• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

কেমন ছিল প্রথম থার্মোমিটার?

প্রকাশ:  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০৭
পূর্ব পশ্চিম ডেস্ক

থার্মোমিটার তাপমাত্রা পরিমাপ করে, যেগুলি তাপমাত্রা উত্তোলন বা ঠান্ডা অবস্থায় পরিবর্তিত হয় সেগুলি ব্যবহার করে। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হলে শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরা হয় ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ বা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে গেলে আমরা অনেক সময় খুব বিচলিত হয়ে যাই। শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তনটা রোগ নয়, বরং রোগের উপসর্গ। রোগের কারণ শনাক্ত করার জন্য ডাক্তাররা আগে দেখে নেন শরীরের তাপমাত্রার কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছে কিনা।

হাজার হাজার বছর আগে মানুষ তাপ ও তাপমাত্রা মাপার চেষ্টা শুরু করেছিল। আজ থেকে ১৮৫০ বছর আগে অর্থাৎ ১৭০ খ্রিস্টাব্দে গ্রিক বিজ্ঞানী গ্যালেন সর্বপ্রথম থার্মোমিটার তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তখন কারো তাপ কী, কেন তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে ইত্যাদি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিল না। তার পরের প্রায় দেড় হাজার বছরে তাপমাত্রা মাপার ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ১৫৯৩ সাল পর্যন্ত স্পর্শের মাধ্যমে তাপমাত্রার তারতম্য নির্ণয় করা গেলেও তাপমাত্রার সঠিক পরিমাপের কোনো কার্যকর পদ্ধতি আবিষ্কার করা যায়নি।

সম্পর্কিত খবর

    গ্যালিলিও গ্যালিলি সেসময় তাপমাত্রা বাড়লে বাতাসের আয়তন বেড়ে যাবার ধর্মকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করলেন এক ধরনের বাতাস-ভর্তি থার্মোস্কোপ। এটা দিয়ে শুধুমাত্র বাতাসের তাপমাত্রার বাড়াকমা পর্যবেক্ষণ করা যায়। তবে তাপমাত্রার সঠিক পরিমাপ করা যায় না। আসলে তখনো তাপমাত্রার কোনো একক নির্ধারিত হয়নি। আরেকজন ইতালিয়ান বিজ্ঞানী সান্তোরিও সান্তোরিও ১৬১২ সালে থার্মোস্কোপের সঙ্গে একটি আনুপাতিক স্কেল যোগ করে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এর প্রায় চল্লিশ বছর পর ১৬৫৪ সালে ইতালির তাসকানির গ্রান্ড ডিউক দ্বিতীয় ফার্দিনান্দ প্রথম একটি থার্মোমিটার তৈরি করেন। এর মূল গঠন ও কার্যপ্রণালী আধুনিক থার্মোমিটারের মতো।

    আরেকজন ইতালিয়ান বিজ্ঞানী সান্তোরিও সান্তোরিও ১৬১২ সালে থার্মোস্কোপের সঙ্গে একটি আনুপাতিক স্কেল যোগ করে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন

    তাপ দিলে অ্যালকোহলের আয়তন বেড়ে যায়। অ্যালকোহলের এই ধর্মকে কাজে লাগান সান্তোরিও। একটি কাচের চোঙের মধ্যে অ্যালকোহল রেখে তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে অ্যালকোহলের আয়তনের পরিবর্তনের হারকে তাপমাত্রা মাপার কাজে লাগান। তিনি অ্যালকোহলের চোঙায় ৫০টি সমান দাগ দিয়ে তাপমাত্রার এককের নাম দেন 'ডিগ্রি'। তবে কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রার সঙ্গে এই ডিগ্রির সমন্বয় না থাকার কারণে ফার্দিনান্দের থার্মোমিটারে তাপমাত্রার পরিমাপ ছিল অনুমান নির্ভর।

    এর দশ বছর পর ১৬৬৪ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট হুক থার্মোমিটারে শূন্য ডিগ্রির প্রচলন শুরু করেন। যে তাপমাত্রায় পানি জমাট বেঁধে বরফে পরিণত হয় সেই তাপমাত্রাকে শূন্য ডিগ্রি ধরে নিয়ে তিনি থার্মোমিটারের অ্যালকোহলের আয়তনকে সমান ৫০০ ভাগে ভাগ করে শূন্য থেকে ৫০০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করেন। তবে তখনো ডিগ্রি বলতে ঠিক কতটুকু তাপমাত্রা তা নির্দিষ্ট করে বের করা যায়নি।

    ১৭০১ সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন একটি থার্মোমিটার তৈরি করেন। সেটি ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে আধুনিক এবং সার্থক থার্মোমিটার। তিনি কাচের সরু নলের মধ্যে কিছু তেল প্রবেশ করিয়ে নলের বাকি অংশ থেকে বাতাস বের করে নলটির দুই মাথা বন্ধ করে দেন। তারপর তিনি থার্মোমিটারের স্কেল তৈরি করেন। পানির জমাটাঙ্ককে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আর মানুষের শরীরের তাপমাত্রাকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরে নিয়ে এই দুই তাপমাত্রার পার্থক্যকে অনেকগুলো ভাগে ভাগ করেন। এটিকে বলা যায় প্রথম সার্থক থার্মোমিটার।

    উনবিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক উন্নতি ঘটে। বিজ্ঞানীরা গ্যাসের আয়তনের উপর তাপ ও চাপের প্রভাব এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক খুঁজে বের করতে সক্ষম হন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জেমস জুল তাপগতিবিদ্যার আলোকে তাপমাত্রার আধুনিক সংজ্ঞা দেন। তাপমাত্রা হলো পদার্থের মধ্যস্থিত কণাগুলোর গড় গতিশক্তির পরিমাপ। কণাগুলোর গতিশক্তি যত বেশি, তার তাপমাত্রাও তত বেশি।

    আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ডিজিটাল থার্মোমিটার ছাড়াও ইনফ্রারেড বা অবলোহিত থার্মোমিটার ব্যবহৃত হয়। ছোট শিশুদের তাপমাত্রা সহজে নির্ণয় করার জন্য এই থার্মোমিটার খুব উপযোগী। কানের ছিদ্রে এই থার্মোমিটার প্রবেশ করিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপা যায়। আবার কপালে স্পর্শ করিয়েও তাপমাত্রা মাপা যায়।

    ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের সাহায্যে মানুষের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তনও নির্ধারণ করা যায়। অদূর ভবিষ্যতে তাপমাত্রার পরিবর্তন লক্ষ্য করে আমাদের কোষের সামান্য অস্বাভাবিক পরিবর্তনও পর্যবেক্ষণ করা যাবে। বিজ্ঞানের কল্যাণে সুস্থ থাকা আরো অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।

    পূর্ব পশ্চিম/জেআর

    থার্মোমিটার
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close