• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

নেতাকর্মীদের দ্রুত সাজা দিতে ‘বিশেষ শাখা’ খোলা হয়েছে: বিএনপি

প্রকাশ:  ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

দলীয় নেতাকর্মীদের দ্রুত সাজা দিতে আইন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ শাখা খোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বুধবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার (৯ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে আইন মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ শাখা খোলা হয়েছে, যাদের কাজ হলো বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা ও গায়েবি মামলার তালিকা করে নির্দিষ্ট কিছু মামলার দ্রুত বিচার করে সাজা দেওয়ার জন্য আদালতগুলোকে নির্দেশ দেওয়া। কাজটা শুরু হয়েছে এবং গতকাল মঙ্গলবার ১৫ জন নেতাকে চার বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নিশিরাতের সরকার শুধু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেই একটার পর একটা বানোয়াট অভিযোগে কারাদণ্ড দিচ্ছে না, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকেও তার অনুপস্থিতিতে কয়েকটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় কারাদণ্ড দিয়েছে। এমনকি তার স্ত্রী রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকা সত্ত্বেও শুধু জিয়া পরিবারের সদস্য হওয়ার অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন।

ইতোমধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে ৯ বছর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য আমান উল্লাহ আমানকে ১৩ বছর, তার স্ত্রীকে ৩ বছর, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে ৪ বছর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব ৪ বছর, দলের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছর, দলের সহ-গ্রামসরকার বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ ও কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকনসহ ১৫ জন নেতা-কর্মীকে ৪ বছর করে, রাজশাহী জেলা বিএনপি সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদকে ৩ বছর, যুবদল নেতা ইসহাক সরকারকে ২ বছর এবং ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক রেজাওয়ানুল হক সবুজকে ২ বছরসহ যুবদল, ছাত্রদল ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফখরুল।

তিনি বলেন, এর বেশির ভাগ রায়ই হয়েছে গত দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে। অতি দ্রুত সাজা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিদিনই বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতা-কর্মীদের মামলার শুনানি চলছে। কিছুদিন আগে সাতক্ষীরা জেলায় এবং ঈশ্বরদীতে দলের ও অঙ্গ দলের বহু নেতা-কর্মীদের ফাঁসি, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি দৃঢ়ভাবে মনে করে যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আইনের নামে সরকার যা করছে, তা বেআইনি সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়। সভায় অবিলম্বে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানাই।

সম্প্রতি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা দ্রুত বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের পাশাপাশি ডিবি এ ব্যাপারে অধিক তৎপর। স্বাভাবিক দলীয় শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড, এমনকি গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে আগের কোনো গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজাহারভুক্ত আসামি না হওয়া সত্ত্বেও জামিন দেওয়া হচ্ছে না। উচ্চ আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্তরা নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলেই জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, কারাগারে বন্দীদের ওপর নিপীড়ন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি কক্ষে দ্বিগুণ-তিন গুণ বন্দীকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। ১৫ দিনের আগে তো নয়ই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ১৫ দিন পরেও বন্দীদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজন দেখা করতে পারেন না। দর্শনার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নিত্যই ঘটছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, গত কয়েক বছরে সরকার প্রায় ৭০০ বিরোধী নেতা-কর্মীকে গুম, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে খুন, প্রায় ৫০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার মিথ্যা ও গায়েবি মামলা করে নিপীড়ন ও জুলুমের যে নিকৃষ্ট রেকর্ড স্থাপন করেছে, তা বিশ্বে নজিরবিহীন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

বিএনপি,নেতাকর্মী,সাজা,বিশেষ শাখা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close