• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পোশাক ক্রেতার শর্তের বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিলো বিজিএমইএ

প্রকাশ:  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ব বাণিজ্যের দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, মানবাধিকার এবং পরিবেশগত ডিউ ডিলিজেন্স ক্রমবর্ধমানভাবে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, অন্যদিকে ভূ রাজনৈতিক বিষয়গুলোও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে। যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাণিজ্যের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, তাই বাণিজ্য নীতি সংক্রান্ত যে কোনো নতুন বিষয় আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তাই, বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করার জন্য আমি এই বিবৃত্তি দেওয়ার তাগিদ অনুভব করছি।

সম্প্রতি বিজিএমইএ এর এক সদস্যকে বিদেশী ক্রেতার পাঠানো একটি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) এর অনুলিপি আমাদের নজরে এসেছে। এলসি'ডে নিম্নলিখিত বিষয়টি রয়েছে-

"আমরা জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত কোনো দেশ, অঞ্চল বা দলের সাথে লেনদেন প্রক্রিয়া করবো না। নিষেধাজ্ঞার কারণগুলোর জন্য আমরা কোনও বিলম্ব, নন-পারফরমেন্স বা তথ্য প্রকাশের জন্য দায়ী নই।'

এই ধারাটির ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা সঠিক নয়।

এটি উল্লেখ্য যে এলসিটি একটি নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছ থেকে এসেছে এবং এটি কোনও দেশের দ্বারা সংবিধিবদ্ধ আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি নয়। সুতরাং এটিকে

বাংলাদেশের উপর বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রয়োগ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বার্তা হিসাবে ভুল ব্যাখ্যা করা উচিভ হবে না।

এটিকে আরও স্পষ্ট করে বলছি যে স্বতন্ত্র ক্রেতা/প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নীতি এবং প্রোটোকল থাকতে পারে, তবে একটি এলসি কপি বা একটি ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক ইনস্ট্রুমেন্ট কোন অফিসিয়াল ঘোষণা নয়। তাছাড়া, বিজিএমইএ আমাদের কুটনৈতিক মিশন থেকে বা কোনও অফিসিয়াল সোর্স থেকে বানিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা বাণিজ্য ব্যবস্থা আরোপের কোনও তথ্য পায়নি।

শ্রমিকদের অধিকার এবং কল্যাণকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে একটি এম রোডম্যাপ বাস্তবায়নের

প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ২০১০, ২০১৮ এবং ২০২০ সালে শ্রম আইনের সংশোধনসহ এটি বাস্তবায়নের জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন বিধিগুলো ২০১৫ সালে জারি করা হয়েছিলো এবং ২০২২ সালে সংশোধন করা হয়েছিলো। বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৬ সালে পাস করা হয় এবং ২০২২ সালে ইপিজেড শ্রম বিধি জারি করা হয়।

একটি কারখানার ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য ৩০% শ্রমিকদের অংশগ্রহণের পূর্ববর্তী শর্ত (থ্রেশহোল্ড) শিথিল করে ২০% করা হয়েছিলো, যা কিনা বাংলাদেশের শ্রম আইনের (বিএলএ) সাম্প্রতিক সংশোধনীতে আরও হ্রাস করে ৫০০০ এরও বেশি শ্রমিক নিয়োগকারী কারখানাগুলোর জন্য ১৫% করা হয়েছে। গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর জন্য থ্রেশহোল্ড ০০% থেকে হ্রাস করে ২০% করা হয়েছে। শ্রমিকদের কল্যানের জন্য কেন্দ্রিয় তহবিলে অবদান রাখা আইনত বিধান করা হয়েছে, ২০২২-২০ অর্থবছরে এই তহবিলে শিল্প প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবদান রয়েছে। জিআইজেড এবং অহিএলও এর

সহযোগিতায় এমপ্লয়মেন্টট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) এখন পোশাক শিল্পে পাইলটিং করা হচ্ছে, যা নজির বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। নির্বাচিত শ্রমিকদের অংশগ্রহণ কমিটি এবং নিরাপত্তা কমিটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশ্বের সেরা পারফর্মিং বেটার ওয়ার্ক কারখানাগুলোর মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশে রয়েছে। আইএলও এর সাথে আমরা 'প্রমোটিং সোশ্যাল ডায়ালগ অ্যান্ড

ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ইন দি বাংলাদেশ আরএসজি সেক্টর (এসডিআইআর) শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা/প্রকল্প সম্পন্ন করেছি। কারখানায় বিদ্যমান

কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করতে, বিশেষ করে অংশগ্রহণ কমিটি, নিরাপত্তা কমিটি এবং হয়রানি বিরোধী কমিটি শক্তিশালী করার জন্য বিজিএমইএ

জিআইজেড এর সহযোগিতায় পাইলটিং ভিত্তিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি কারখানাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ব্ল‍্যান্ড, রিটেইলার, উন্নয়ন অংশীদার

এবং কারখানাগুলো কর্তৃক শিল্প সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বিজিএমইএ ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় হার প্রকল্প (HER project), মাদারস ওয়ার্ক

প্রকল্পের মাধ্যমে মাতৃত্ব সুরক্ষা, মনের বন্ধুর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্থতা পরিষেবা সহ আরও অনেক কর্মসূচি চালু রয়েছে। উৎপাদন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, দায়িত্বশীল করার জন্য আরও অনেক উদ্যোগ বিবেচনাধীন রয়েছে। এই সমস্ত উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকারগুলো সমুন্নত রাখা এবং শ্রমিকদের কল্যান আরও বৃদ্ধি করা।

