• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

প্রস্তুত থার্ড টার্মিনাল, উদ্বোধন শনিবার

প্রকাশ:  ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:৫২
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে শনিবার (৭ অক্টোবর)। সকাল ১০টায় এ প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে তৃতীয় টার্মিনালে মঞ্চ তৈরিরসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি প্রস্তুতি নিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষও।

জানা গেছে, সফট ওপেনিং এরপর সেদিন বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স। উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে বিমানবন্দরে চলছে মহড়া। এ টার্মিনালের একাংশে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দু’টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। টার্মিনাল-৩’র পার্কিং বে-তে থেকে প্রথমবারের মতো ফ্লাইটে যাত্রী তুলেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট।

সোমবার (২ অক্টোবর) বিমানের ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু রুটের ফ্লাইটটি (বিজি-৩৭১) প্রথমবারের মতো তৃতীয় টার্মিনালের হাই-স্পিডি ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে পার্কিং বে-তে প্রবেশ করে। পার্কিং বে-তে অবস্থানের পর তৃতীয় টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে ফ্লাইটে ওঠেন কাঠমান্ডুর যাত্রীরা। ফ্লাইটটি বিমানের বোয়িং-৭৩৭ মডেলের ‘ময়ূরপঙ্খি’ নামের একটি এয়ারক্রাফট নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিলো। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) একইভাবে টার্মিনাল-৩ ব্যবহার করেছে বিমানের ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটের আরেকটি ফ্লাইট।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. শফিউল আজিম জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩’র সফট ওপেনিং এর জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সম্পূর্ণ প্রস্তুত। টার্মিনাল-৩’র গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, দায়িত্ব পালনকারী জনবলের জন্য আন্তর্জাতিক মানের নতুন ইউনিফর্ম প্রস্তুত করা হয়েছে।

এ টার্মিনালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য- বিশ্বসেরা বিমানবন্দরের মতো সেবা পাবেন যাত্রীরা। প্রবেশের পরই স্বয়ংক্রিয় ৫ লেয়ারের স্ক্যানিং মেশিন, চেক ইন কাউন্টার, বডি ও হ্যান্ড ব্যাগ পরীক্ষায় আলাদা স্ক্যানিং ব্যবস্থায় থাকবে না কোনো হয়রানি। দীর্ঘ পরিসরে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ক্লান্তিহীন করতে বিশেষ করে অসুস্থ ও বয়স্কদের জন্য থাকছে দুই ফ্লোরে ১৪টি মুভিং ওয়ার্কার। যার মাধ্যমে না হেঁটে দাঁড়িয়ে থেকেই ইমিগ্রেশন থেকে অভ্যন্তরীণ চলাচল সহজে হবে যাত্রীদের। এক থেকে তিনতলা পর্যন্ত ওঠানামায় থাকবে লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, আমরা বলতে পারি তৃতীয় টার্মিনালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে একটি এভিয়েশন হাব হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম মাইলফলক। নতুন স্থাপনা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুন দৃশ্যমান টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, নতুন টার্মিনালের ৯০ শতাংশ কাজ সফট লঞ্চিংয়ের জন্য সম্পন্ন হয়েছে এবং শনিবার থেকে এয়ারলাইনগুলো টার্মিনালের নতুন পার্কিং পে ব্যবহার করতে পারবে। সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং ক্যালিবারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর তৃতীয় টার্মিনালটি আগামী বছরের শেষে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণরূপে চালু হবে। নতুন টার্মিনালটি সমস্ত বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা এবং যাত্রী পরিষেবা দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি পাল্টে দেবে।

সিএএবি চেয়ারম্যান বলেন, পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোসহ থার্ড টার্মিনালের ফ্লোর এবং সিলিংয়ে নজরকাড়া প্যাটার্নের বৈশিষ্ট্যগুলো খুবই পরিশীলিত। যাত্রীরা নতুন টার্মিনালের বিশ্বমানের সুবিধার প্রশংসা করবেন যা আমরা এখানে আগে কখনো পাইনি।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ নাফিজ ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, প্রবাসীরা যখন বিদেশে যান, এমন উন্নতমানের প্রযুক্তি দেখে, সেবা পায়। তখন আমাদের দেশের অবস্থা দেখে আফসোস করতেন আর আমাকে বলতেন ‘স্যার, আমাদের দেশে এমন কবে হবে’। যখন আমাদের দেশে এমন কিছু হয়, তখন ওরা ওই দেশের সহকর্মীদের গর্ব করে বলে আমাদের দেশেও এমন একটা হয়েছে।

তৃতীয় টার্মিনালের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে। বিশ্ব দরবারে সৃষ্টি হবে নতুন গল্পের। এটা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ মুখ উজ্জ্বল করবে বলেই মত এই এভিয়েশন বিশেষজ্ঞের।

এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে যাত্রীরা উন্নতমানের সেবা পাবেন বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের পর পাল্টে যাবে বিমানবন্দরের চিত্র।

২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।

৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় তিনতলা বিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এবং লম্বা ৭০০ মিটার ও চওড়া ২০০ মিটার। এ ভবনটির নকশা করেছেন রোহানি বাহারিন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সিপিজি কর্পোরেশন প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুরের স্থপতি।

তৃতীয় টার্মিনাল ভবনে প্রথম পর্যায়ে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। পরবর্তী পর্যায়ে আরো ১৪টি বোডিং ব্রিজ স্থাপন করা হবে। বহির্গমনে মোট ১১৫টি চেক-ইন-কাউন্টার থাকবে, এর মধ্যে ১৫টি থাকবে সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টার। আগমনি লাউঞ্জে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট চেক ইন কাউন্টার থাকবে।

এছাড়া, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে প্রায় এক হাজার ২৫০টি গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের ভিতরেই ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের জন্য সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আলাদা নির্ধারিত অংশ থাকবে। শুধু তৃতীয় টার্মিনাল দিয়ে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মিত হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় কোটি কোটি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। শাহজালাল বিমান বন্দরের উত্তর পাশে রয়েছে রপ্তানি ও আমদানি কার্গো ভিলেজ। বর্তমান কার্গো ভিলেজের উত্তর পাশে যথাক্রমে ৩৬ হাজার বর্গমিটার ২৭ হাজার বর্গমিটার আয়তনের সর্বাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন দুটি পৃথক আমদানি ও রপ্তানি কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে।

তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে। যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। পাশাপাশি লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক যাত্রী সেবার সুবিধা রাখা হবে। এছাড়াও এর টার্মিনাল ভবনে ১৬টি আগমনি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে।

এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)’র মাধ্যমে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা, জাপান এবং কোরিয়ার স্যামসাং টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করবে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

উদ্বোধন,প্রস্তুত,থার্ড টার্মিনাল,হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর,ঢাকা,প্রধানমন্ত্রী,শেখ হাসিনা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close