• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

আবারো অস্থির জ্বালানি তেলের বাজার, ব্যারেল ১২২ ডলার ছাড়ালো

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০২২, ০১:১২ | আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ০১:১৬
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ফের ছুটছে। প্রতি ব্যারেল ১২২ ডলারে উঠেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেলের দর প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ১২১ ডলার ৯৮ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দর প্রায় একই পরিমাণ বেড়ে ১১৪ ডলার ৮৮ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ১৩৯ ডলারে উঠেছিল। কিন্তু মাঝে কমে তা ১০০ ডলারের নিচে নেমে আসে। কয়েক দিন ধরে তা আবার বাড়ছে। যুদ্ধের সঙ্গে বাড়তি আরেকটি কারণ যোগ হয়েছে। আর সেটি হচ্ছে রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ কাজাখস্তান।

সম্প্রতি ঝড়ের কারণে বার্থ (জাহাজ ভেড়ানোর জায়গা) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাশিয়ার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এতে বৈশ্বিক তেল রপ্তানি ১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর তাতেই হু হু করে বাড়ছে দাম।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-কাজাখস্তানের কাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়াম (সিপিসি) বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেলের পাইপলাইন। এটি দিয়ে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল বা বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ১ দশমিক ২ শতাংশ তেল সরবরাহ হয়। কিন্তু সম্প্রতি প্রবল ঝড়ে এই পাইপলাইনের তিনটি বার্থের একটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

সিপিসির পরিচালনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কৃষ্ণ সাগরের রাশিয়া অংশে ঝড়ের কারণে সিপিসির লোডিং সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো দিয়ে জাহাজে করে কাজাখস্তানের তেল বিশ্ববাজারে পাঠানো হতো।

কাজাখস্তানের জ্বালানি উপমন্ত্রী পাবেল সরোকিন বলেছেন, ‘পাইপলাইনের আরও একটি বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বার্থগুলো মেরামত করতে দুই মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে, যার ফলে দৈনিক তেল রপ্তানি ১০ লাখ ব্যারেল বা বৈশ্বিক চাহিদার ১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।’

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। রুশ জ্বালানিতে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর পরই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এরপর কিছুটা কমলেও কয়েক দিন ধরে তা আবারও ঊর্ধ্বমুখী।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই আলোচনায় রয়েছে এই কাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়াম-সিপিসি। যুক্তরাষ্ট্র রুশ তেলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও বলেছে, রাশিয়ার মধ্য দিয়ে কাজাখস্তানের তেল রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই।

এই পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ান এবং কাজাখের অপরিশোধিত রপ্তানি ব্যাহত হওয়ার কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে জ্বালানি তেলের বাজার।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল তেলের দাম; একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেলের দর ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। সপ্তাহখানেক ধরে তা ১০৮ থেকে ১২০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় বসার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি প্রশমিত হয়েছে। এ ছাড়া চীনে নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় লকডাউনের আশঙ্কায় তেলের চাহিদা কমে যেতে পারে, এমন খবরে তেলের দর কমে যায়। দুই দিনে ১৫ শতাংশের মতো দরপতনে গত ১৫ মার্চ দুই ধরনের তেলের দামই ১০০ ডলারের নিচে নেমে আসে।

কিন্তু মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে তা ফের ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৪০ শতাংশের মতো বেড়েছিল।

জ্বালানি তেল উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ রাশিয়া। প্রতিদিন দেশটি প্রায় ৫০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করে।

এই তেলের অর্ধেকের বেশি যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাজ্যের চাহিদার ৮ শতাংশ তেল রপ্তানি করে রাশিয়া।

ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে রেখে অবশেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে হামলা চালাতে শুরু করে রাশিয়া। প্রতিরোধ করছে ইউক্রেনের সেনারাও। এরই মধ্যে তিন দফা ইউক্রেন-রাশিয়ার বৈঠক হয়েছে; তবে কার্যত যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

যুদ্ধ শুরুর পরই পশ্চিমাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করে। দেয়া হয় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও।

একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেলসহ নানা পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম কমতে কমতে ৬৬ ডলারে নেমে গিয়েছিল। ব্রেন্ট তেলের দর কমে হয়েছিল ৬৮ ডলার।

তিন-চার দিন ওই একই জায়গায় স্থির ছিল তেলের বাজার। কিন্তু ওমিক্রন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও করোনার নতুন ওই ধরনে আক্রান্ত হয়ে মানুষ খুব একটা মারা না যাওয়ায় ওই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বেশ খানিকটা কেটে যায়। এতে বিশ্বে তেলের চাহিদা বাড়বে– এ সম্ভাবনা সামনে রেখে আবার বাড়তে শুরু করে দাম।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।

গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এর পর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে।

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

তেল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close