• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

বাস ভাড়া করে ডাকাতি করতো চক্রটি

প্রকাশ:  ১৩ আগস্ট ২০২২, ১৫:৩৮ | আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২, ১৫:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথমে পিকআপ ভ্যান দিয়ে ডাকাতি শুরু। পরে যুক্ত হয় বাস। এজন্য যুবকল্যাণ এক্সপ্রেস নামে একটি বাস ভাড়া করে সেটি দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ডাকাতি করত। ডাকাতির জন্য বেছে নিত পণ্যবাহী মালামাল ও গার্মেন্টস পণ্যবাহী ট্রাককে। প্রথমে বাসে ওঠে সড়কে ছুটে বেড়াত। টার্গেট করা গাড়ি চোখে পড়লেই সেটির পিছু নিত। এরপর সেই গাড়ির কাছে গিয়ে চালক ও হেলপারকে ধরে বাসে তুলতো। পরে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে সড়কের সুবিধাজনক স্থানে ফেলে দিয়ে ট্রাকটির মালালাল খালাস করে সেগুলোর বিভিন্ন পার্টস খোলাবাজারে বিক্রি করতো। গত দেড় বছরে এভাবে দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে বাস ভাড়া করে ডাকাতি করে আসছিল একটি চক্র।

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বন্দর থেকে ডিমবোঝাই একটি ট্রাক ডাকাতি হয়। সেই ট্রাকটির সন্ধানে ছয় ডাকাতকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় র‌্যাব।

গ্রেফতাররা হলেন- ডাকাত চক্রের সরদার মুসা আলী (৪০), নাঈম মিয়া (২৪), শামিম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০) ও মামুন (২৪)। জব্দ করা হয় দুটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি ছোরা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বাস। এছাড়াও ডাকাতি হওয়া ট্রাকটির চালক ও হেলপারকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন ডাকে র‌্যাব। সেখানে এসব তথ্য জানায় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গতরাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের ভুলতা গোলাকান্দাইল এশিয়ান হাইওয়েতে র‌্যাব-১১ এর টহল চলাকালীন একটি ডিমবোঝাই পিকআপকে সন্দেহজনক মনে হলে তারা সেটির গতিরোধ করেন। এসময় পিকআপ থেকে দুই ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে কথাবার্তায় অসংলগ্ন আচরণ দেখায় তল্লাশিকালে তাদের কাছ থেকে একটি চাপাতি ও একটি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বাকিদের গ্রেফতার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। ডাকাতির উদ্দেশ্যে যুবকল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের একটি বাসের মাধ্যমে ভুলতা থেকে রূপসী যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়েতে ডিমের পিকআপটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য তারা যানটির পিছু নেয়। একপর্যায়ে ভুলতা-রূপসী সড়কে পিকআপটির সামনে বাস দিয়ে রাস্তা আটক করে সেটির গতিরোধ করে। এরপর পিকআপের ড্রাইভার ও তার সহকারীকে ধারাল অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক পিকআপটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং ড্রাইভার ও তার সহকারীকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারপিট করে ও তাদের সঙ্গে থাকা বাসে উঠিয়ে নেয়। পরে ডাকাতদলের সরদার মূসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায় এবং ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা পিকআপের চালক ও হেলপারকে তাদের সঙ্গে থাকা বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হতে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি আটক করতে সক্ষম হয়। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদস্যরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে র‌্যাব সদস্যরা চার ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয় এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ডাকাত বাস থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বাসের ভেতর থেকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় পিকআপের চালক ও তার সহকারীকে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, চালক ও হেলপারকে কাঁচপুর ব্রিজ থেকে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তারা বাসে চালক ও হেলপারকে তুলে হাত পা বেঁধে ফেলেছিল। তাদেরকে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

তারা যেসব গার্মেন্টসের মালামাল ডাকাতি করেছে তার তথ্য মিলেছে। আজ যদি র‌্যাব সেখানে হাজির না হতো তাহলে মেরে ফেলত। যে বাসটি দিয়ে তারা ডাকাতি করে আসছিল সেটি ঢাকা নরসিংদী রুটে চলাচল করত। এদের কেউ রাজমিস্ত্রী, বাসের চালক হেলপার ও গার্মেন্টস কর্মী। তারা পেশার আড়ালে এ কাজ করত। তারা কোন বাজারে গার্মেন্টস পণ্যগুলো বিক্রি করত আমরা তার তথ্য পেয়েছি। এছাড়াও গার্মেন্টস কারখানাগুলো থেকে কে তাদের তথ্য দিত তারও তথ্য পাওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, ১০/১২ জনের সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি করে আসছিল। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রি ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।

ডাকাতির কাজটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে করত চক্রটি। একটি পক্ষ তথ্য দিত কোন গাড়িতে মালামাল যাচ্ছে, আরেকটি পক্ষ সেই গাড়িকে টার্গেট করে ডাকাতি করত। আর শেষের পক্ষটি ডাকাতির মাল বিক্রির কাজ করত।

ডাকাত চক্রের মূল হোতা মুসা। গত ১০/১২ বছর ধরে বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছিল সে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা তার নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে এবং প্রত্যেকটি ডাকাতিতে সে নিজে অংশ নেয়। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেছে। মুসা ১০-১২ বছর থেকে নেতৃত্ব দিত। তার নামে একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার শামিম ডাকাত সর্দার মুসার প্রধান সহযোগী এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির চালক। ২০০৬ সালে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে ৭ বছর কারাভোগ করে সে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মুসার নেতৃত্বে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে সে।

গ্রেফতার রনি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির গাড়িচালকের হেলপার। গ্রেফতার নাঈম পেশায় একজন গাড়িচালক।

গ্রেফতার মামুন স্থানীয় একটি সেলাই কারখানায় কার্টিং মাস্টারের কাজ করে। সম্প্রতি তারা মুসার নির্দেশে বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশ নেয়। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

পূর্বপশ্চিম/ম

ডাকাতি মামলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close