• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কি আ. লীগে কোন্দল বাড়াবেন?

প্রকাশ:  ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:১০ | আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:১২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন দলটির ৩ হাজার ৩৬২ জন নেতা। এদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র ২৯৮ জন, ফলে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনেকেই এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ফলে ভোটের লড়াইটা মূলত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ নভেম্বর মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু ইতিমধ্যেই সারা দেশের অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং এখনো অনেকে দিচ্ছেন। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য দল থেকেও তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

তবে স্বতন্ত্র এসব প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, নির্বাচনের মাঠে একই দলের একাধিক প্রার্থীর উপস্থিতি বিশৃঙ্খলা এবং দলীয় কোন্দল বাড়াতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

যদিও আওয়ামী লীগ মনে করছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার কৌশল হিসেবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শেষ বিচারে সেটি ‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ অনুষ্ঠানে তাদেরকে সাহায্য করবে।

এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সবাইকে আপাতত অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলেও প্রয়োজন হলে নির্বাচনের আগে তাদের লাগাম টানারও পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশৃঙ্খলা, ফ্রি স্টাইলে হবে না। আমরা দেখি কারা কারা চাইছেন। সেটার ওপরে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে।

তিনি বলেন, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। কাজেই এর মধ্যে আমরা এখানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, সংশোধন, অ্যাকোমোডেশন- সব কিছুই করতে পারি।

অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী

একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন এমন অন্তত ৭২ জন নেতা এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় জায়গা পাননি। তাদের অনেকে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তেমনি এলাকায় যারা নিজেদেরকে জনপ্রিয় বলে মনে করছেন, তারাও ভোটে দাঁড়াচ্ছেন।

বিগত দু’টি নির্বাচনে প্রায় একচেটিয়া বিজয় লাভ করলেও দেশে-বিদেশে সমালোচনা হওয়ায় নির্বাচনগুলো নিয়ে বেশ অস্বস্তি আছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দলটির মনোনীত প্রার্থীরা।

এবারো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করতে থাকা বিএনপি। পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য বিদেশি চাপও রয়েছে।

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ চাইছে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে। আর এ জন্য প্রয়োজনে ‘ডামি’ প্রার্থী রাখার পরামর্শ দিয়েছেন দলটির সভাপতি এবং দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ না-করতে দলের প্রার্থীদেরকে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। আর এতেই দলটির মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে শুরু করেছেন।

ইতিমধ্যেই সারা দেশের অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছেন।

বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

আর ফরিদপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হককে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ।

একইভাবে, ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ’র বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)।

এদিকে, সিলেট-৬ বিয়ানীবাজার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে।

অন্যদিকে, রংপুর-৬ আসনে আবারো নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। নৌকা না পেয়ে এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম।

প্রার্থীরা যা বলছেন

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ৯টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক প্রভাবশালী নেতা তাকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মিস্টার হক।

‘নেত্রীর কথা মতো নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ভোটে দাঁড়িয়েছি। নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ আমাকে সমর্থন দিচ্ছে। কাজেই নির্বাচনে আমি জয়ী হবো বলে আশা করছি।’

তবে কেন্দ্র থেকে না চাইলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবেন না বলেও মিস্টার হক জানান।

‘নেত্রী না চাইলে প্রার্থী হতাম না। এমন কী এখনো যদি তিনি বলেন বসে যেতে, আমি বসে যাবো। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে অতীতেও কখনো যাইনি, আগামীতেও যাবো না’, বলেন তিনি।

এদিকে, ফরিদপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। কিন্তু তিনি পাননি। দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হককে। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিস্টার আজাদ।

‘এলাকার মানুষ এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমাকে চায়। দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের মাঠকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে যাতে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। সেজন্যই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আশাকরি আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে’, বলেন তিনি।

কিন্তু দল যদি শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, তখন কি নির্বাচন থেকে সরে আসবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলের সাথে কথা বলেই প্রার্থী হয়েছি। কাজেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।

দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অতীতেও বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে সেক্ষেত্রে তাদেরকে দল থেকে চাপ প্রয়োগ করে হয় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, অথবা বিদ্রোহী প্রার্থী তকমা দিয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

