• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

কথায় কথায় পিস্তল তাক করেন ‘পালসার জুয়েল’

প্রকাশ:  ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:৫১ | আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক

উত্তরার পদহীন ও নামধারী এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্র দিয়ে মাস্তানি করার অভিযোগ উঠেছে। কথায় কথায় কোমর থেকে পিস্তল বের করে যাকে-তাকে ভয়-ভীতি দেখানো থেকে শুরু করে এলাকায় মাস্তানি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় এ যুবলীগ নেতার নাম ইফতেখার জুয়েল ওরফে পালসার জুয়েল। স্কুল বয়স থেকেই এলাকার ‘কিশোর গ্যাং’র অন্যতম হোতা পালসার জুয়েল। এলাকার কিশোর গ্যাং দিয়ে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একাধিক প্রতিবেদন হয়। পালসার হোন্ডা নিয়ে মহল্লায় মহড়া দেওয়াই তার একমাত্র কাজ। দখল চাঁদাবাজি এবং কিশোর গ্যাং’র বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়ায় একাধিক সংবাদ প্রচারিত হয় জুয়েলের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, পালসার জুয়েল গত এক মাসে নিজের কোমর থেকে লাইসেন্স করা পিস্তল বের করে তিনটি ভীতিকর ঘটনার জন্ম দেয়।

সম্পর্কিত খবর

    ঘটনাগুলোতে পালসার জুয়েল সাথে থাকা কিশোর গ্যাং সদস্যদের দিয়ে মারধর এবং নিজের কোমরে থাকা পিস্তল তাক করে গুলি করার হুমকি প্রদান করেন। ঘটনাগুলো নিয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে গত শনিবার আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যাওয়ার পথে উত্তরা মাইলস্টোন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাফিনকে পিস্তল তাক করে হুমকি দেন।

    ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, পালসার জুয়েলের সেকেন্ড ইন কমান্ড খ্যাত হুমায়ুন একজন কাউন্সিলরকে ধাক্কা দিলে ছাত্রদের সাথে হাতাহাতি হয় হুমায়ুনের। পরে পালসার জুয়েল এসে রাফিনের গলায় পিস্তল তাক করে বলতে থাকে, ‘তুই আমাকে চিনিস, গুলি করে ফুটো করে দেব’। পরে কয়েকজনের হস্তক্ষেপে পিছু হটে জুয়েল।

    এর আগে তকি নামের এক ছেলেকে পিস্তল দিয়ে গুলি করার হুমকি দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে যায় জুয়েল। এ ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়ালেও পরে প্রভাবশালীদের মীমাংসায় শেষ হয়। এ বিষয়ে মাইলস্টোন ছাত্রলীগ নেতা রাফিন ও তকি বলেন, প্রায়ই উনি এ ধরনের কাজ করে থাকেন। কিছু হলেই কোমর থেকে পিস্তল বের গুলি করার হুমকি দেন।

    ঠিক একই রকম আরেকটি ঘটনা ঘটান পালসার জুয়েল। চলতি মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় একজন হকারকে উদ্দেশ করে ১১ নং চৌরাস্তায় চিল্লাচিল্লির এক পর্যায়ে নিজের পিস্তল বের করে তার বিরোধীদের হুমকি-ধমকি দেন। বিষয়টি পথচারীসহ অনেকেই দেখেছেন। জানা গেছে, স্থানীয় এ কিশোর গ্যাং নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে স্থানীয় এমপির কোটায় ১১ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন। কল্যাণ সমিতিরসহ সম্পাদক নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে সমিতির অফিসকে কিশোর গ্যাং’র আড্ডাখানা বানিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়ে কেউ মুখ খুললে কিশোর গ্যাং’র ছেলেদের লাগিয়ে অপমান করেন জুয়েল।

    কল্যাণ সমিতির একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, এমপির কোটায় কল্যাণ সমিতিতে এসে এলাকার হকার নিয়ন্ত্রণসহ এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন জুয়েল। জুয়েলের হয়ে এসব চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন হুমায়ুন।

    এর আগে একাধিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন পালসার জুয়েল। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, উত্তরার গরীবে নেওয়াজ এভিনিউয়ের ফুটপাতের দোকান থেকে পদহীন যুবলীগ নেতা ইফতেখারুল ইসলাম জুয়েলের নামে চাঁদা আদায় করেন হুমায়ুন নামের এক যুবক। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী একটি গ্রুপ সোনারগাঁ জনপথ সড়কে রাজউকের ১৮টি প্লট অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ফার্নিচার মার্কেট তৈরি করেছে। সেখানে দোকান আছে ৮০টি। প্রতিটি দোকান থেকে মাসে ভাড়া আদায় করা হয় ৪০ হাজার টাকা করে। সে হিসাবে মাসে ভাড়া আদায় হয় ৩২ লাখ টাকা।

    রাজউকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবৈধ দখলদারদের কারণে তারা প্রকৃত মালিকদের প্লট বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। তবে শিগগিরই তারা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজউকের প্লট দখল করে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে ভাড়া আদায় করছেন ইফতেখারুল ইসলাম জুয়েল। এলাকায় নিজেকে যুবলীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও তিনি সংগঠনের কোনও পদে নেই।

    অভিযোগ রয়েছে, একসময় তিনি ছাত্রদল নেতা আজিজুল বারী হেলালের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। এলাকার কিশোর গ্যাং-কে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কিছুদিন আগে উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পর জুয়েলকে পুলিশ আটক করলেও প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার অনুরোধে জিডি মুছে ফেলে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

    এ বিষয়ে জুয়েল বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যা। কোনটিই কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close