ব্রুনেই-বাংলাদেশ সম্পর্ক কেমন?
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনেই আয়তনে তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চেয়ে অনেক ছোট হলেও মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মানের বিচারে তাদের অবস্থান বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে।
ব্রুনেইয়ের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তাদের জ্বালানি তেল ও গ্যাস। পাশাপাশি জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে দেশটির নাগরিকরা ঐ অঞ্চলের অধিকাংশ দেশের তুলনায় উন্নত জীবনমান উপভোগ করে থাকেন।
সম্পর্কিত খবর
দক্ষিণ চীন সাগরের সাথে লাগোয়া মালয়েশিয়ার পূর্বে অবস্থিত এই দেশটির আয়তন ৫,৬৭৫ বর্গকিলোমিটার আর জনসংখ্যা সাড়ে চার লাখেরও কম। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৮৩ জন।
জাতিসংঘের ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী ব্রুনেইয়ের মাথাপিছু আয় ২৭,৪৩৭ ডলার - যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ ও বিশ্বে ৩০তম।
ব্রুনেইয়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সিংহভাগ অবদান তাদের তেল ও গ্যাস সংশ্লিষ্ট শিল্পের। দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের ৯৫ ভাগের বেশি অংশই আসে জ্বালানি তেল ও গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে।
ব্রুনেই ১৮৮৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে আসে। ১৮৯৯ সালে রাজধানী ব্রুনেই টাউনের কাছে প্রথম তেলক্ষেত্র আবিষ্কার হয় সেখানে।
পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে তেলের মজুদ আবিষ্কার হয় এবং ১৯৩২ সালে তেল রপ্তানি শুরু করে তারা।
ব্রুনেই ২০১৬ সালে তেল উৎপাদনকারী দেশের জোট ওপেক প্লাসে যুক্ত হয়। প্রাথমিকভাবে এই সংস্থাটি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ১৩টি দেশ নিয়ে গঠিত সংগঠন ওপেক হিসেবে পরিচিত হলেও ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমে গেলে রাশিয়াসহ আরো দশটি তেল উৎপাদনকারী দেশ এই জোটে যোগ দেয় এবং এটি ওপেক প্লাস হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
ব্রুনেইয়ের শীর্ষ তেল উৎপাদক সংস্থা ব্রুনেই শেল পেট্রোলিয়াম দেশটির ৯০ শতাংশের বেশি তেল উৎপাদন করে থাকে। ব্রুনেই সরকার ও রয়্যাল ডাচ গ্রুপ অব কোম্পানিজের যৌথ উদ্যোগে এই সংস্থাটি পরিচালিত হয়।
ঐতিহাসিকভাবে ব্রুনেইয়ের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল জাপান। তবে নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও আসিয়ান অঞ্চলের দেশগুলো ব্রুনেইয়ের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে।
ব্রুনেইয়ের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ২০২২ সালের জুন মাসে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি থেকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল ও কেমিকেল রপ্তানি হয়েছ মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক কেমিকেল দ্রব্য ব্রুনেইয়ের প্রধান রপ্তানি পণ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের ২০২২ সালের মে মাসের হিসেব অনুযায়ী দিনে ৮৫,০০০ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ব্রুনেইয়ের।
তবে ওপেক প্লাসের ২৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ব্রুনেই সবচেয়ে কম পরিমাণ তেল উৎপাদন করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দৈনিক তেল উৎপাদনের হিসেবে ব্রুনেইয়ের অবস্থান ছিল বিশ্বে ৪২তম।
তবে এই সংস্থার ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, মাথাপিছু তেল উৎপাদনের হিসেবে ব্রুনেইয়ের অবস্থান বিশ্বে ষষ্ঠ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের ২০১৬ সালের হিসেব অনুযায়ী দেশটি প্রতিদিন ১৬,০০০ ব্যারেল তেল ব্যবহার করে। আর দৈনিক উৎপাদনের ৯১ শতাংশ তেলই তারা রপ্তানি করে।
সংস্থাটির মতে, জ্বালানি তেলের মজুদের বিচারে বিশ্বে ৩৯তম স্থানে রয়েছে ব্রুনেই দারুসসালাম।
দেশটির মজুদে তেল রয়েছে ১১০ কোটি ব্যারেল, যা বিশ্বের মোট জ্বালানি তেলের মজুদের প্রায় ০.৭%। দেশটি প্রতি বছরে যে পরিমাণ তেল ব্যবহার করে, তার ১৮৮ গুণ তেল তাদের মজুদে রয়েছে।
অর্থাৎ তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিলে মজুদে থাকা তেল দিয়ে (বর্তমান হিসেব অনুযায়ী) দেশটি ১৮৮ বছর চলতে পারবে।