• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

মধুমতি-তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন আজ

প্রকাশ:  ১০ অক্টোবর ২০২২, ০০:৩০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

নড়াইল ও গোপালগঞ্জের মধ্যে মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু সোমবার (১০ অক্টোবর) যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এদিন দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দু’টি উদ্বোধন করবেন।

দেশের প্রথম ৬ লেনের কালনা সেতু চালুর মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়ে-১ এর শেষ ধাপটি পূর্ণ হবে এবং ঢাকা ও যশোরের মধ্যে দূরত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। এছাড়া ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। এ সেতু চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম যোগাযোগের বিকল্প যোগাযোগ তৈরি হবে।

মধুমতি সেতুতে দুর্ভোগ কমবে দশ জেলার

যশোর, নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত মধুমতি সেতু। এর দ্বারা উপকৃত হবে অন্তত ১০ জেলার মানুষ। ৬৯০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ২৭ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। ধনুকের মতো বাঁকা (নেলসন লোস আর্চ টাইপ) এই স্প্যানটি ভিয়েতনামে তৈরি। তবে এর দুই পাশে যুক্ত থাকা অন্য স্প্যানগুলো কংক্রিটের তৈরি।

মোট ছয় লেনের এই সেতুটি হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। এরমধ্যে দ্রুতগতির লেন থাকবে চারটি। বাকি দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেই সঙ্গে সেতুর দুই পাশে রয়েছে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সংযোগ সড়ক, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের নির্বাচনি জনসভায় এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মাসে সেতুর কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যশোর ও নড়াইলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে কালনা ঘাটে সেতুর প্রয়োজনীয়তা বহু গুণ বেড়ে যায়।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর ওপর ৬৯০ মিটার দীর্ঘ মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে কালনা সেতু নামে পরিচিত। এটি নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং ঝিনাইদহ জেলাকে সংযুক্ত করেছে।

প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে, সেতুটি চালু হওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ দ্রুত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবে। কারণ, সেতুটি কালনাঘাট থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব কমিয়ে দেবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ কম সময়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে পারবে। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও কমিয়ে দেবে। কারণ এতে ঢাকা থেকে দূরত্ব হবে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার।

যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, সেতুটি এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যাপকভাবে সহজ করবে। বেনাপোল স্থলবন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দর ও নোয়াপাড়া নদী বন্দরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের বাসিন্দারা একদিনের মধ্যে ঢাকায় তাদের কাজ শেষ করে ঘরে ফিরতে পারবেন। সেতুটি চালু হলে কালনা ফেরি ঘাট হয়ে যেতে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে বলে জানান কয়েকজন যাত্রী।

দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্বও কমাবে শীতলক্ষ্যা সেতু

বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমানের নামে নামকরণ করা সেতুটি কেবল জেলা সদর ও বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করবে না, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্বও কমিয়ে আনবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

স্থানীয়রা বলছেন, শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর উপজেলাকে সংযুক্ত করায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্ত আসবে। আগে নৌযানে করে নদী পার হতে হতো। তাতে অর্থ ও সময় অপচয় হতো, ভোগান্তি তো ছিলোই। ঢাকার পার্শ্ববর্তী এই জেলায় প্রচুর কলকারখানা থাকায় অর্থনীতিও চাঙা হবে। তবে সেতুটির দুই পাশের সড়কের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শেষ হলে পুরোপুরি সুফল মিলবে।

চা দোকানি আবদুল মান্নান বলেন, এটি আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া। এই নদী পার হতে হতো নৌকায়, লাগতো দীর্ঘ সময়। সড়কপথে ঘুরে আসতে হতো প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা। এখন আর সেই সমস্যা থাকলো না৷ সহজেই পার হতে পারবো।

ফরাজীকান্দা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ লুৎফর বলেন, আগে এখানে সেতু ছিলো না, নদী পার হতে হতো নৌকায়। দুর্ঘটনায় অনেকের জীবন গেছে। আমরা এই সেতু পেয়ে খুশি।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে নৌকায় নদী পার হতে অনেক সময় লেগে যেতো। এজন্য দূরত্ব অনুযায়ী গুণতে হতো টাকাও। এছাড়া সড়কপথে গেলে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরতে হতো। এখন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ শীতলক্ষ্যার এই সেতু দিয়ে অল্প সময়ে যাতায়াত করতে পারবে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ও যাত্রীরা যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা ব্রিজ হয়ে অথবা চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড রুটে চট্টগ্রামে যান। এখন শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে যানবাহনগুলো ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জ শহরের ওপর চাপ কমবে, তীব্র যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

তারা আরো জানান, নারায়ণগঞ্জের মানুষ নদীর ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্ব নৌকায় পার হতে অনেক সময় লেগে যেতো। এ জন্য দূরত্ব অনুযায়ী গুনতে হতো টাকাও। এছাড়া সড়ক পথে গেলে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরতে হতো। এখন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ শীতলক্ষ্যার এই সেতু দিয়ে অল্প সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন।

সেতুটির প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ বলেন, ১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলগামী যানবাহন এবং একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহন যানজট এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।

তিনি বলেন, এতে দেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে চাঙ্গা হবে। কারণ, এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে যানবাহনের ভ্রমণের সময় কমিয়ে দেবে। সেতুটির সঙ্গে নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পদ্মা সেতু থেকে জনগণ সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে বলেও জানান তিনি। সেতুটি পূর্বে বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জকে পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুরের সঙ্গে যুক্ত করবে। এখন মোটরচালিত নৌযানই নদীর দুই পাড়ের মানুষ ও অন্যান্য এলাকার জনসাধারণের জন্য পারাপারের প্রধান মাধ্যম।

প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেতু নির্মাণে ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, এর মধ্যে ২৬৩.৩৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং ৩৪৫.২০ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে এসেছে।

ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে- পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। হাঁটার পথসহ সেতুটির প্রস্থ ২২.১৫ মিটার। এছাড়া, ছয় লেনের টোল প্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ রোডও নির্মাণ করা হচ্ছে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

উদ্বোধন,তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু,মধুমতি সেতু,প্রধানমন্ত্রী,শেখ হাসিনা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close