• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

রিয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পায়নি শিক্ষাবোর্ডের তদন্ত কমিটি

প্রকাশ:  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:২২ | আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪২
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক ও একটি কুচক্রী মহলের চক্রান্তের শিকার সদ্য অব্যাহতি নেওয়া গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে ওই চক্রের করা অর্থ আত্মসাৎ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্ত শেষে এমনটাই উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে এও উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্ত কমিটিকে সুষ্ঠু তদন্তে এবং সরকারি কাজেও বাধা প্রদান করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কতিপয় শিক্ষক। এর মধ্যে হামিদা খাতুন, আকলিমা আক্তার, সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, রাজিয়া খাতুন, রেখা মণ্ডল দীনা ও সবুজ মিয়া অন্যতম।

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অধ্যক্ষ, সকল শিক্ষক ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী ২০২১ সালের অক্টোবরে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রতিষ্ঠানটির এফডিআরের পরিমাণ ছিল সাত কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি গ্রহণকালে এফডিআর আত্মসাৎ নয়, বরং এর পরিমাণ বাড়িয়ে তিনি রেখে যান ৮ কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকা। অর্থ আত্মসাতের পুরো অভিযোগটিই ছিল ভিত্তিহীন।

শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চমাধ্যমিক শাখায় শিক্ষক সংখ্যা ১৭ জন, মাধ্যমিক শাখায় ৩৬ জন, প্রাথমিক শাখায় ১৯ জন, কর্মচারী (৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি) ২২ জন। এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়সহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতিদের মাধ্যমে নিয়োগ পান।

সর্বশেষ সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন যখনই বিধিসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় উদ্যোগী হন, ঠিক তখনই কতিপয় শিক্ষক ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তির প্রতিহিংসার শিকার হন তিনি। শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যাদি তদন্ত দলের কাছেও সরবরাহের সময় প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে সরাসরি বাধা দেন বিতর্কিত উপায়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক হামিদা খাতুন, আকলিমা আক্তার, সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, রাজিয়া সুলতানা, রেখা মণ্ডল দীনা ও সবুজ মিয়া। এতে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি। তাদের নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য শিক্ষকরাও তদন্ত কমিটিকে জানায়, শুধু হামিদা খাতুন, আকলিমা আক্তার, সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, রাজিয়া খাতুন, রেখা মণ্ডল দীনা ও সবুজ মিয়াই নয়, নুসরাত জাহান, নাসরিন সুলতানা, আকলিমা আক্তার, সুমি আক্তার, অনুজা রহমান, কাণিজ পূর্ণিমা ও জহুরুল ইসলাম প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগের মাধ্যমে চাকরি করছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। সবচেয়ে গুরুত্বর অভিযোগ হামিদা খাতুনের বিরুদ্ধে। ১৯৯৪ সালে প্রাথমিক শাখায় তিনি বিতর্কিত উপায়ে নিয়োগ পেলেও পরবর্তীতে বিধিবহির্ভূতভাবে তিনি মাধ্যমিক শাখার এমপিও গ্রহণ করেছেন। এছাড়া নুসরাত জাহান ও নাসরিন সুলতানারও নিয়োগ হয় ২০০৪ সালে। ২০১৩ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আকলিমা আক্তার। তবে তিনি তার নিয়োগের ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আকলিমা আক্তার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড কোর্সের জাল সার্টিফিকেটে প্রদর্শন করেই নিয়োগ পান। সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা এবং রেখা মণ্ডল দীনার নিয়োগও মাস্টার রোলে। সুমি আক্তার অফিস সহায়ক হওয়া সত্ত্বেও অন্যায়ভাবে শিক্ষক দাবি করে শিক্ষকের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। অনুজা রহমানের নিয়োগ ২০০৩ সালে। মাধ্যমিক শাখার শিক্ষক কানিজ পূর্ণিমা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসসমূহে উপস্থিত থাকতে চান না এবং অনেক সময় আসলেও শুধু স্বাক্ষরের জন্য দেরিতে উপস্থিত হতেন। এ ব্যাপারে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও প্রদান করা হয়েছিল। সবুজ মিয়া এবং জহুরুল ইসলাম ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এছাড়া সবুজ ও জহিরুল ইসলাম চাকরিতে যোগদানের শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে বসবাস করছেন। যদিও এটি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পূর্বতন নারী শিক্ষা মন্দির।

শিক্ষিকাদের যৌন হয়রানির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষিরা তাদের যৌথ লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন প্রতিষ্ঠানটিকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের ড্রেস কোড হিসেবে শাড়ি এবং পর্দানশীন শিক্ষকদের অ্যাপ্রোন ক্রয়ের জন্য ৫০০ টাকা করে প্রদানসহ মহিলা ও পুরুষ শিক্ষকদের আলাদা কক্ষে বসার ব্যবস্থা করেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুরো প্রতিষ্ঠানটিকেই তিনি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনেন। প্রতিষ্ঠান চলাকালে অনেক অভিভাবক নানাবিধ কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অবস্থান করে গল্প-গুজব করা, নানা পণ্যের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে তাদের এমন তৎপরতাও বন্ধ করেন তিনি। এতেই একটি কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের রোষানলে পড়েন তিনি। অথচ তিনিই আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন বলে তদন্ত দলকে জানান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা।

যৌন হয়রানির বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে অধ্যক্ষ জানান, এ সংক্রান্তে আদৌ কোনও শিক্ষিকা লিখিত কিংবা মৌখিক কোনও ধরনের অভিযোগই করেননি। শিক্ষা বোর্ডের তদন্তেও এ সংক্রান্তে সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ কিংবা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুরো বিষয়টিই তাকে সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী কতিপয় শিক্ষক ও কুচক্রী মহলের চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close