• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সৃষ্টির মাঝেই অমর যিনি

প্রকাশ:  ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১৪:৪৫ | আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ২৩:৪৫
সানজিদা জান্নাত পিংকি

আজ এক জাদুকরের জন্মতিথি। সেই জাদুকর যিনি সুক্ষ্ম হাতে লেখায় তুলে ধরতেন নৈসর্গিক সৌন্দর্য , অতিকাল্পনিক অনুভব, প্রেম-বিরহের হৃদয়ছোঁয়া কথন, জোছনা, বৃষ্টিসহ প্রকৃতি নিয়ে মানবমনের যত আদিখ্যেতা, বাংলার চিরচেনা প্রকৃতির ব্যঞ্জনা। বর্ষা নিয়ে তার লেখনী নানাসময় মাতিয়েছে পাঠকের মন।

আজ ১৩ নভেম্বর। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক নন্দিত লেখক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। যিনি খুব একটা অসাধারণ ছিলেন না। এমনকি কারো রোল মডেল হবার জন্যের তার কোনো তাড়া ছিলো না। দিনলিপির মতো সাধারণ গল্পকেই তিনি কাঁটার মতো বিধিয়ে দিতেন পাঠকের মনে।

শুধু ‘লেখক’ হবেন, এই স্বপ্ন নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে একজন মানুষ এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভেবে অবাক হতে হয়। পাঠকও তাকে সাদরে গ্রহণ করেছিল।

সকালের চা খাওয়ার মতো নৈমিত্তিক ঘটনাকে তিনি কিভাবেই যেন ফুটিয়ে তুলতেন যেন এর চেয়ে সুন্দর কোনো ঘটনা হতেই পারে না। এরকমই প্রতিদিনের গল্প দিয়েই তিনি হিমু, মিসির আলি, শুভ্র, রূপাকে পাঠকের কল্পনার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করে ফেলেছেন। হাজারো তরুণকে বানিয়েছেন হিমু। এই জাদুকরের হাতেই প্রাণ পেয়েছে বাংলা সাহিত্যের অসম্ভব পাঠকপ্রিয় আরেক চরিত্র 'মিসির আলী'।

‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘গৌরিপুর জংশন’ ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’- এমন অনেক সফল সাহিত্যস্রষ্টা তিনি। হুমায়ূন আহমেদ প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে (১৯৭২) লিখে সাড়া ফেলে দেন। এরপর যা-ই লিখেছেন পাঠক সাগ্রহে লুফে নিয়েছে।

শহুরে জীবনে থেকেও বৃষ্টির প্রতি ছিল তার গভীর ভালোবাসা। বৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা থেকেই হূমায়ুন আহমেদ নিজের একটি বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘বৃষ্টিবিলাস’। ওই বাড়িটি এখনো আছে নুহাশপল্লীতে। যেখানেই যান আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন হুমায়ূন আহমেদ। তার দখিন হাওয়ায় নিয়মিত আড্ডার কথা অনেকেরই জানা।

তার জীবদ্দশায় তাকে বলা হতো বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিক। লেখালেখি করে তিনি পেয়েছিলেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। বইমেলায় লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে পাঠক তার বই কিনেছে, প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থেকেছে। প্রকাশকেরাও অপেক্ষায় থাকতেন তার পান্ডুলিপির। সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন।

শুধু জীবদ্দশায়ই এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঠকপ্রিয় লেখক ছিলেন হুমায়ুন আহমেদ? মৃত্যুর পরও পাঠকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েই আছেন তিনি। তিনি নেই কিন্তু রয়ে গেছে তার কীর্তি। তার অসংখ্য বই, টিভি নাটক, সিনেমা, গান রয়ে গেছে। যার লেখক জীবনের সূচনা ছিলো 'নন্দিত নরকে' এবং ইতি টানেন 'দেয়াল' লিখে।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরিতে তার জুড়ি মেলা ভার। গল্প থেকে বাদ পড়েনি মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ইতিহাসের বাদশা নামদাররা। আর এতেই তিনি পেয়েছেন জনমানুষের উপচে পড়া ভালোবাসা। গল্প দিয়েই মানুষের মনকে নানাভাবে আলোড়িত করেছেন বাংলা সাহিত্যের এই রাজপুত্র।

লেখা: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

সৃষ্টি,অমর,জাদুকর,হুমায়ূন আহমেদ,কিংবদন্তি,কথাসাহিত্যিক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close