• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদ ঠেকাতে একসঙ্গে কাজ করবে বিজিবি-বিজিপি

প্রকাশ:  ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১৬:৫৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে। বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিতোতে অনুষ্ঠিত ৮ম সীমান্ত সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে সম্মেলনটি গত ২৪ নভেম্বর সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে ২৭ নভেম্বর শেষ হয়।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিজিবি সদর দফতরে শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ।

সম্পর্কিত খবর

    ২৪ নভেম্বর বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অপরদিকে ডেপুটি চিফ অব মায়ানমার পুলিশ ফোর্সের পুলিশ মেজর জেনারেল অং নেইং থু (Police Major General Aung Naing Thu)-এর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়। মিয়ানমার প্রতিনিধিদলে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও দেশটির প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র এবং অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

    সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের (এমপিএফ) ডেপুটি চিফ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ ও আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। তিনি বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে যাতে কোনো মতানৈক্য সৃষ্টি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে সীমান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের ইচ্ছা জানান। তিনি ‘বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত চুক্তি-১৯৮০’-এর প্রতি মায়ানমারের অটল অবস্থানের কথা জানান। এ ছাড়া মাদক পাচার ও সীমান্ত পারাপার রোধসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকি মোকাবিলায় পুনরায় উভয় বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত টহল শুরু করার বিষয়ে তাগিদ দেন।

    বিজিবি মহাপরিচালক তার সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উদার আতিথেয়তার জন্য মিয়ানমার সরকার এবং বিজিপির প্রতি ধন্যবাদ জানান। তিনি সম্মেলনের আয়োজনে সন্তুষ্টি জানিয়ে একে বিজিবি এবং বিজিপির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাইলফলক অর্জন বলে অভিহিত করেন। বিজিবি মহাপরিচালক সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলা সংঘাতের কারণে সীমান্তে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানান। একই সঙ্গে তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিজিপির প্রতি আহ্বান জানান।

    বিজিবি মহাপরিচালক মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মাদকের পাচার রোধ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলায় উভয় বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতীয় উদ্বেগের কথা জানান। এ সময় বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণেরও অনুরোধ জানান বিজিবি মহাপরিচালক।

    সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে

    #সীমান্ত এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজনীতার কথা স্বীকার করে উভয়পক্ষই বিভিন্ন পর্যায়ে নির্ধারিত ফোকাল পয়েন্ট ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ ও তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান করতে সম্মত হয়েছে।

    #উভয়পক্ষই প্রতি দুই মাসে একবার ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের সমন্বয় সভা/পতাকা বৈঠক, বছরে দুইবার রিজিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে এবং বিজিবি এবং বিজিপি (এমপিএফ)-এর মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনের আয়োজন করতে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমাসে/পরিস্থিতি বিবেচনায় বিওপি/কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক করার কথাও বলা হয়েছে।

    #উভয়পক্ষ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী/সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়।

    #অবৈধ অনুপ্রবেশ/সীমান্ত পারাপার রোধে কার্যকরভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। সীমান্তের দুইপাশে আন্তঃসীমান্ত অপরাধীচক্র/সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর অবস্থান পরিলক্ষিত হলে তাদের অপতৎপরতা রোধকল্পে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদানসহ একে অপরকে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।

    #মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার রোধে মায়ানমার সে দেশের জাতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুসরণ করে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। উভয়পক্ষই মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সীমান্তবর্তী জনগণের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে।

    #পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার মাধ্যমে চলমান সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত প্রতিষ্ঠায় উভয়পক্ষ যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

    #উভয়পক্ষ ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক/এডহক বৈঠকের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইন অনুসরণ করে দুই দেশের কারাগারে আটক নাগরিকদের কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর/গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়।

    #উভয়পক্ষই সীমান্ত সম্পর্কিত প্রচলিত আইন ও অনুশাসন মেনে চলতে সম্মত হয়েছে। দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সীমান্তবর্তী শান্তিপ্রিয় জনগণের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং বিভ্রান্তি এড়াতে মায়ানমার ড্রোন/হেলিকপ্টার/বিমান চলাচলের আগাম তথ্যসহ সীমান্তে গোলাগুলি/বিস্ফোরণ ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। সীমান্ত কাঁটাতারে Electrification এবং ল্যান্ডমাইন স্থাপনের বিষয়ে বিজিবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলে বিজিপি বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করবে বলে আশ্বস্ত করে।

    #উভয়পক্ষই খেলাধুলা, প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড বিনিময় এবং বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে শুভেচ্ছা সফরসহ বিভিন্ন আস্থা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়েছে।

    বিজিবি-বিজিপি
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close