• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন হচ্ছে কেন?

প্রকাশ:  ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন কতে চায় নির্বাচন কমিশন। এজন্য সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে তারা কাজ শুরু করবে পারবে।

সাধারনত নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য । অতীতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় ‌‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে কাজ করেছে।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন হচ্ছে কেন? এ প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষকরা।

"এই নির্বাচনটাকে তো মানুষ গ্রহণ করতে পারছে না। এটার প্রস্তুতিটাই এমন যে সাধারন মানুষ থেকে বড্ড বিচ্ছিন্নভাবে জিনিসটা ঘটছে’

‘অতীতের নির্বাচনে আমরা সেনাবাহিনী চেয়েছি। কারণ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে রক্ষা করতে পারে,’ একথা উল্লেখ করে শারমীন মুরশিদ বলেন, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

তিনি বলেন, পুলিশ এবং প্রশাসনসহ সহ সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রেণে। নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশ নিচ্ছেনা।

‘সেনাবাহিনী কাকে দমন করবে সেটা আমি বুঝে উঠতে পারছিনা। ভায়োলেন্স কোথা থেকে আসবে, কে করবে কার ওপরে?’

সেনাবাহিনী যা বলেছে

নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকের পরে সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফট্যানেন্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিকদের বলেন, ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে কথা হয়েছে। বিষয়টিকে 'প্রারম্ভিক আলোচনা' হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

‘একটা সুন্দর আলোচনা হয়েছে। ওনাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে যে ওনারা চাচ্ছেন যে একটা ফ্রি, ফেয়ার ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেন হয় সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে,’ বলেন ল্যাফটেনেন্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

‘আমি নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছি যে সশস্ত্র বাহিনীর তরফ থেকে যে ধরণের সাহায্য সহযোগিতা ওনারা চান আমরা সেটা দিবো ইনশাআল্লাহ’

সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে জানাবে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং সরকার-বিরোধী আরো বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচন বর্জন করছে। একতরফা নির্বাচনের প্রতিবাদের বিএনপি অবরোধ কর্মসূচিও পালন করছে।

অবরোধ কর্মসূচির সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। যদিও সরকার বারবারই দাবি করছে যে বিএনপির অবরোধের কোনো প্রভাব নেই এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশপাশি তাদের দলের কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শরিক দলগুলো। এর বাইরে বেশ কিছু ছোট দলসহ মোট ৩০ টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তাহলে নির্বাচন কমিশন কেন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে চাইছে সেটি পরিষ্কার করে কিছু বলেনি নির্বাচন কমিশন।

সোমবার বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে কমিশন যেভাবে চাইবে সেনাবাহিনী সেভাবে কাজ করবে।

তবে সেনাবাহিনীর কর্মপদ্ধতি নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি বলে উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশনের সচিব।

‘ওয়ার্কিং প্ল্যান নিয়ে এখনো কোন আলোচনা হয়নি। যদি আমরা নিয়োজিত করি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন তার পরবর্তীতে এই বিষয়ে কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ণ করা হবে,’ বলেন নির্বাচন কমিশন সচিব।

২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ৩৮৮ উপজেলায় ৩৫ হাজারের বেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিলো। অন্যদিকে সীমান্তবর্তী ৮৭টি উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিলো।

তখন নির্বাচনের ছয়দিন আগে মাঠে নেমেছিলো সেনাবাহিনী। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ১৫দিনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিলো।

তখন অবশ্য ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন দেখাতে চায় যে তাদের তরফ থেকে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

‘ওনারা দেখাচ্ছেন যে আমরা আমাদের কাজ করেছি,’ বলছিলেন এম সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, র্নিবাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশংকা তিনি দেখেন না।

‘আমি তো এতো কিছুর আশংকা দেখি না। কারণ দলই তো নিয়ন্ত্রণ করছে সব,’ বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন।

গত ৩০ বছরে বাংলাদেশে সবগুলো নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে দেখা গেছে। নির্বাচনে বিরোধী পক্ষ অংশগ্রহণ করুক কিংবা না করুক, প্রতিটি নির্বাচনে মাঠে নিয়োজত ছিলো সেনাবাহিনী।

এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৪ সালের পাঁচই জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের সময়ও নির্বাচন কমিশন মাঠে সেনা মোতায়েন করেছিলো।

বাংলাদেশের নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা ‘রেওয়াজ’ নাকি ‘প্রয়োজন’? এমন প্রশ্নে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটা অনেক সময় প্রয়োজন হয়, অনেক সময় রেওয়াজ।

সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে মঙ্গলবার নতুন করে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকজন সহকারি রিটানিং কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেলো, যদিও বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলেও তারা সহিংসতার আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

কর্মকর্তারা মনে করেন, ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেন সেজন্য নিরাপদ পরিবেশ থাকা জরুরি।

‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। কিন্তু কোন কারণে অবনতি হলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে ভয় পাবে,’ বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারি রিটার্নি অফিসার।

নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ দেখাতে ক্ষমতাসীন দল চাইছে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে।

মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, নির্বাচনের আগের কয়েকদিন বেশ স্পর্শকাতর। কেন্দ্রে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া নির্বাচনের দিন তো রয়েছেই।

‘সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়,’ বলছিলেন ঢাকার কাছে কর্মরত একজন সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ক্ষমতাসীন দল সম্ভাব্য সহিংসতার জন্য বিরোধী দল বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করছে।

‘তারা অধিকাংশ তো মাঠেই নেই। তারা কতখানি শক্তি সঞ্চয় করে এতোবড় সহিংসতা করবে যে সেখানে সেনাবাহিনী প্রয়োজন হবে? এটা আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট না,’ বলেন শারমীন মুরশিদ। খবর: বিবিসি বাংলা।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

মোতায়েন,সেনাবাহিনী,জাতীয় সংসদ নির্বাচন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close