• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

জাবিতে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের অর্থ আত্মসাৎ

প্রকাশ:  ০৬ মার্চ ২০২২, ১৫:১৯
সানভীর ইসলাম, জাবি প্রতিনিধি
নিহত শ্রমিকের পরিবার

জাবিতে নির্মাণাধীন হল থেকে পড়ে কর্মরত নিহত শ্রমিকের পরিবারকে আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও মাত্র তিন লাখ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নিহতের শ্রমিকের পরিবারের নূন্যতম এক জন সদস্যকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার কথা থাকলেও তাও দেওয়া হয়নি বলেও জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।

গত বছরের ২৭মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল সংলগ্ন নির্মাণাধীন ২২ নম্বর হলের ছয়তলা থেকে পড়ে শাহের আলী নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ সময় নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নিহতের পরিবারের একজনকে স্থায়ী চাকরি ও আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নূরানী কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

এর প্রেক্ষিতে গত বছরের জুন মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুরে কোম্পানির অফিসে ডেকে তিন লাখ টাকা দিয়ে দলিলে সই নেওয়া হয় বলে জানান নিহতের বাবা শমসের আলী। এছাড়া আট লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানতেন না বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে কোম্পানি কোন টাকা খরচ করেনি বরং ক্ষতিপূরণের পুরো তিন লাখ টাকা সাব-কন্ট্রাক্টর বেলালের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত শ্রমিক সাব-কন্ট্রাক্টর বেলালের হোসেনের অধীনে কাজ করতেন।

সাব-কন্ট্রাক্টর বেলাল বলেন, ‘শাহের আলী আমার অধীনে কাজ করতে আসছিল বলে ক্ষতিপূরণ বাবদ পুরো তিন লাখ টাকা আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কেটে নেয় কোম্পানি।’

নিহত শাহের আলীর বাবা শমসের আলী বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ দিতে ঢাকায় কোম্পানির অফিসে ডাকা হয়। তিন লাখ টাকা আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে কাগজে টিপসই নেয়। সেই টাকা নিয়ে চলে আসি। সে সময় আমার শ্যালক মনিরুল ও আরো দুইজন সাব-কন্ট্রাক্টর জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল কাদের দলিলে সই করেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘দলিলে কী লেখা ছিল তা জানি না। টিপসই দিতে বলছে তাই দিয়েছি। আমার সামনে আট লাখ টাকার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাই ভেবেছিলাম তিন লাখ টাকাই সব।’

দলিলে স্বাক্ষরকারী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আট লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানি না। তবে কোম্পানির অফিসে সেদিন আমাদেরকে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়।’

অপর স্বাক্ষরকারী সাব-কন্ট্রাক্টর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ রকম ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো দুই-তিন লাখের বেশি টাকা দেয় না। যা দিয়েছে তাতেই আমরা খুশি ছিলাম। কাগজে কি আছে সেটা দেখার উপর ততোটা গুরুত্ব দেইনি।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নূরানী কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার মো. খোকন মিয়া বলেন, ‘নিহতের পরিবারকে চুক্তি অনুযায়ী আট লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে দলিলে সই নেওয়া হয়। আর নিহতের ছোট ভাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া তাকে কোম্পানিতে চাকরি দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘টাকা হস্তান্তরের সময় নূরানী কনস্ট্রাকশন কোম্পানির এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) খন্দকার গোলাম কবির, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আহসান হাবিব উপস্থিত ছিলেন।’

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয়ে শ্রম-আইনে নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও মানবিক বিবেচনায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে আট লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি করি। ক্ষতিপূরণের টাকা হস্তান্তরের সময় আমি অন্য কক্ষে ছিলাম। তাদেরকে আট লাখ টাকা দিতে দেখিনি। তবে টাকা পেয়ে তারা খুশি ছিল। যদি দলিল অনুযায়ী টাকা না পেয়ে থাকে, তাহলে তখন অভিযোগ করলো না কেন?’

প্রকল্পের নিবার্হী প্রকৌশলী (সিভিল) আহসান হাবিব বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের টাকা হস্তান্তরের সময় আমি অন্য কক্ষে ছিলাম।’

যদিও তাদের অন্য কক্ষে থাকার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মো. খোকন মিয়া।

এ বিষয়ে নূরানী কনস্ট্রাকশনের পরিচালক হুমায়ুন কবির তুহিন বলেন, ‘প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।’

তবে আট লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে কিনা; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রকল্প পরিচালক মো. নাছির উদ্দিনের সাথে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/জেএস

জাবি,অর্থ আত্মসাৎ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close