• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

শুধু মাফ করার জন্য হাইকোর্ট বসে নেই : হাইকোর্ট

প্রকাশ:  ১৮ জুন ২০২৩, ২৩:২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

জামিনে থাকার পরও কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশ্রাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানের ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করা হবে। আর আমরা মাফ করে দেব, এটা হতে পারে না। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত খবর

    রবিবার (১৮ জুন) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

    শুনানির শুরুতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে হাইকোর্ট বলেন, ‘আর কত উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করবেন? আদেশ মানবেন না আবার এসে মাফ চাইবেন। এটা তো হতে পারে না। শুধু মাফ করার জন্য হাইকোর্ট বসে নেই। সবাইকে মাফ করা হাইকোর্টের কাজ না। শত শত বছর এ কোর্ট থাকবে। আদালতের মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এসব কাজের (আদালতের আদেশ অমান্য করার পরও ক্ষমা করে দেওয়া) জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

    এক পর্যায়ে দুই পুলিশ সদস্যের আইনজীবী সৈয়দ মো. তাজরুল হোসেন আদালতকে বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে মো. আশরাফুল হাওলাদারের জামিন পাওয়ার বিষয়টি পুলিশ জানত না। আসামিরা জামিননামা দেখাননি, আইনজীবীর প্রত্যয়নও দেখানো হয়নি।’

    তখন বিষয়টি আদালতে নজরে আনা আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা বলেন, ‘আসামির জামিন পাওয়ার কথা আমি পুলিশ সদস্যদের ফোন করে বলেছি। তারপরও তারা গ্রেপ্তার করেছে। তাছাড়া আইনজীবীর প্রত্যয়ন (ল’ইয়ার সার্টিফিকেট) দেখালে পুলিশ সেটা ছিঁড়ে ফেলে।’

    এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমরা সব বিষয় দেখব। পুলিশ ও আসামির আইনজীবীর কথোপকথনের রেকর্ড তলব করছি।’

    এরপর আদালত আগামী ২৩ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখেন। ওইদিনও দুই পুলিশ সদস্যকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।

    আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিসুর রহমান।

    ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী পরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেও দুই পুলিশ সদস্যকে আদালত অব্যাহতি দেননি। তাদের আবার আসতে হবে। তাদের বক্তব্যে আদালত সন্তুষ্ট না। আসামির আইনজীবী ও গ্রেপ্তারে যাওয়া পুলিশ সদস্যের মধ্যে কথোপকথনের ফোন কল রেকর্ড তলব করা হয়েছে। সেটি আদালত শুনবেন।’

    আগাম জামিনে থাকার পরও কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশ্রাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নজরে আনলে গত ২০ মে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানকে তলব করা হয়।

    জামিনে থাকার পরও উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেপ্তার করে দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।

    লিখিত আদেশে আদালত বলেন, ‘মো. আশ্রাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সদস্যের আচরণ বা প্রক্রিয়া আইনের পরিপন্থী। একইসঙ্গে তা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনারও পরিপন্থী। এটা মীমাংসিত বিষয় যে, সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করে নাগরিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।’

    আদালত বলেন, ‘কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের আগে প্রথমে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনি দিক নিয়ে ভাবতে হয়। এই আসামি ফৌজদারি বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে রয়েছেন। আইনজীবী আসামিকে উচ্চ আদালতের জামিনের প্রত্যয়নও করেছেন। উল্লেখিত মামলায় মনে হচ্ছে এএসআই মিজানুর রহমান সর্বোচ্চ আদালতের নীতিমালা ও আইনের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করেছেন। ফলে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা মনে করি পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এ এস আই মিজানুর রহমান এ বিষয়ে কারণ ব্যাখ্যা করবেন।’

    এ আদেশে রবিবার আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুর রহমান।

    পূর্বপশ্চিমবিডি/এসআর

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close