• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে মানবাধিকার নিয়ে অপপ্রচার সম্পর্কে জানালেন বিশিষ্টজনেরা

প্রকাশ:  ১৭ আগস্ট ২০২২, ২২:০৫ | আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২২, ২২:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক

সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ও চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল বাচেলেটকে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে নানা অপপ্রচার সম্পর্কে অবহিত করেছেন সরকার, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ বিশিষ্ট জনেরা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেটের সম্মানে এক টাউন হল মিটিং ও নৈশভোজে জাতিসংঘের হাইকমিশনার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র ফুটে উঠে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর বক্তৃতায়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকার বিরোধী কিছু চিহ্নিত ব্যক্তির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু মানবাধিকার সংগঠন তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করছে-জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে এমন তথ্য দেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

পররাষ্ট্রসচিব ড. মাসুদ বিন মোমেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় পর্বে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটা মর্যাদার স্থানে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, বাংলাদেশ মোটামুটি একই রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।

নৈশভোজ পর্বে জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে নানা অপপ্রচার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে জামিন দেওয়া না দেওয়া, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার, সাংবাদিকদের এই আইনের বাইরে রাখা, এই আইনে প্রকৃত সাংবাদিকেরা গ্রেপ্তার হচ্ছে কিনা-এই সকল বিষয়ের সাংবিধানিক ও আইনি ব্যাখ্যা দেন তিনি।

ড۔ সেলিম জানান, বাংলাদেশে প্রচলিত বেশ কয়েকটি আইনে যৌক্তিক কারণেই বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের বিধান রয়েছে, অনেক আইনেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতে জামিন না দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে উচ্চতর আদালত জামিন দিয়ে থাকে। সাংবাদিকসহ কোনো কমিউনিটিকে নির্দিষ্ট কোনো ফৌজদারি আইনের আওতার বাইরে রাখা সংবিধানিক মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

তিনি জানান, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি আইনে বহু বছর ধরেই এই ধরনের বিধান রয়েছে। যৌক্তিক কারণেই এই ধরনের বিধান রাখা হয়। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সনদ, আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিধানাবলি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আরও জানান, এই বিষয়টি পরিষ্কার করার প্রয়োজন রয়েছে, যে মামলাগুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের আওতায় বলে প্রচার করা হচ্ছে। এর প্রায় ৮০ শতাংশ মামলা বিএনপির আমলে প্রণীত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অধীন মামলা। শেখ হাসিনার সরকার এই ৫৭ ধারা বাতিল করেছে। আর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে মামলার কথা বলা হচ্ছে, তার প্রায় ৯০ শতাংশ মামলাই হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক কিছু ভুঁইফোড় বেআইনি নিউজ পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। যারা মূলত নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে হয়রানি করে থাকে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুম বা ফোর্সড ডিসএপিয়ারেন্স সম্পর্কে যে অপপ্রচার চলছে, সেই বিষয়টি ড. সেলিম মাহমুদ জাতিসংঘ হাইকমিশনারের দৃষ্টিতে আনেন। তিনি জানান, মানবাধিকার রিপোর্ট গুলোতে গুম সম্পর্কিত যে তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে, একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় যে, এগুলো স্ববিরোধী ও বাস্তবতা বিবর্জিত। এই সব রিপোর্টে বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা এই ফোর্সড ডিসএপিয়ারেন্সের মূল ভিকটিম। কিন্তু সেই রিপোর্টে ভিকটিমের যে সংখ্যা দেওয়া হয়, তাতে বোঝা যায় এই বক্তব্য স্ববিরোধী ও বাস্তবতা বিবর্জিত। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ভিকটিম রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী সমর্থক হয়ে থাকলে এই সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কথা। পক্ষান্তরে ভিকটিমের যে তালিকা দেওয়া হয়, সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য কিংবা সমর্থক থাকে না। তাতে বোঝা যায়, এই রিপোর্ট গুলোতে যে তথ্য দেওয়া হয়, সেগুলো অসত্য ও স্ববিরোধী। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে নানা কারণে কিছু ব্যক্তি প্রতি বছর নিখোঁজ হয়ে যায়। দেশের মোট জনসংখ্যার আকার বিবেচনা করলে নিখোঁজ হওয়া এই মানুষের সংখ্যাও কম হওয়ার কথা নয়। মূলত এই হারিয়ে যাওয়া লোকগুলোকেই এই তালিকায় আনা হয়ে থাকে।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে জানান, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু মানবাধিকার সংগঠন সাম্প্রতিক সময়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করছে, তাতে দেখা যায় এই সংগঠনগুলো যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করছে, সেগুলো সরকার বিরোধী কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছ থেকে নেওয়া। কোনো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পক্ষপাত দোষে দুষ্ট কোনো সোর্স থেকে তথ্য নেওয়া সমীচীন নয়। এই সকল সংগঠনের রিপোর্টে যে ফুটনোট ব্যবহার করা হয়, তাতে দেখা যায় তারা কেবলমাত্র সরকার বিরোধী সোর্স থেকে তথ্য নিচ্ছে। এই ধরনের পক্ষপাত দুষ্ট ও একপেশে রিপোর্ট সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের রিপোর্টের কোনো ক্রেডিবিলিটি থাকে না। এই ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্বের দেশে দেশে মানবাধিকার সংরক্ষণে কী ভূমিকা রাখে, এটি সেই সকল সংগঠনই ভালো বলতে পারবে।

জাতিসংঘের হাই কমিশনের সঙ্গে নৈশভোজ আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীসহ প্রমুখ।

জাতিসংঘের হাইকমিশনারের সম্মানে দেওয়া নৈশভোজের পূর্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদেক হালিম, নারী নেত্রী আরোমা দত্ত, রোকেয়া কবির, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মফিদুল হক, অ্যাম্বাসেডর আব্দুল হান্নান, অ্যাম্বাসেডর শামীম আহসান, শিফা হাফিজা, প্রফেসর সাহাব আনাম খানসহ প্রমুখ।

অধিকাংশ বক্তা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেট তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বিশ্বের সকল দেশের মানবাধিকার নিয়েই সমস্যা রয়েছে। আমি অনেক শক্তিশালী ও ধনী রাষ্ট্র দেখেছি, যাদের মানবাধিকার নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। এক একটি দেশের পরিস্থিতি একেক রকমের। মানবাধিকার নিয়ে প্রতিটি দেশের অনেক কাজ করার আছে।’

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূতসহ প্রমুখ।

পূর্বপশ্চিম- এনই

জাতিসংঘ,জাতিসংঘ হাইকমিশনার,মানবাধিকার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close