চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে দুবাইয়ে পাচার, গ্রেপ্তার ২
রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার অসহায় এক কিশোরীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে দুবাইয়ে পাচার ও নির্যাতনে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সম্পর্কিত খবর
গ্রেপ্তাররা হলেন, ফারজানা (৩৫) ও সোহাগী ওরফে রিয়া (৩০)।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ১৬ আগস্ট দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার এক কিশোরীকে দুবাই প্রবাসী ফারজানা ও তার বোন সোহাগী মিলে দুবাইয়ে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করে দেয়। পরবর্তীতে সেখানে অবস্থানকালে ৮ সেপ্টেম্বর ওই ভুক্তভোগীর মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, পরে দুবাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অন্য একজন দুবাই প্রবাসী ভুক্তভোগীর লাশ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২৪ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেন। এর মধ্যে ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবার জানতে পারে দুবাইয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
র্যাব জানায়, পরবর্তীতে লাশ দেশে নিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয় এবং ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে ২৮ নভেম্বর মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মানব পাচার ও হত্যার অভিযোগে একটি নালিশি মামলা করেন। এই মামলায় ফারজানা ও সোহাগীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে নালিশি অভিযোগটি যাত্রাবাড়ী থানায় এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
শনিবার রাতে র্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ভুক্তভোগী ওই কিশোরী দীর্ঘদিন ধরে তার পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় আসামিদের পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। তার বাবা সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে এবং তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতো। টানাপোড়েনের সংসারে অর্থকষ্টে জর্জরিত থাকা অবস্থায় ভুক্তভোগীকে তাদের প্রতিবেশী সোহাগী ও তার দুবাই প্রবাসী বোন ফারজানা দুবাই নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখাতে শুরু করে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাব জানায়, দুবাই প্রবাসী ফারজানা ভুক্তভোগীকে জানায়, তাকে দুবাই নিয়ে একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ পাইয়ে দেবে। যার মাধ্যমে অনেক ভালো বেতন এবং ভাতাসহ অন্যান্য অনেক সুবিধা পাবে যাতে তার পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আসবে। দুবাই নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার খরচের কথা বলে ফারজানা ও সোহাগী ভুক্তভোগীর পরিবারকে ৩ লাখ টাকা যোগাড় করে দিতে বলে। পরে লোন নিয়ে ওই টাকা যোগাড় করে সোহাগীর হাতে তুলে দেয় পরিবারটি।
র্যাব-৩ এর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “পরবর্তীতে ফারজানার দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী সোহাগী তাদের চক্রের দালালের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের একটি ভুয়া ঠিকানা সম্বলিত পাসপোর্ট ও টুরিস্ট ভিসা প্রস্তুত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গেল বছরের গত ১৬ আগস্ট ভুক্তভোগীকে তারা দুবাই পাঠায়।”
তিনি আরও বলেন, “দুবাই পৌঁছানোর দুদিন পর ভুক্তভোগী তার বাবাকে ফোন কলে জানায়, আসামিরা দুবাইয়ে উচ্চ বেতনের চাকরির মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তাকে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করে বিক্রি করে দিয়েছে। সেখানে তাকে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। একপর্যায়ে নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর ওই কিশোরীর মৃত্যু হয়।”