সরকারের এ তৎপরতাকে কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না। কারণ তারা সফল হলে এ দেশে, দেশের মানুষ, শ্রমিকরা ধ্বংস হবে। কাজেই আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা পাঁচ বছরে মজুরির দাবিতে একবার আন্দোলন করে। আইনেই বলা আছে, পাঁচ বছর পর পর মজুরি সমন্বয় করা হবে। সে কারণে আমরা দেখেছি, পাঁচ বছরে একবার আন্দোলন দানা বাঁধে।

গণতন্ত্র মঞ্চের এ নেতা বলেন, জিনিসপত্রের দাম কীভাবে করোনাকালে এবং পরবর্তী সময়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লো আমরা সবাই জানি। সরকার এ বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্যদের জন্য নানা ব্যবস্থা করেছে। অন্যদের জন্য তো ব্যবস্থার দরকার নেই। এ দেশের যারা আমলা-কামলা, রাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধার কোনো অভাব এ সরকার রাখেনি। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যতোভাবে তাদের খুশি করা যায়, যতোভাবে দুর্নীতি করা যায়, শত শত হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা যায় সব ব্যবস্থা তারা (সরকার) করেছে। শ্রমিকদের পেটে যে ভাত আসছে না, তাদের পেটে যে আগুন জ্বলছে তার ব্যবস্থা তারা (সরকার) করেনি।

তিনি বলেন, করোনা গেলো, তারপর এলো ইউক্রেন যুদ্ধ৷ জিনিসপত্রের দাম কেন বাড়ে, বললেন আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে শ্রমিক খাবে কি করে? তাদের মজুরি বাড়ান। কিন্তু মজুরি বাড়ানোর কোনো নাম নেই। তারপর ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করা হলো। টাকার দাম কমে যাওয়ায় গার্মেন্টস মালিকদের লাভ হয়েছে একলাখ কোটি টাকা। মালিকরা এ লাভ পেলেও শ্রমিকরা যে বাজারে যেতে পারছেন না, সেটার কোনো ব্যবস্থা নেই। পাঁচ বছর পর একবার মজুরি সমন্বয় হবে, সেটার জন্য বসে আছেন তারা। কবে পাঁচ বছর হবে, তারপর শ্রমিকের পেটে ভাত যাবে। এর আগে শ্রমিকদের খেতে হয় না। সে শ্রমিকরা পাঁচ বছর পর যখন রাস্তায় নামলো, তখন মালিকরা বলে, বেতন দেবে ১০ হাজার ৪০০ টাকা। এ হচ্ছে আমাদের মালিকরা। তার প্রতিবাদে শ্রমিকরা যখন রাস্তায় নামলো, এ সরকার শ্রমিকের বুকে গুলি করে তাদের হত্যা করেছে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, শ্রমিক হত্যার বিচার, ক্ষতিপূরণ দেওয়া তো দূরের কথা, বরং যারা এ আন্দোলন সংগঠিত করতে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের তারা (সরকার) গ্রেপ্তার করে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় দিয়েছে। শত শত শ্রমিককে তারা গ্রেপ্তার করেছে। এ শ্রমিকের ট্যাক্সের পয়সায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির বেতন হয়। আর শ্রমিক এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ঢুকিয়ে দিয়ে শ্রমিকদের বুকে গুলি করে। তাদের শত শত শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে। নিজেদের (সরকার) এজেন্ডা বাস্তবায়নে কারখানা ভাঙচুর করে শ্রমিকদের ওপর দায় চাপায়। তারপর তাদের গ্রেপ্তার করে। আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত না করলে, আন্দোলন দমন করা যায় না।

বিএনপির মহাসমাবেশকেও পরিকল্পিতভাবে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা দেখলাম ২৮ তারিখে বিএনপির সমাবেশে কারা পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা তৈরি করলো, আর পুরো দোষ চাপিয়ে দিল বিরোধী দলের উপরে। একইভাবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনেও আমরা দেখেছি, কীভাবে কারখানা ভাঙচুর করছে কতিপয় এজেন্টরা। তারা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের কাজে লাগাচ্ছে, আর পুরো শ্রমিকদের ওপর দোষ চাপিয়ে প্লাটুনের ওপর প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে, শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ হচ্ছে দেশের অবস্থা। এ অবস্থা চলতেই থাকবে যদি আমরা দেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারি।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

সরকার,গুলি,শ্রমিক,হত্যা,জোনায়েদ সাকি,গণসংহতি আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close