• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

মিশেল ব্যাচেলেটের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি শব্দও নেই

প্রকাশ:  ২৭ আগস্ট ২০২২, ২২:০৬ | আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২২, ২২:১০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট তাঁর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি শব্দও বলেননি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর শেষে যেসব দেশ ও অঞ্চলে মানবাধিকার এবং মানবিক অধিকার নিয়ে সমস্যা ও উদ্বেগ রয়েছে তা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন মিশেল।

ওই প্রতিবেদনে উল্লিখিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নাম দেখা যায়নি। বাংলাদেশ, চীনসহ সাতটি দেশ সফর শেষে ব্যাচেলেটের সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশ ইস্যুতে তার মূল বক্তব্য ছিলো রোহিংগা সঙ্কট নিয়ে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত মানবাধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী অর্জনগুলোও বিশেষভাবে স্বীকৃত হয়েছে মিশেল ব্যাচেলেটের প্রতিবেদনে।

বক্তব্যের শুরুতেই দুই দফায় চিলির শাসক হিসাবে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিশ্বের শীর্ষ মানবাধিকার ফোরামের প্রধান বলেন, তিনি জানেন দেশ পরিচালনা একটি কঠিন কাজ। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সবসময়ই নানা দাবি, সংকট ও সমস্যা থাকে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সব সংকটই অতিক্রম করা যায়।

গেলো বৃহস্পতিবার জেনেভার হেড কোয়ার্টারের সংবাদ সম্মেলনে, সাত দেশ আলোচনার প্রসংগ এলেও তিনি সবচেয়ে বেশি সময় দেন বাংলাদেশ ইস্যুতে। যার পুরোটাই ছিলো রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ।

গেলো সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরের সময় যখন কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে যান, সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, একেকটি মানুষের গল্প ভুলবার নয়। যা তিনি পৃথিবীকে জানাতে চান।

মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী, শিশু এবং পুরুষ মিয়ানমার থেকে অত্যাচারিত, নীপিড়িত অবস্থায় বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল।

মিয়ানমারের মানবাধিকার বিপর্যয় ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। দেশটির সেনাবাহিনী দক্ষিণ-পূর্বে কায়াহ এবং কাইনের পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিমে চীন রাজ্য এবং বার্মার কেন্দ্রস্থলে সাগাইং এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে।

প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, সেখানকার গ্রাম ও আবাসিক এলাকায় বিমান শক্তি ও কামানের ব্যবহার তীব্র হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার সাম্প্রতিক বৃদ্ধিও ইঙ্গিত দেয় যে দেশের সবশেষ মোটামুটি স্থিতিশীল এলাকা সশস্ত্র সংঘাতের পুনরুত্থান এড়াতে পারেনি।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়গুলি প্রায়শই তাতমাদও এবং আরাকান আর্মিদের শিকার হয়েছে বা সরাসরি অভিযানের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। এক কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষের জন্য এখন মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লংঘনের জন্য মিয়ানমার সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, চীনসহ প্রতিবেশি রাষ্ট্র ও পুরো বিশ্বের এখন নজর দিতে হবে কক্সবাজারের দিকে।

প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রচারণা বন্ধ করতে, দ্রুত বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধারের জন্য এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত লঙ্ঘনের বিষয়ে জবাবদিহিতায় জোর দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীর ওপর চাপ জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নিজ দেশ চিলির মানবাধিকার রক্ষায় প্রশংসিত মিশেল। ২০১৯ এর জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশী মেক্সিকোর নাগরিকদের ওপর দমন নীপিড়নের নিন্দা জানিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশসহ অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং তিনি যে দেশগুলো ভ্রমণ করেছেন তার একটি তালিকা তৈরি করেছেন। দেশগুলো হলো বুরকিনা ফাসো, নাইজার, আফগানিস্তান, চীন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, পেরু এবং বাংলাদেশ।

তিনি তার চার বছরের মেয়াদকালে সফর করা এসব দেশের যতজন মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলেছেন, সে বিষয়ে সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেন।

এর মধ্যে আফগানিস্তানের নারী মানবাধিকার কর্মীদের সাহসের প্রশংসা, মেক্সিকোর হারিয়ে যাওয়া মানুষদের মায়েদের শক্ত মনোবলের কথা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের কথা, জলবায়ু পরিবর্তন ও অবৈধ মাইনিংয়ের কারণে নানা ঝুঁকিতে থাকা পেরুর আদিবাসীদের অধিকারের কথা এবং বুরকিনা ফাসোতে অভ্যন্তরীণ বসতিহারা মানুষের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এআই

জাতিসংঘ,মানবাধিকার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close