• রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||

রাসেল ভাইপার বিষয়ে সচেতনতার পরামর্শ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের

প্রকাশ:  ২২ জুন ২০২৪, ১৬:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায়, বিশেষ করে পদ্মা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে কিছু দিন ধরে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রবের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই রাসেল ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানতা ও সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। শনিবার (২২ জুন) মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া, বোড়া বা উলুবোড়া) দেখা যাওয়ার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এবং জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সম্পর্কে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় অবগত। এর পরিপ্রেক্ষিতে জননিরাপত্তা এবং জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হলো:

রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, মানুষের সাথে এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নিচু ভূমির ঘাসবন, ঝোপ-জঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে এবং মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সাথে সহজে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে গেলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। রাসেল ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। তাই, সকলকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।

সাপের কামড় এড়াতে করণীয়:

- যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা গিয়েছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।

- লম্বা ঘাস, ঝোপ-ঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢোকাবেন না।

- সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরুন।

- রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চলাইট ব্যবহার করুন।

- বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন।

- পতিত গাছ, জ্বালানি লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।

- সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না।

- প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন বা নিকটস্থ বন বিভাগের কার্যালয়কে অবহিত করুন।

সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে করণীয়:

- দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে দংশনের ক্ষেত্রে বসে যেতে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশনের ক্ষেত্রে হাত নড়াচাড়া করা যাবে না। হাত-পায়ের গিড়া নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে।

- আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।

- ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলুন।

- দংশিত স্থানে কাটবেন না, সুঁই ফোটাবেন না, কিংবা কোনো রকম প্রলেপ লাগাবেন না বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা উচিত নয়।

- সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।

- যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান।

- আতঙ্কিত হবেন না, রাসেল ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা: সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম আছে এবং সব জায়গায় হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাসেল ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয়: বেজি, গুঁইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ ঈগল, সারস, মদনটাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ রাসেল ভাইপারকে খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেল ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই, বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা ও এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকুন।

স্মরণ রাখা প্রয়োজন, রাসেল ভাইপার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী। রাসেল ভাইপার ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়। সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ, সাপ মারা থেকে বিরত থাকুন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সমাজের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো। পরিস্থিতি সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপডেট দেওয়া হবে।

রাসেল ভাইপার,পরিবেশ মন্ত্রণালয়
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close