২০১৩ সালে মর্মান্তিক ভবন ধসের দুর্ঘটনার পর, শিল্পটি জাতীয় উদ্যোগের নেতৃত্বে একটি বড় নিরাপত্তা সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে এবং ক্রেতাদের চালিত প্রোগ্রাম, অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যন্ডি বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে সংস্কার হয়েছে। সম্পূর্ণ করতে একটি কারখানা গড়ে প্রায় ৫০০,০০০ মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে, যা কারখানাটি রিট্রোফিট অথবা স্থানান্তর

নিরাপত্তা সংস্কার পরিকল্পনা করার তুলনায় ৪-৬ গুণ বেশি ছিলো। এই উদ্যোগগুলোর দ্বারা গৃহীত অগ্রগতিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং জাতীয় পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠার জন্য আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি) জুন ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ঐকমত্য-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাতের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাগুলোকে একটি ছত্রছায়ায় নিয়ে আসে।

শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে ২০১০ সাল থেকে ন্যূনতম মজুরি ছয় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, মঞ্জুরির ৫% হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং ২টি

উৎসব ভাতা (প্রতিটি এক মাসের মূল মজুরির সমতুল্য) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, শ্রমিকদের চিকিৎসা ছুটি এখন অর্ধেক মজুরির পরিবর্তে ১৪ দিনের যান্য পূর্ণ মজুরিতে দেওয়া হচ্ছে, বার্ষিক ছুটির বিধান সংশোধন করা হয়েছে। এটি প্রতি ১৮ দিনের কাজোর জন্য ১ করা হয়েছে, যা আগে প্রতি ২২ দিনের সজন্য ১ দিন করা ছিলো, প্রমিকরা আইন অনুসারে তাদের মোট বার্ষিক ছুটির ৫০% নগদায়ন করতে পারে, যা আগে অহিনে ছিল না।

সবুজ রূপান্তরের ক্ষেত্রেও আমরা এগিয়ে আছি। বাংলাদেশ এখন ২০৪টি লীড প্রত্যয়িত পরিবেশবান্ধব কারখানার আবাসস্থল, যার মধ্যে ৭৪টি প্ল্যাটিনাম

রেটেড এবং ১১৬টি পোল্ড রেটেড। আরও ৫০০ কারখানা সার্টিফিকেশনের জন্য প্রক্রিয়াধীনে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ মানের লীড পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশে বয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০টির মধ্যে ৯টি এবং বিশ্বব্যাপী গীর্ষ ২০টি পীড প্রত্যয়িত কারখানার মধ্যে ১৮টি বাংলাদেশে রয়েছে। এবং এটি সত্যিই পর্বের বিষয় যে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্কোরিং কারখানাটি ১০৪ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশে রয়েছে।

আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের তঅনেক রপ্তানি বাজারের জন্য মানবাধিকার এবং পরিবেশগত পরিবেশগত ভিউ ডিলিজেল ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার আমাদের বাণিজ্য অংশীদারদের সাথে যুক্ত রয়েছে। ১৬ নভেম্বর ২০২০ ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরান্ডাম 'কর্মীর ক্ষমতায়ন, লেবার ক্যাম্পইনের সঙ্গে উচ্চ প্রমমান জুড়ে দিয়ে স্বাক্ষর করেছে, যা এনগেডামেন্ট এবং প্রয়োগের দিক থেকে বেশ

অধিকার এবং বিশ্বব্যাপী চলমান স্বতন্ত্র বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। আমরা এর তাৎপর্যকে সম্মান করি এবং এর মূল নীতিগুলোর সাথে একাত্মল খুঁজে পাই। যদিও স্মারকলিপিতে

কুটনৈতিক ও সহায়তার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা এবং যথাযথ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য জরিমানা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য পদক্ষেপ সহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, কবে এটি বাংলাদেশের জন্য পুহীন নয়, বরং এটি শ্রমিক অধিকার ইস্যুকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবস্থান।

আমরা অতীতেও একই ধরনের উদাহরণ দেখেছি, এক ক্রেতার কাছ থেকে আসা একটি এলসি ক্লতা উদ্ধৃত করে এটিকে বাংলাদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা হিসাবে সাধারণীকরণ করা হয়েছে এবং আমরা এ ধরনের ভুল তথ্য উপস্থাপনের বিরুদ্ধে সব সময়ই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। তবে, আমরা বাণিজ্যিক কাগজপত্র ও উপকরণে এই ধরনের ধারা অন্তর্ভুক্ত করাকে সমর্থন করি না, যদি এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনুশীলন

করা হয়। বিজিএমইএ তার সদস্যদের, যারা উপরে উল্লিখিত এই জাতীয় ধারাসহ এলসি গ্রহন করে, তাদেরকে সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড (গুলো) এর সাথে যোগাযোগ

করে এব একটি স্পষ্টীকরণ চাওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছে। যদি ধারাটি কেবলমাত্র বাংলাদেশী সরবরাহকারীদের অনুকুলে জারি করা এলসিগুলোতে

থাকে, তবে এটি নৈতিকতা লঙ্ঘন করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আমরা আমাদের সদস্য কারখানাগুলোকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেওয়ার

জন্য এবং প্রয়োজনে এই ধরনের ক্রেতাদের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা/পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবো।

বিজিএমইএ,বানিজ্য
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close