• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

প্রথমদিন ব্যস্ততায় কাটলো প্রধানমন্ত্রীর, আজ মোদির সঙ্গে বৈঠক

প্রকাশ:  ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:২৫ | আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

চার দিনের ভারত সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়া দিল্লিতে কর্মব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। এদিন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠকসহ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। আগামীকাল মঙ্গলবার সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে শেখ হাসিনা। দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। এছাড়া বেশ কয়েকটি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে চার দিনের সফরে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময়) নয়া দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি পৌঁছায়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান।

বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে ছয় থেকে সাত সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক দল স্বাগত নৃত্য পরিবেশন করে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মৌর্য্য হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন।

বৈঠক শেষে ভারতীয় মন্ত্রীর বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, ভারত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক অস্থিরতার দিকে নজর রাখছে, যেখানে বাংলাদেশ আশঙ্কা করছে এঘটনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক অস্থিরতার ইস্যুতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাহত হবে কি না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেরই সেই আশঙ্কা রয়েছে।’

পরে আদানী গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানী একই স্থানে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত করেন। সেখানে তিনি কিছু সময় অতিবাহিত করেন। এ সময় তিনি ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে অবস্থান করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তখন তাঁরা নিয়মিত নিজাম উদ্দিন দরগা জিয়ারতে যেতেন। স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র এই স্থানে যেতে পেরে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব কে এম সাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী সেখানে নফল নামাজ আদায় ও মোনাজাতকালে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন। ডেপুটি প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগার বিভিন্ন অংশে যান। ভারতে সুফি সংস্কৃতির অন্যতম পবিত্র স্থান এই দরগাটি প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো।

প্রধানমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফরের শেষ দিনে রাজস্থানে আজমির শরিফ দরগা জিয়ারত করবেন। এর আগে ২০১৭ সালে আজমির শরিফ জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ২০১০ সালে যখন তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তখনও আজমির শরিফ জিয়ারত করেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যায় ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ও মিসেস জাকিয়া হাসনাত ইমরান আয়োজিত এক রিসেপশন-কাম-ডিনারে যোগ দেন।

সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনা হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও একান্ত আলোচনা করবেন। মোদি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং তাঁকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করা হবে। শেখ হাসিনা পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তাঁর সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।

একই দিন শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সাথে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিন তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

পরদিন বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী তাঁর সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করবেন।

একই দিনে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা করার কথা রয়েছে।

৭ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সভায় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার আগে রাজস্থানের খাজা গরিব নওয়াজ দরগাহ শরিফ, আজমির (আজমির শরিফ দরগাহ) জিয়ারত করবেন। করোনা মহামারি মহামারির প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালে শেষবার ভারত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এআই

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর,শেখ হাসিনা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close