• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

বাইডেন: গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ:  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩২ | আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৪০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধ বিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন।

তিনি বলেন, “দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এ প্রচেষ্টায় জোর দিয়েছে।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বৈঠকে দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি স্থল আক্রমণ ও ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের মধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের হুমকিসহ নানা চ্যালেঞ্জের কথা উঠে আসে।

জো বাইডেন বলেন, “গাজায় জিম্মিদের মুক্তি, মানবিক সহায়তা পাঠানোর সুযোগ দেওয়া ও যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

তিনি বলেন, “যুদ্ধ বিরতির মধ্য দিয়ে চুক্তিটি বাস্তবায়ন শুরু হবে। এরপর স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা নেওয়া হবে।”

জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহও যুদ্ধ বিরতির জন্য প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ চলতে দেওয়া যায় না। আমাদের এখন একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দরকার। এই যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিত।”

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাতে ইসরায়েলের স্থল আক্রমণ বন্ধে ও ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিয়ে দাবি ওঠার মধ্যেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হল।

রবিবার বাইডেন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও কথা বলেন। তাকে তিনি রাফাহতে সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

চার মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ধ্বংসজজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে ২৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। হতাহত অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন।

এদিকে গত কয়েক দিন ধরেই রাফাহতে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দুই ইসরায়েলি-আর্জেন্টাইন জিম্মিকে মুক্ত করার কথাও জানিয়েছে তেল আবিব।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, অভ্যন্তরীণ শিন বেট নিরাপত্তা পরিষেবা ও বিশেষ পুলিশ ইউনিটের যৌথ অভিযান ফার্নান্দো সাইমন মারমান (৬০) ও লুই হেয়ার (৭০) নামে দুইজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর জিম্মি হওয়া ২৫০ জনের মধ্যে ছিলেন তারা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সারারাত হামলায় ৬৭ জন নিহত হয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলমান। ফলে সংখ্যা বাড়তে পারে।

রয়টার্সের একজন সাংবাদিক ধ্বংসস্তূপের বিস্তীর্ণ এলাকা দেখেছেন। যেখানে একটি মসজিদসহ ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইব্রাহিম হাসসুনা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা আমার পরিবারকে মেরে ফেলেছে তারা। সকাল থেকে আমার পরিবারের মৃতের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করছি। কোনটা কার শরীরের অংশ বুঝতে পারছি না। কেবল তাদের হাত-পায়ের আঙুল চিনতে পেরেছি।”

তিনি বলেন, “আমরা উত্তর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছি, আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের বোমা মেরেছেন কেন? দয়া করে সুবিচার করুন।”

রাফাহ শহরের বাসিন্দারা বলছেন, “ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক ও জাহাজ এক ঘন্টারও বেশি সময়ের মধ্যে দুটি মসজিদ এবং বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন আঘাত হেনেছে। ফলে গাজাবাসী ঘুম থেকে জেগে উঠেছে হতচকিয়ে। তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।”

গাজার ব্যবসায়ী এমাদ রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের তাঁবু ক্যাম্প থেকে ২০০ মিটার দূরে গোলা এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। মৃত্যু এত কাছে ছিল, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, যে বেঁচে আছি।”

তিনি বলেন, “গত মাসে রাফাহ শহরে আসার পর থেকে এটি ছিল বোমা হামলার সবচেয়ে ভয়াবহ রাত।”

কেউ কেউ শঙ্কা করেছিলেন, ইসরায়েল শহরে একটি দীর্ঘ স্থল আক্রমণ শুরু করেছে। কারণ হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত দশ লাখেরও বেশি মানুষ ওই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

এমাদ বলেন, “সবাই বলেছিল এটা একটা আশ্চর্যজনক স্থল অভিযান। আমার পরিবার ও আমি আমাদের শেষ প্রার্থনা বলেছিলাম। ভেবেছি এটাই হয়তো পৃথিবীতে শেষ দিন।”

ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, “অভিযানের সময় বিস্ফোরক দিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় জিম্মিদের রাখা হয়েছিল। ওই সময় আশেপাশের ভবন থেকে গুলি বিনিময় করা হয়েছে।”

লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচ্ট বলেন, “আমরা এই অভিযানে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছি। আমরা সঠিক অবস্থার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”

আর্জেন্টিনার সরকার দুই ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য ইসরায়েলকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। উদ্ধার হওয়া দুইজন আর্জেন্টিনার দ্বৈত নাগরিক বলে জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র,ইসরায়েল,যুদ্ধ,ফিলিস্তিন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close