কিন্তু এবারের নির্বাচনে সেটি দেখা যাচ্ছে না, বরং দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে বাকিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের অনেকেই ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহ দেওয়ায় ভোট ভাগের শঙ্কা নিয়ে তারা সরাসরি কথা বলতে চাচ্ছেন না।

চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা এম এ লতিফ। তিনি এবারো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন।

তার আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে আমরা সবাই একজোট হয়ে নির্বাচন করতাম। তবে এবার দলের সিদ্ধান্তের কারণে নতুন নতুন অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এটি এক অর্থ ভালোই। কারণ প্রার্থী যতো বেশি হবে, ভোট ততো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, ভোটারদেরও অংশগ্রহণ বাড়বে।

‘নেত্রী বলেছেন, এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে, তারাই টিকে থাকবে। গত তিন মেয়াদে আমি অনেক কাজ করেছি। কাজেই আবারও নির্বাচিত হবো বলে আশা রাখি।’

অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী এ কে আজাদকে নিয়ে চিন্তিত নন বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।

‘উনাকে আমি ডামি প্রার্থী মনে করি। উনাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু দেখছি না, বরং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে।’

বিএনপি অংশ না নিতে চাওয়ায় এবারের নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলাটা আওয়ামী লীগের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট করার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে নির্বাচন জমিয়ে তুলতে চাইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

‘আমরা চাই নির্বাচন এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং উৎসবমুখর হোক। ভোটাররা অংশগ্রহণ করুক। এটাই এখন পর্যন্ত আমাদের নির্বাচনী কৌশল। আর এ জন্যই দলের মধ্যে যারা মনোনয়ন পায়নি, তারা চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারে’, বলছিলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে, তখন কি আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে রাখতে চাইবে?

এই প্রশ্নের জবাবে মিস্টার নাছিম বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখনো সময় বাকি আছে এবং নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য একাধিক পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। সময় হলে প্রয়োজনের নিরিখে নির্বাচনী কৌশল পরিবর্তন করা হবে।’

আওয়ামী লীগের লাভ, না কি ক্ষতি?

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করার জন্য দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রাখার যে কৌশল আওয়ামী লীগ নিয়েছে, সেটিতে দলটি কতোটা লাভবান হবে?

‘এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ লাভবানই হবে। কারণ দলটির তৃণমূলের অনেক জনপ্রিয় নেতা, যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি, তারা নিজেদেরকে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবেন’, বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, তারপরও এটি একটি সাজানো নির্বাচনই হবে। কারণ বিএনপি ছাড়া নির্বাচন সত্যিকার অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে না।

অন্যদিকে, আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন অবশ্য মনে করছেন, নিজ দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সুবিধার পাশাপাশি কিছু ক্ষতির মুখেও পড়তে হতে পারে আওয়ামী লীগকে।

‘আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর জন্য নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট করার সুযোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা আসলে দলটির ছায়াপ্রার্থী।’

‘তবে আপাতদৃষ্টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নিরীহ মনে হলেও ভোটের মাঠের চিত্র ভিন্ন রকম হতে পারে। এতে তৃণমূলে দলের কোন্দল আরো বাড়বে এবং সহিংসতা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।’

তবে আওয়ামী লীগ অবশ্য তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছে না।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ঐহিত্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময়ই দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলেন, চেইন অব কমান্ড ফলো করেন। যদিও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তারপরও নেতাকর্মীরা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

তাছাড়া নির্বাচনের ফলাফল যেটাই হোক, আওয়ামী লীগ তা মেনে নিবে বলে জানানো হচ্ছে।

‘জনগণ যাকে ভোট দিবে, সে-ই নির্বাচিত হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতলো, নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতলো, সেটা বড় বিষয় নয়। জনগণ যা রায় দিবে, আমরা তাই মেনে নিবো। এক্ষেত্রে মনোনীত প্রার্থীরা হারলে আওয়ামী লীগ পরাজিত বোধ করবে না।’

এর আগে, চলতি বছরের ২৫ মে তারিখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হন।

তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নতুন মেয়রকে ‘ঘরের লোক’ অভিহিত করে অভিনন্দন জানানো হয়। এবার জাতীয় নির্বাচনও ‘গাজীপুর স্টাইলে’ হতে যাচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে। খবর: বিবিসি বাংলা।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন,কোন্দল,স্বতন্ত্র প্রার্থী,আওয়ামী লীগ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close