• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

৫২ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ:  ২১ জুলাই ২০২২, ১৫:০৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ৫২টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পাঁচ উপজেলার আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি উপকারভোগীদের কাছে ঘরগুলো হস্তান্তরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের অনুমতি দেন। ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সব উপজেলাসহ দেশের ৫২টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলাকে এবং দুটি জেলার সকল উপজেলাসহ সারাদেশের ৫২টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করছি।

তিনি বলেন, আশ্রয়ণ একটি মানুষের ঠিকানা। জীবন-জীবিকার একটি সুযোগ, বেঁচে থাকা, স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়ন করার। যে বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সে বাংলাদেশের কোনও মানুষ যেন ঠিকানাবিহীন না থাকে, তাদের জীবনটা যেন অর্থহীন হয়ে না যায়, তাদের জীবনটা যেন সুন্দর হয়, সেই লক্ষ্য নিয়েই এই উদ্যোগটা সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন। তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর হাতে গড়া বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের জন্য অন্তত বসবাসের একটি জায়গা করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এই আশ্রয়ণ।

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হন ৫টি প্রকল্প এলাকার সঙ্গে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে—লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাহানপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার জঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প।

ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকার নবাবগঞ্জ, মাদারীপুরের মাদারীপুর সদর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মানিকগঞ্জের ঘিওর, সাটুরিয়া, রাজবাড়ীর কালুখালী, ফরিদপুরের নগরকান্দা, নেত্রকোনার মদন, ময়মনসিংহের ভালুকা, নান্দাইল, ফুলপুর, ফুলবাড়িয়া, জামালপুরে বকশীগঞ্জ, চট্টগ্রামের পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, রামগঞ্জ, ফেনীর ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, তেঁতুলিয়া, বোদা।

এছাড়া ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, নীলফামারীর ডিমলা, নওগাঁর রাণীনগর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, রাজশাহীর মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা, বগুড়ার নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া নাটোরের বাগাতিপাড়া, পাবনার ঈশ্বরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু, সাতক্ষীরার তালা, মাগুরা সদর, শ্রীপুর, মোহম্মদপুর, শালিখা, ঝালকাঠির কাঠালিয়া, পটুয়াখালীর দশমিনা।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় গৃহহীন ও ভূমিহীন আছে কি না সেটা খুঁজে দেখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটা দায়িত্ব রয়েছে। দলমত-নির্বিশেষে যে গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে, আমরা তাদের ঘর, ঠিকানা এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব।

দেশের উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের নেয়া নানামুখী পদক্ষেপের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমরা চাচ্ছি আমাদের দেশে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীনদের পুনর্বাসন হবে। প্রত্যেকটা মানুষ তার ঠিকানা পাবে। এটাই আমরা করতে চাচ্ছি।'

সরকারপ্রধান বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে অসহায় মানুষগুলোর জন্য ঘর নির্মাণে সম্পৃক্ত থাকায় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ছিন্নমূল মানুষগুলোরও ঠিকানা হয়েছে। এটা একটা মহৎ কাজ, মহৎ উদ্যোগ। কারণ একটা ঘর পাওয়ার পর একটা মানুষের জীবনটা তো পাল্টে যায়। মানুষের মুখে যে হাসিটা এটাই তো সব থেকে বড় পাওয়া জীবনের। এর থেকে বড় কিছু আর হতে পারে না।

পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা, ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন এবং ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর নিজের রাজনৈতিক জীবনে আসা নানা সংকট সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলার কথাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'বোধহয় সে জন্যই আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। না হলে বারবার মৃত্যুকে আমি সামনে দেখেছি। কিন্তু আমি কখনো ঘাবড়ে যাইনি বা ভয়ও পাইনি।

দৃঢ়কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছি যেন এই দেশের মানুষকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে বাঁচার মতো একটা সুন্দর সমাজ দিতে পারি। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

পাঁচটি প্রকল্প স্থানে বিপুলসংখ্যক উপকারভোগী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ব্যক্তিরা। তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, 'সবাইকে আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা আপনাদের কর্মস্থলে খুঁজে দেখেন একটি মানুষও ভূমিহীন আছে কিনা, গৃহহীন আছে কিনা।'

গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে তিন দফায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি ঘর পেয়েছেন গৃহহীনরা। বৃহস্পতিবার পেল আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবার। এছাড়া আরও ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণাধীন। এ প্রকল্পে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত মোট একক ঘরের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি। বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ে বরাদ্দ হচ্ছে ৬৭ হাজার ৮০০টি। এর মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে চরাঞ্চলের জন্য বিশেষ নকশায় হচ্ছে ১ হাজার ২৪২টি ঘর।

পূর্বপশ্চিম- এনই

প্রধানমন্ত্রী,আশ্রয়ণ প্রকল্প
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close