• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ, ঝুঁকিতে এভিয়েশন খাত

প্রকাশ:  ১৪ এপ্রিল ২০২২, ২৩:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক

উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের দাম দেড় বছরের মাথায় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। করোনা মহামারির আগে জেট ফুয়েলের দাম যেখানে ছিল লিটারপ্রতি ৪৬ টাকা, তা এখন ১০০ টাকা। ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এতে কমে যেতে পারে আকাশপথের যাত্রীসংখ্যা। যার নেতিবাচক প্রভাব এভিয়েশন খাতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটারে বেড়েছে ১৩ টাকা। গত তিন মাসে প্রতি লিটার ফুয়েলের দাম ২৫ টাকা বেড়েছে। আর গত ১৮ মাসে বেড়েছে ১২০ শতাংশ। ফলে এর প্রভাব পড়েছে সরাসরি ভাড়ায়। এখন দেশীয় রুটে প্রতিটি গন্তব্যে একবার যেতেই গুনতে হচ্ছে কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার টাকা। আর কক্সবাজার যেতে গুনতে হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। এক বছরে দাম বেড়েছে দেড় হাজার। যা করোনাকালে ছিল মাত্র দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার টাকা। কিন্তু এখন সেটি পাঁচ হাজার ছুঁইছুঁই।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সুমন আকরাম। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে প্রায়ই তাকে উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুর যেতে হয়। করোনার আগে সৈয়দপুরে ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন দুই হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু এখন সেটি হয়েছে চার হাজার ৪০০ টাকা। অবশ্য তখন জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৪০ টাকার কম। এখন সেটি ১০০ ছুঁয়েছে। ফলে মাত্র দুই বছরে ভাড়া বেড়েছে প্রায় দুই হাজার ৫০০ টাকার মতো।

দুই বছর আগে এক স্বজনের ‍মৃত্যুর খবর শুনে রাজশাহী যান জীবন আহমেদ। তিনি বলছিলেন, সম্প্রতি একটি কাজে আবারও ফ্লাইটে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দাম শুনেই অবাক হলাম। এমন হলে আমরা মধ্যবিত্তরা তো প্লেনে যেতে পারব না। তাহলে আমাদের কী হবে।

জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৫৫ টাকা, মার্চে তা বেড়ে হয় ৬০ টাকা। এপ্রিলে তা ছিল ৬১ টাকা। মে মাসে এক টাকা কমে দাম। এরপর আবার দাম বাড়ে। জুনে তা হয় ৬৩ টাকা, জুলাইয়ে ৬৬, আগস্টে ৬৭, অক্টোবরে ৭০, নভেম্বরে ৭৭ টাকায় পৌঁছে দাম। এরপর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দুই টাকা করে কমলেও ফেব্রুয়ারি ও মার্চে সাত টাকা করে বেড়ে হয় ৮৭ টাকা। এপ্রিল মাসে বাড়ানো হয় ১৩ টাকা। সব মিলে এখন ১০০ টাকায় তেল কিনতে হচ্ছে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ডোমেস্টিক সেক্টরেও ধীরে ধীরে ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে শুধু ডোমেস্টিক সেক্টরেই ৫০ শতাংশ ভাড়া বেড়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষ যারা আগে প্লেনে যাতায়াত করতেন তারা এখন নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এতে প্লেনের যাত্রীর সংখ্যা কমে যেতে পারে। ফলে এয়ারলাইন্সগুলো বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছে। দেশে গত কয়েক বছর ধরে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছিল, সেটা হঠাৎ করেই ভাটা পড়েছে। এখন ঈদের সময় কিছুটা চাপ থাকবে, কিন্তু ঈদের পর তা কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশে এয়ার এশিয়ার জেনারেল সেলস্ এজেন্ট (জিএসএ) টোটাল এয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মামুন বলেন, ‘ফুয়েলের খরচ বেড়ে গেলে সেটার প্রভাব পড়ে ভাড়ার ওপরে। এখানে এয়ারলাইন্সগুলোর কিছু করার নেই।’ তবে সিন্ডিকেট করে টিকিটের দাম বাড়ানো হয় বলে মনে করেন তিনি।

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

জেট ফুয়েল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close